দুই বিশ্বযুদ্ধের মধ্যবর্তী সময়কালে ভারতের শ্রমিক আন্দোলনের বিবরণ দাও অথবা,দুই বিশ্বযুদ্ধের মধ্যবর্তী সময়ে সংঘটিত শ্রমিক আন্দোলন সম্পর্কে আলোচনা করো।

দুই বিশ্বযুদ্ধের মধ্যবর্তী সময়কালে ভারতের শ্রমিক আন্দোলনের বিবরণ দাও অথবা,দুই বিশ্বযুদ্ধের মধ্যবর্তী সময়ে সংঘটিত শ্রমিক আন্দোলন সম্পর্কে আলোচনা করো।

দুই বিশ্বযুদ্ধের মধ্যবর্তী সময়কালে ভারতের শ্রমিক আন্দোলনের বিবরণ দাও অথবা,দুই বিশ্বযুদ্ধের মধ্যবর্তী সময়ে সংঘটিত শ্রমিক আন্দোলন সম্পর্কে আলোচনা করো।

দুই বিশ্বযুদ্ধের মধ্যবর্তী সময়কালে ভারতের শ্রমিক আন্দোলনের বিবরণ দাও অথবা,দুই বিশ্বযুদ্ধের মধ্যবর্তী সময়ে সংঘটিত শ্রমিক আন্দোলন সম্পর্কে আলোচনা করো। 

 দুই বিশ্বযুদ্ধের মধ্যবর্তী সময়কালে ভারতের শ্রমিক আন্দোলনের বিবরণ দাও অথবা,দুই বিশ্বযুদ্ধের মধ্যবর্তী সময়ে সংঘটিত শ্রমিক আন্দোলন সম্পর্কে আলোচনা করো।



আদিম সাম্যবাদী সমাজ ব্যবস্থার অবসানের পর এখনো পর্যন্ত যেখানে যত সমাজ ব্যবস্থা তৈরি হয়েছে তার ইতিহাস মূলত শ্রেণী সংগ্রামের ইতিহাস। আর এই শ্রেণীর সংগ্রামের অন্যতম  পর্ব ছিল শ্রমিক শ্রেণীর আন্দোলন। এক্ষেত্রে দুই মহাযুদ্ধের (১৯১৪-৩৯) অন্তর্বর্তীকালে ভারতের শ্রমিক আন্দোলন আধুনিক ভারতের ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ পর্ব। ১৯১৮ সালে গঠিত মাদ্রাজ লেবার ইউনিয়ন কে সাধারণত ভারতের প্রথম ট্রেড ইউনিয়ন হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এক্ষেত্রে বিপি ওয়াদিয়া ও অ্যানি বেসান্তের মতো ব্যক্তিবর্গ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। আন্দোলনের গুরুত্বপূর্ণ বিকাশ ছিল তিলক এবং লালা লাজপত রায়ের নেতৃত্বে সর্বভারতীয় ট্রেড ইউনিয়ন কংগ্রেস (AITUC) গঠন । তবে এ সময় জাতীয় কংগ্রেস এবং কমিউনিস্ট পার্টি শ্রমিক শ্রেণীকে সংঘটিত করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিল । ভারতের বুকে সংঘটিত হয়েছিল একাধিক শ্রমিক ধর্মঘট। 


প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় থেকে ভারতীয় শিল্প ক্ষেত্রে যথেষ্ট উন্নতি লক্ষ্য করা যায় ৷ ফলে কারখানা গুলিতে শ্রমিকদের সংখ্যা ক্রমশ বাড়তে থাকে ৷ কিন্তু যুদ্ধকালীন সময়ে ব্রিটিশ পুঁজি পতিদের অতি মুনাফা লাভের প্রবণতা শ্রমিক শ্রেণীর অবস্থাকে আরো শোচনীয় করে তোলে ৷ শ্রমিক শ্রেণী সঙ্ঘবদ্ধ ভাবে আন্দোলনের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন ৷ যুদ্ধ পরবর্তীকালে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি শ্রমিক শ্রেণীর জীবনযাত্রাকে  প্রচন্ড আঘাত করে ৷ এর ফলে শ্রমিক আন্দোলন আরো ঐক্যবদ্ধ ও জঙ্গি চরিত্র ধারণ করে ৷ এই প্রসঙ্গে মার্কসবাদী ঐতিহাসিক রজনীপম দত্ত "ইন্ডিয়া টুডে" গ্রন্থে লিখেছেন ,"প্রথম বিশ্বযুদ্ধ,রূশ বিপ্লব ও আন্তর্জাতিক বিপ্লবী কার্যকলাপের ফলে ভারতের শ্রমিক আন্দোলন যেন এক লাফে পুণ্য কর্ম ততপরতার জগতে এসে পৌঁছালো ৷"


ভারতের শুরু হলো আধুনিক শ্রমিক আন্দোলন ৷ এই আন্দোলন হওয়ার পেছনে দেশের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অবস্থা সমানভাবে কাজ করেছিল ৷ রাশিয়ার সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের প্রভাব ইউরোপের সীমা অতিক্রম করে বিভিন্ন উপনিবেশিক ও শোষিত মানুষের ওপর পড়তে শুরু করে ৷ ভারতের শ্রমিক আন্দোলন সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের দ্বারা প্রভাবিত হয় ৷ ১৯১৪ থেকে ১৯১৮ খ্রিস্টাব্দের মধ্যবর্তী সময়ে বারাচির নর্থ ওয়েসন্টান রেলওয়ে কারখানা ধর্মঘট,আমেদাবাদ বস্ত্র শিল্প ধর্মঘট , বোম্বাই বস্ত্রশিল্প ধর্মঘট , খড়্গপুরের রেল কারখানা, লক্ষৌ রেল ধর্মঘট উল্লেখযোগ্য ৷ ১৯১৮ খ্রিস্টাব্দে বছরটি নানা কারণে স্মরণীয় এই বছরেই চিত্তরঞ্জন দাস ও গান্ধীজীর শ্রমিক আন্দোলনের সাথে যুক্ত হন ৷ গান্ধীজি শ্রেণী চেতনার পরিবর্তে শ্রেণী সহযোগিতার আদর্শ শ্রমিকদের উদ্বুদ্ধ করতে প্রয়াসী হন ৷


বোম্বাই, মাদ্রাজ, আহমেদাবাদ প্রভৃতি স্থানে বিভিন্ন
কলকারখানার শ্রমিকদের ধর্মঘট ব্যাপক আকার ধারণ করে। তবে তখনো পর্যন্ত দেশে কোন সংগঠিত ট্রেড ইউনিয়ন ছিল না। ১৯২০ সালে নিখিল ভারত ট্রেড ইউনিয়ন কংগ্রেস প্রতিষ্ঠিত হওয়ায় ভারতীয় শ্রমিক আন্দোলনের ক্ষেত্রে এক নতুন অধ্যায় সূচনা হয় ৷ সাম্রাজ্যবাদী শোষণের বিরুদ্ধে নিজেদের স্বার্থ রক্ষার জন্য ভারতীয় শ্রমিক শ্রেণি এই সময় সর্বভারতীয় ভিত্তিতে একটি সংগঠনের আওতায় আনে ৷ লালা লাজপথ রায়, চিত্তরঞ্জন দাস , মতিলাল নেহেরু প্রমুখ নেতৃবৃন্দ এই ট্রেড ইউনিয়ন কংগ্রেসের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক স্থাপন করেন ৷ তবে ১৯২০ থেকে ২১ খ্রিস্টাব্দে শ্রমিক আন্দোলনের যে গতিবেগ সৃষ্টি হয়েছিল তা পরবর্তী বছর গুলিতে ক্রমশ হ্রাস পেতে থাকে ৷ এই অবস্থা চলতে থাকে ১৯২৭ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ৷



১৯২৭ থেকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে শুরু হবার সময় ভারতীয় শ্রমিক আন্দোলন আবার তীব্র আকার ধারণ করেন ৷ এই সময়ে AITUC একটি শক্তিশালী সংগঠনের পরিণত হয় । এই সময়ে ভারতীয় শ্রমিক আন্দোলনে সাম্যবাদী ও বামপন্থী আদর্শ বিশেষ প্রসার লাভ করেন ৷ যারা সারা ভারতের শ্রমিক শ্রেণীর সাইমন কমিশন বিরোধী আন্দোলন ও বিক্ষোভ মিছিলে প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণ করে ৷ ভারতীয় রাজনীতিতে শ্রমিক শ্রেণীর যোগদান খুবই গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ৷ শ্রমিক শ্রেণীকে ভারতীয় আন্দোলনের সাথে যুক্ত করে দেশের মধ্যে একটি সংগ্রামী জাতিবেগ সৃষ্টি করা হয় ৷



১৯২৮ সালে ভারতবর্ষে শ্রমিক ধর্মঘট উত্তাল আকার ধারণ করেন ৷ এই বছরে সারাদেশে প্রায় ২০০-৩০০ টি ধর্মঘট হয় ৷ যেখানে লক্ষাধিক শ্রমিক অংশগ্রহণ করেন ৷ এই সময়ে সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ শ্রমিক আন্দোলন হয় বোম্বাইয়ের সূত কল ধর্মঘট ৷ আবার ১৯২৯ সে কলকাতার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে চটকলের কর্মীরা সাধারণ ধর্মঘট করে ৷ এটি ছিল চটকল শ্রমিকদের সাধারণ ধর্মগড় ৷ এই সময়ে ভারতব্যাপী শ্রমিক শ্রেণীর মনোভাব সৃষ্টি হয় ৷ শ্রমিকদের অগ্রগতি রোধ করার জন্য ব্রিটিশ সরকার ততপর হয়ে ওঠেন ৷ সরকার দুভাবে শ্রমিক আন্দোলনকে দমন করতে উদ্যোগী হন ৷ প্রথমত, ১৯২৮ সালে কেন্দ্রীয় আইনসভার শিল্প বিরোধী বিল ও জননিরাপতা আইনে সংশোধনী বিল উপস্থাপিত করে  ৷



এই দুটি আইন দ্বারা সরকার ইচ্ছামত ধর্মঘট করার অধিকার খর্ব করার ক্ষমতা লাভ করেন ৷ এমনকি দমনমূলক নীতির মাধ্যমে সরকার শ্রমিক আন্দোলন বন্ধ করতে উদ্যোগী হন ৷ এই বছর মার্চ মাসে সারা ভারতের বিভিন্ন স্থান থেকে মোজাফফর আহমেদ, দাঙ্গে, মিরাজকর প্রমুখ বিখ্যাত শ্রমিক নেতাদের গ্রেফতার করে মীরাট ষড়যন্ত্র মামলা শুরু করা হয়। আসলে সংগ্রামী নেতাদের শ্রমিক আন্দোলন থেকে বিচ্ছিন্ন করার জন্যই এই মামলা শুরু করা হয়েছিল ৷


পরবর্তীকালে ১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দে প্রাদেশিক সাহিত্য শাসন রূপায়িত হওয়ায় আটটি প্রদেশে কংগ্রেস দল ক্ষমতাসীন হয়ে ওঠেন এর ফলে শ্রমিক দল ও শক্তিশালী হয়ে উঠতে থাকে ৷ এই সময়ে ১৯৩৭ থেকে ৩৯ খ্রিস্টাব্দে ভারতের বিভিন্ন অংশে ব্যাপক শ্রমিক আন্দোলন সংঘটিত হয় ৷ এগুলির মধ্যে বাংলার পাঠ শিল্পের শ্রমিক ধর্মঘট ,কানপুরের সুতিবস্ত শিল্পে ধর্মঘট, আসামে তৈলশিল্পে ধর্মঘট , প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য ৷


 সুতরাং সবশেষে এ কথা বলা যায় যে, প্রাক দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পর্বের ধর্মঘট গুলি পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, এই সময়ের শ্রমিক আন্দোলন আত্মরক্ষার প্রয়োজন ছাড়াও নতুন অধিকার আদায়ে সচেষ্ট হয়েছিল ৷ তাছাড়া ও শিল্পাঞ্চল ছাড়া অসংগঠিত বিভিন্ন শিল্পে যেমন পরিবহন ও ছাপা শ্রমিকরা ট্রেড ইউনিয়ন গঠন করে ধর্মঘটে সামিল হয়েছিলেন ৷ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হলে শ্রেণী চেতনার উদ্বৃত্ত শ্রমিক শ্রেণী জাতীয় আন্দোলনের মূল প্রবাহের সঙ্গে যুক্ত হয়ে শ্রমিক আন্দোলনকে আরো ব্যাপক ও মহত্তর করে তোলে ।






About the author

Irisha Tania
"আমি সেই মেয়ে, যে শব্দে বাঁচে। কলম আমার অস্ত্র, আর কাগজ আমার স্বপ্নের আকাশ। প্রতিটি অনুভব, প্রতিটি চিন্তা আমি সাজিয়ে রাখি অক্ষরের গাঁথুনিতে। কখনো গল্পে, কখনো কবিতায়, আবার কখনো নিঃশব্দের ভেতরে। আমি লিখি, কারণ লেখার মাঝে আমি নিজেকে খুঁজে পাই। …

Post a Comment

🌟 Attention, Valued Community Members! 🌟