জ্ঞানদীপ্তির যুগ বলতে কী বোঝো ও এর বিকাশ ও ফলাফল আলোচনা করো।

 জ্ঞানদীপ্তির যুগ বলতে কী বোঝো ও এর বিকাশ ও ফলাফল আলোচনা করো।

জ্ঞানদীপ্তির যুগ বলতে কী বোঝো ও এর বিকাশ ও ফলাফল আলোচনা করো।


সপ্তদশ শতকের শেষদিকে ইউরোপে যে যুক্তিবাদ মানুষকে কুসংস্কার ও অন্ধবিশ্বাসের পরিবর্তে ব্যক্তিদের প্রতি সহনশীলতার নীতি গড়ে তুলতে সাহায্য করেছিল ৷ ঐতিহাসিকরা মানুষের এরুপ রূপান্তরকে বিকেকের সংকট বলে আখ্যায়িত করেছে । ষোড়শ ও সপ্তদশ শতকের বৈজ্ঞানীক আবিষ্কারের প্রভাব খ্রীস্টান ধর্মের গোড়ামি ও কুসংস্কারকে কিছুটা কাঠগোড়ায় তোলে । অষ্টাদশ শতকে রেঁনেসাস বেইলী, জন লক, স্পিনোজা প্রমুখ যুক্তি বাদের দ্বারা ইউরোপ সম্প্রসারিত হয় । এই সময় প্রকৃতি বিজ্ঞান, সমাজ, রাষ্ট্রব্যবস্থার সকল ক্ষেত্রে মানুষ প্রয়োগ করেছিল যুক্তিবাদ । এই কারনে অষ্টাদশ শতাব্দীকে  জ্ঞানদীপ্তির যুগ বলা হয় । ইউরোপে রেঁনেসাস আন্দোলনের ফলে মধ্যযুগে কুসংস্কার ও অন্ধ  বিশ্বাসের পরিবর্তে মানুষ সবকিছুকে যুক্তির দ্বারা বিশ্লেষণ করতে শুরু করে । ষোড়শ ও সপ্তদশ শতকে জ্ঞানের আলোকে ইউরোপে জ্ঞানের চরম বিকাশ ঘটে । এই সময় ইউরোপের সমাজ রাষ্ট্রব্যবস্থার সকল ক্ষেত্রে মানুষ প্রয়োগ করেছিল যুক্তিবাদ, এই কারণে অষ্টাদশ শতাব্দীকে জ্ঞানদীপ্তির যুগ বলা হয় । আর এই জ্ঞানদীপ্তির পর্বে কান্ট, মন্তেকু, এবং ডেনিস দিদেরো প্রমুখ দার্শনিকরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল ৷

আপনি চাইলে এগুলো পড়তে পারেন



ইউরোপে এই সময় বিশেষ পরিবর্তন আসে এমনকি ধর্মীয় ক্ষেত্রেও পরিবর্তন আসে, তারা ঈশ্বরের অস্তিত্বকে শিকার করলেও তারা ঈশ্বরের আদেয়াকে অস্বীকার করে । একই সঙ্গে দর্পন, রাষ্ট্রবিজ্ঞান, সাহিত্য, ইতিহাস, অর্থনীতি বিজ্ঞান এমনকি গণিত শাস্ত্রের ক্ষেত্রেও জ্ঞানদীপ্তির প্রভাব লক্ষ্য করা যায়, ইউরোপে এইসময় জ্ঞানদীপ্তির কয়েক টি সাধারণ দিক লক্ষ্য করা যায়ঃ-

  1. মানুষের অভিজ্ঞতাকে যুক্তির দ্বারা প্রমান করার চেষ্টা করা হয়।
  2. যুক্তির মাধ্যমে প্রকৃতির রহস্যকে উদ্ভাবন করা হয় ৷
  3.  সামাজিক রীতিনীতি ও ধর্মীয় বিশ্বাসকে যুক্তির মাপকাঠি দিয়ে যাচাই করে গ্রহণ করা ।



জ্ঞানদীপ্তির পর্যায় (বিকাশ)


অষ্টাদশ শতাব্দীকে জ্ঞানদীপ্তির পর্যায়কে ও টি ভাগে ভাগ করা হয়। প্রথম পর্যায়ে 1715-1750 খ্রীঃ, দ্বিতীয় পর্যায় 1750-1774 খ্রীঃ, তৃতীয় পর্যায় 1774-1789 খ্রীঃ। জ্ঞানদীপ্তির প্রথম পর্বে মূলত বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে এসেছিল পরিবর্তন । তবে অন্যান্য ক্ষেত্রে পরিবর্তন আসেনি একথা বলা যায়না । এই পর্যায়ে স্যার আইজ্যাক নিউটনের মাধ্যাকর্ষন তত্ত্ব ও উইলিয়াম হার্ভের মানবদেহে রক্তসঞ্চালনের তত্ত্ব খ্যাতি অর্জন করে । জন লকের দৈত চুক্তিও একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে । তিনি প্রচার করেন মানুষ যখন রাষ্ট্রের পূর্বযুগে বাস করত তখন তাদের উন্নতির জন্য রাজাকে ক্ষমতাদান করা হত । কিন্তু জন লক বলেন রাজা ঈশ্বর দ্বারা শাসিত নয় বরং জনগনের চুক্তির দ্বারা শাসিত । জন লেকের এই তত্ত্ব সমকালীন দার্শনিকদের অনুপ্রাণিত করেছিলো ৷ মন্তেঙ্কু তার স্পিরিট অফ লজ গ্রন্থে রাষ্ট্রতত্ত্ব আলোচনা করেছিলেন জন লেকের প্রভাবে ৷



দ্বিতীয় পর্বে জ্ঞানদীপ্তির এক চরম বিকাশ ঘটে মূলত ফরাসি দার্শনিকরা ছিল এই পর্বের প্রধান নিয়ন্ত্রক । এই পর্বের দার্শনিকদের মধ্যে ভলতেয়ার, রুশো, ডেনিস দিদেরো D.L.N বাট প্রমুখ ছিলেন উল্লেখযোগ্য । ভলতেয়ার তার কাঁদিত ও ডিক্লোনারি অফ ফিলোজফি (Dictionary of Philosophy) গন্থে সামাজিক ন্যায় বিচার, ধর্মীয় সহীনুতা, স্বাধীন চিন্তার ক্ষেত্রে যুক্তি প্রদান ইত্যাদির কথা বলেন । রুশো তার সামাজিক মতবাদে বৈপ্লবিক তত্ত্ব প্রচার করেন । তিনি বলেন রাজা যদি জনগনের দাবি পূরণ করতে ব্যর্থ হয়ে তাহলে রাজার পদত্যাগ করা উচিত । ডেনিম দিদেরো রচনা করেছিলেন বিশ্বকোষ, এটি ছিল দার্শনিকদের মৌলিক চিন্তার সংকলন ।


জ্ঞানদীপ্তির তৃতীয় পর্যায় ছিল 1774- 1789 খ্রীঃ পর্যন্ত । এই পর্যায়ে দার্শনিক চিন্তার বাস্তব প্রয়োগ লক্ষ্য করা যায় । ফ্রান্সের অর্থমন্ত্রী পূর্বনেকার, ক্যালোনক্রিয়া প্রমুখ মন্ত্রীরা দার্শনিকদের মতবাদের পরিপ্রেক্ষিতে অর্থনৈতিক সংস্কারে উদ্যোগী হয় । অনেক সময় দার্শনিকদের মতবাদ গুলি বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় প্রকাশ হয়ে পড়ে, সুতরাং পঞ্চদশ ও ষোড়শ শতকে রেনেসাঁস আন্দোলনের মধ্যযুগীয় কুসংস্কার, অন্ধবিশ্বাস পরিবর্তে মুক্তির দ্বারা লোকে সব বিচ্ছু বিচার করতে পেরেছে । সপ্তদশ শতকে রেনেসাঁসের প্রভাবে জ্ঞানের আরও বিকাশ ঘটে । বিজ্ঞান অর্পনের ক্ষেত্রে নতুনকে আনার অগ্রাহ্য দেখা যায় । এই যুগে প্রকৃতি বিজ্ঞান, সমাজ ব্যবস্থার ক্ষেত্রে যুক্তিবাদ প্রয়োগের দ্বারা প্রচলিত ব্যবস্থার সভ্যতা যাচাই করে ।



তোমাকে অনেক ধন্যবাদ জ্ঞানদীপ্তির যুগ বলতে কী বোঝো ও এর বিকাশ ও ফলাফল আলোচনা করো। এই নোটটি পড়ার জন্য

About the author

Irisha Tania
"আমি সেই মেয়ে, যে শব্দে বাঁচে। কলম আমার অস্ত্র, আর কাগজ আমার স্বপ্নের আকাশ। প্রতিটি অনুভব, প্রতিটি চিন্তা আমি সাজিয়ে রাখি অক্ষরের গাঁথুনিতে। কখনো গল্পে, কখনো কবিতায়, আবার কখনো নিঃশব্দের ভেতরে। আমি লিখি, কারণ লেখার মাঝে আমি নিজেকে খুঁজে পাই। …

Post a Comment

🌟 Attention, Valued Community Members! 🌟