মধ্যপ্রাচ্য কিভাবে ঠান্ডা লড়াইয়ের অন্যতম ঝটিকা কেন্দ্রে পরিণত হয়?
মধ্যপ্রাচ্য বলতে যেসব দেশগুলোকে বোঝায় তার মধ্যে অন্যতম হলো আরোবীয় দেশগুলো। সৌদি আরব, কুয়েৎ, ওমান, সংযুক্ত আরব ওমর শাহি এছাড়াও মিশর, সিরিয়া, লেবানন, ইজরাইল, ইরাক, ইরান, তুরস্ক। মধ্যপ্রাচ্যে এই সকল দেশগুলোর বড়ো আকর্ষণ হল এর তৈল সম্পদ। তাই মধ্যপ্রাচ্যে তৈল উত্তোলন এর জন্য ইঙ্গ-মার্কিন ফরাসি এবং অন্যান্য ইউরোপীয় শক্তিবর্গ সর্বদাই মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতির সমাজ ও অর্থনীতির ওপর বারং বার প্রভাব বিস্তার করতে চেয়েছেন। তারই পরিণতিতে মধ্যপ্রাচ্যে এক সংকটের বাতাবরণ তৈরি হয়েছে এবং এই অঞ্চল ঠান্ডা লড়াইয়ের কেন্দ্রভূমিতে পরিণত হয়েছে।
আপনি চাইলে এগুলো পড়তে পারেন
মধ্যপ্রাচ্যে সংকটের সূত্রপাত বিংশ শতকে মধ্যবর্তী পর্যায় থেকে কিন্তু ১৯৮৭ সাল থেকে গাজা ভূখণ্ডে গণ অভ্যুত্থান হওয়ায় এই সংকট তীব্র হয়ে ওঠে। প্যালেস্তনীয়দের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ যখন ক্রমশ অনিশ্চয়তার দিকে এগিয়ে গেল মূলত ইসরাইল অধিকৃত গাজা ভূখণ্ডে বসবাসকারী প্যালেস্তানীয় শরণার্থীরা অত্যন্ত দুর্দশার শিকার হয়ে এক প্রবল গণঅভ্যুত্থান শুরু করেছিল। ১৯৮৭ সালে এই গণঅভ্যুত্থানের জন্য প্রধানত দায়ী ছিল ইজরাইলের নিয়ন্ত্রণাধীনে থাকা আরব শরণার্থীদের মধ্যে ক্রমশ নৈরাজ্য, দ্রারিদ্য এবং অবহেলা এছাড়াও প্যালেস্টাইন সমস্যার সমাধানে সংশ্লিষ্ট শক্তিগুলো উদাসীনতা এবং এই গন অভ্যুথানে সঙ্গে যুক্ত ছিল সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের যুবসমাজ। সুস্থভাবে বেঁচে থাকা এবং জীবনে উন্নতি করার সুযোগ সুবিধা থেকে এরা প্রায় বঞ্চিত ছিল। অন্যদিকে প্যালেস্টাইন সমস্যা নিয়ে গড়ে ওঠা P.L.O প্রতি যুবসমাজ সম্পূর্ণ ধৈর্য হারিয়ে ফেলেছিল।
১৯৮৮ সালে নভেম্বর মাসে প্যালেস্টাইন ন্যাশনাল কাউন্সিল গঠিত হয়ে প্যালেস্টাইন সমস্যার মোকাবিলায় সচেষ্ট হয়েছিল। এই সম্মেলনে P.L.O প্রধান এবং ভূখণ্ডহীন প্যালেস্টাইনের প্রেসিডেন্ট আরাফাত ঘোষণা করেছিলেন P.L.O অকারনে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করবে না। কিন্তু আরাফাত একথা ঘোষণা করলেও এই সমস্যার সমাধানের পূর্বে উপসাগরীয় অঞ্চলে ইরান-ইরাক যুদ্ধের ক্ষেত্র প্রস্তুত হল।
মধ্যপ্রাচ্যে ইরান-ইরাক, ইরাক-কুয়েত, এবং দ্বিতীয় উপসাগরীয় যুদ্ধ মধ্যপ্রাচ্যের রাজনীতিকে পুনরায় অস্থির করে তুললো। উপসাগরীয় সংকটের মূলে ছিল আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চলের ক্রমবর্ধমান ভৌগোলিক এবং অর্থনৈতিক গুরুত্ব। এই অঞ্চলে মোট জনসংখ্যার 2/3 অংশ
ইরান ইরাকের অন্তর্ভুক্ত। আবার বিশ্বের অধিকাংশ দেশেই তেলের জন্য উপসাগরীয় অঞ্চলের ওপর নির্ভরশীল। স্বভাবতই দ্বিমেরুকৃত বিশ্বে দুই মহা শক্তিধর রাষ্ট্র আমেরিকা ও সোভিয়েত ইউনিয়ন
নিজ নিজ অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক স্বার্থের তাগিদে এই অঞ্চলেঠান্ডা লড়াইয়ের প্রসার ঘটিয়েছিল। ইরান ও ইরাক এই দুই উপসাগরীয় রাষ্ট্রে আভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক পরিবর্তন মধ্যপ্রাচ্যে সংকটের জন্যে দায়ী ছিল।
কাগজে কলমে ইরাক ছিল সামরিক দিক থেকে ইরানের চেয়ে এগিয়ে কারণ সোভিয়েত ট্যাংক যুদ্ধবিমান এবং ক্ষেপণাস্ত দ্বারা সে যেমন সমৃদ্ধ ছিল তেমনি ব্রিটেন ও আমেরিকা কাছ থেকে অস্ত্রশস্ত্র সাহায্য পেত। অন্যদিকে ইরানে সামরিক বাহিনী মূল্ শক্তি ছিল ইসলামীয় বিশ্বাস এবং খোমাইনির নেতৃত্ব। খোমাইনি তার সেনাবাহিনীকে আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত করেছিল। চীন, উত্তর কোরিয়ার মতো দেশগুলোর কাছ থেকে এবং আমেরিকার কাছ থেকে গোপনে বিধ্বংসী বিমান এবং আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত করে। ইরান ইরাক যুদ্ধের প্রশ্নে আরব দেশগুলো দ্বিধা বিভক্ত হয়ে পড়েছিল। সৌদি আরব, জর্ডন, কুয়েত ইরাককে সমর্থন করেছিল। অন্যদিকে সিরিয়া, লেবানন, আলজেরিয়া, সংযুক্ত আরব শাহী ও ইয়েমেন ইরানের পাশে ছিল।
ইরান ইরাক যুদ্ধের গতি প্রকৃতি যখন তীব্রতায় পৌছালো তখন রাষ্ট্রসংঘ ১৯৮৭ সালে যুদ্ধ বিরোধী প্রস্তাব দিয়েছিল। সাদাৎ হোসেন এই প্রস্তাব মেনে নিতে চাইলেও তেহরান প্রশাসন ও খোমেইনি জেদ ধরে থাকলেন যে যদি সাদ্দাত ক্ষমতা থেকে সরে যান এবং ইরাক যদি ১৫০ বিলিয়ন ডলার ইরানকে যুদ্ধের ক্ষতি পূরণ দেয় তাহলে যুদ্ধ থামবে কিন্তু যুদ্ধ বিরোতি হলো না বরং ইরান আরো বিপর্যস্ত হলো এই যুদ্ধে ১০ লক্ষ মানুষ নিহত হল।মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যুক্ত থেকে ইরাক সামরিক শক্তি বৃদ্ধি করলেও পরবর্তীকালে মার্কিন প্রশাসনের সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ করে ফেলে। শুধু তাই নয়, তেল রপ্তানি প্রশ্নে মার্কিন বিরোধীতার রাস্তায় হাঁটলেন এবং ১৯৯০ সালে হঠাৎ কুয়েত আক্রমণ করে মার্কিন বিরোধীতার সম্মুখীন হল।