ভারতীয় সংবিধানের বৈশিষ্ট্যসমূহ আলোচনা কর অথবা,ভারতীয় সংবিধানের বৈশিষ্ট্যগুলি সংক্ষেপে আলোচনা করো।

এই প্রশ্নটা পাঁচের লেখার জন্য আপনারা প্রথমের ভূমিকাটি লিখবেন এবং আপনার পছন্দমত যে কোন তিন থেকে চারটি কারণ দেবেন এবং শেষে মূল্যায়ন দিয়ে নোটটি শেষ করবেন
ভারতীয় সংবিধানের বৈশিষ্ট্যসমূহ :
১৯৪৯ সালের ২৬ নভেম্বর গণপরিষদ কর্তৃক ভারতীয় সংবিধান গৃহীত হয় এবং ১৯৫০ সালের ২৬ জানুয়ারী এই সংবিধান কার্যকর হয়। এর আম্বেদকরের মতে, ভারতের সংবিধান এমন একটি সংবিধান যাহা বিভিন্ন রাষ্ট্রের ত্রুটি-বিচ্যুতিগুলিকে বাদ দিয়ে জাতীয় স্বার্থের প্রয়োজনে বিভিন্ন রাষ্ট্রের সংবিধানের শ্রেষ্ঠ বিষয়গুলিকে ভারতীয় সংবিধানের মধ্যে স্থান দেওয়া হয়েছে।
ভারতীয় সংবিধানের বৈশিষ্ট্যঃ
বৃহৎ ও জটিলঃ ভারতীয় সংবিধান বিশ্বের মধ্যে সর্বাপেক্ষা বৃহৎ ও জটিল সংবিধান। বর্তমানে এই সংবিধানে ৪০৫টি ধারা, অসংখ্য উপধারা, ১০টি তালিকা রয়েছে। এছাড়া নাগরিকের মৌলিক অধিকার, আইন বিভাগ, শাসন বিভাগ, বিচার বিভাগ প্রভৃতি সম্বন্ধে বিস্তৃত আলোচনা হয়েছে।
প্রস্তাবনার সংযোজনঃ ভারতীয় সংবিধানের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হল তার প্রস্তাবনা। এই প্রস্তাবনায় ভারত রাষ্ট্রের আদশ, প্রকৃতি, লক্ষ্য, উদ্দেশ্য প্রভৃতি বর্ণনা করা হয়েছে। ভারতীয় প্রস্তাবনায় ভারতকে একটি সার্বভৌম, সমাজতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক, প্রজাতন্ত্র রাষ্ট্র বলা হয়েছে।
দ্বি-নাগরিকত্ব বর্জনঃ ভারতীয় সংবিধানে দ্বি-নাগরিকত্ব স্বীকার করা হয় নি। এখানে নাগরিকত্ব বলতে সর্বভারতীয় নাগরিকত্বকে বোঝায়। যুক্তরাষ্ট্রিয় ব্যবস্থার মতো প্রত্যেক নাগরিককে একদিকে সমগ্র দেশের, অপরদিকে নিজ নিজ অঙ্গরাজ্যের নাগরিক বলে স্বীকার করা হয় না। ভারতে স্কি-নাগরিকত্বের পরিবর্তে এক-নাগরিকত্ব স্বীকৃত হয়।
ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রঃ ভারতীয় সংবিধানে ভারতকে একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র বলে ঘোষণা করা হয়েছে। রাষ্ট্র কোনো ধর্মের প্রতি পক্ষপাতিত্ব করবে না। সকল ধর্ম রাষ্ট্রের কাছে সমান মর্যাদা পাবে। সংবিধানের কয়েকটি বাধা-নিষেধ মেনে নিয়ে প্রত্যেক বাক্তি স্বাধীনভাবে ধর্মাচরন ও ধর্ম প্রচার করতে পারে।
নাগরিকের অধিকার ও কর্তব্যঃ ভারতীয় সংবিধানে নাগরিকের ছয়টি মৌলিক অধিকার প্রদান করা হয়েছে। এগুলি হল- সাম্যের অধিকার, স্বাধীনতার অধিকার, শোষণের বিরুদ্ধে অধিকার, ধর্মের অধিকার, শিক্ষা ও সংস্কৃতির অধিকার এবং শাসনতান্ত্রিক প্রতিবিধানের অধিকার। এর পাশাপাশি নাগরিকদের দশটি কর্তব্য পালনের কথা বলা হয়েছে। যেমন- সংবিধান মান্য করা, দেশরক্ষায় আত্মনিয়োগ করা প্রভৃতি।
প্রাপ্ত বয়স্কের সার্বজনীন ভোটাধিকারঃ ভারতীয় সংবিধানে প্রাপ্ত বয়স্ক সর্বজনীন ভোটাধিকার স্বীকৃতি পেয়েছে। বর্তমানে ১৮-বছর বয়স্ক সকল নাগরিক অর্থাৎ নারী-পুরুষ, জাতি-ধর্ম, নির্বিশেষে সকল ব্যক্তিই ভোট দানের অধিকারী।
জরুরী অবস্থার সংযোজনঃ ভারতীয় সংবিধানে তিন প্রকার জরুরী অবস্থার উল্লেখ করা হয়েছে। যেমন-আপ্যতকালীন জরুরী অবস্থা, রাজ্য-শাসনতান্ত্রিক অচলাবস্থার ক্ষেত্রে জরুরী অবস্থা এবং আর্থিক জরুরী অবস্থা। এই জরুরী অবস্থা ঘোষণা করার ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির হাতে ন্যাস্ত করা হয়েছে।
উল্লিখিত উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্যগুলি ছাড়াও, ভারতীয় সংবিধানে জরুরী পরিস্থিতি, একটি গণতান্ত্রিক প্রকৃতি এবং সমাজের কম ভাগ্যবান অংশগুলির জন্য নির্দিষ্ট সংরক্ষণের অধিকারের বিধান রয়েছে।
ফলস্বরূপ, ভারতীয় সংবিধান একটি অত্যন্ত সুলিখিত পাঠ্য । এই সংবিধান অন্যদের থেকে আলাদা । কিন্তু এটি একটি নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে বলা অসম্ভব । এটি একই সাথে রাষ্ট্রপতি, সংসদীয়, ফেডারেল, বিকেন্দ্রীভূত, নমনীয় এবং অনমনীয় শাসন ব্যবস্থা মেনে চলে। বিশ্বজুড়ে, বেশ কয়েকটি সংবিধান বাতিল করা হয়েছে। যাইহোক, ভারতীয় সংবিধান প্রাণশক্তি, প্রশস্ততা এবং দৃঢ়তার প্রতিনিধিত্ব করে।
তোমাকে অনেক ধন্যবাদ ভারতীয় সংবিধানের বৈশিষ্ট্যসমূহ আলোচনা কর অথবা,ভারতীয় সংবিধানের বৈশিষ্ট্যগুলি সংক্ষেপে আলোচনা করো। এই নোটটি পড়ার জন্য