দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহতা উল্লেখ করো। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে পারমাণবিক বোমাবর্ষণ সম্পর্কে আলোচনা করো। অথবা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ধ্বংসলীলার গুণগত পরিমাণগত পরিবর্তনের বিবরণ দাও। হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে পারমাণবিক বোমাবর্ষণ সম্পর্কে কী জান
১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দের ৩ সেপ্টেম্বর অক্ষশক্তি ও মিত্রশক্তির মধ্যে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয় এবং ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দের বিশ্বযুদ্ধে ২ সেপ্টেম্বর যুদ্ধ শেষ হয়।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহতা
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে দীর্ঘ ৬ বছর ধরে মানব সভ্যতার ওপর ধ্বংসলীলা চলে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে পৃথিবী জুড়ে মানুষের জীবন ও সম্পত্তির সীমাহীন ক্ষয়ক্ষতি হয়। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণের কোনো সুনির্দিষ্ট সরকারি হিসাব পাওয়া না গেলেও একথা নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, এই যুদ্ধ হল বিশ্ব ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়ংকর ও ধ্বংসাত্মক যুদ্ধ।
বিভিন্ন সূত্র থেকে এই ধ্বংসযজ্ঞ ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য পাওয়া যায়। মোটামুটিভাবে বলা হয় যে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অন্তত ৫.৭ কোটি মানুষ প্রাণ হারায়। আনুমানিক ৭৫ লক্ষ রুশ, ৩৫ লক্ষ জার্মান, ২২ লক্ষ চিনা, ১২ লক্ষ জাপানি যুদ্ধের ফলে প্রাণ হারান। কোরিয়া, ইটালি, কানাডা, গ্রিস, বেলজিয়াম, রোমেনিয়া, বালগেরিয়া, হাঙ্গেরি প্রভৃতি দেশের প্রচুর মানুষও যুদ্ধে মারা যায়।
যুদ্ধের ফলে বিপুল সংখ্যক অসামরিক মানুষের মৃত্যু হয়। মানুষের জীবনহানি ছাড়াও বিভিন্ন দেশের বহু শহর ও শিল্পাঞ্চল ধ্বংস হয়ে যায়। ব্রিটেন ও ফ্রান্সের হাজার হাজার ঘরবাড়ি ও রাস্তাঘাট ধ্বংস হয়ে যায়। জার্মান আক্রমণে লেনিনগ্র্যাড, স্ট্যালিনগ্র্যাড-সহ রাশিয়ার বিস্তীর্ণ অঞ্চল পধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। মানুষ ও সম্পদহানির নিরিখে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় রাশিয়া।
পারমাণবিক বোমাবর্ষণের ফলে জাপানের হিরোশিমা শহরে ৭৮ হাজার ও নাগাসাকি শহরে ৪০ হাজার মানুষ মারা যায়। এই দুই শহরের রাস্তাঘাট ও ঘরবাড়ি সম্পূর্ণ ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। জাপানের সর্ববৃহৎ ৬০টি শহরের অন্তত ৩০ শতাংশ মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়ে।
আমেরিকা যুদ্ধের প্রথমদিকে অংশ না নেওয়ায় এবং আমেরিকার মূল ভূখণ্ডে অক্ষশক্তি প্রত্যক্ষ আক্রমণে ব্যর্থ হওয়ায় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে আমেরিকার ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ছিল তুলনামূলকভাবে কম। অবশ্য এই কম পরিমাণটিও ছিল যথেষ্ট আতঙ্কের। যুদ্ধে আমেরিকার ৪ লক্ষাধিক মানুষ নিহত এবং ৬ লক্ষাধিক মানুষ আহত হন। জাপানে পারমাণবিক বোমাবর্ষণ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সবচেয়ে ভয়ংকর ঘটনা হল জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে পারমাণবিক বোমাবর্ষণ।
মিত্রশক্তির কাছে জার্মানির আত্মসমর্পণের (৭ মে, ১৯৪৫ খ্রি.) পর মিত্রশক্তির নেতারা ১৭ জুলাই জার্মানির পোর্টসডাম শহরে এক সম্মেলনে মিলিত হয়ে জাপানের আত্মসমর্পণের দাবি জানায়। জাপান এই দাবি উপেক্ষা করলে আমেরিকা জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে পারমাণবিক বোমা বর্ষণ করে। আমেরিকা ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দের ৬ আগস্ট সকাল ৮ টা ১৫ মিনিটে জাপানের শিল্প-শহর হিরোশিমায় 'লিটল বয়' নামে প্রথম পারমাণবিক বোমা বর্ষণ করলে শহরটি কার্যত ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয় এবং এর ফলে প্রায় ৭৮ হাজার সাধারণ মানুষের মৃত্যু হয়।
আমেরিকা ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দের ৯ আগস্ট রাত ৩ টে ৪৭ মিনিটে জাপানের নাগাসাকিতে 'ফ্যাট ম্যান' নামে দ্বিতীয় পারমাণবিক বোমা বর্ষণ করলে শহরটি কার্যত ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয় এবং এর ফলে প্রায় ৪০ হাজার সাধারণ মানুষের মৃত্যু হয়।পারমাণবিক বোমাবর্ষণের ফলে হিরোশিমা ও নাগাসাকি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হলো। জাপানের মনোবল ভেঙে যায়। শেষপর্যন্ত জাপান ২ সেপ্টেম্বর (১৯৪৫ খ্রি.) আত্মসমর্পণের দলিলে স্বাক্ষর করে।
তোমাকে অনেক ধন্যবাদ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহতা উল্লেখ করো। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে পারমাণবিক বোমাবর্ষণ সম্পর্কে আলোচনা করো। এই নোটটি পড়ার জন্য