জৈন ধর্মের মূল দর্শণ সম্পর্কে লেখো বা, জৈন ধর্মের মূল শিক্ষার উপর একটি সংক্ষিপ্ত টীকা লেখো।

জৈন ধর্মের মূল দর্শণ সম্পর্কে লেখো বা, জৈন ধর্মের মূল শিক্ষার উপর একটি সংক্ষিপ্ত টীকা লেখো।

 জৈন ধর্মের মূল দর্শণ সম্পর্কে লেখো বা,জৈন ধর্মের মূল শিক্ষার উপর একটি সংক্ষিপ্ত টীকা লেখো।

জৈনধর্মের মূল শিক্ষাগুলি হলঃ


বৈদিক ঐতিহ্যবাহী ব্রাহ্মণ্য ধর্ম ও সংস্কৃতির গোঁড়ামির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হিসেবে যে সকল নতুন ধর্মীয় চেতনা ভারতীয় মানবজগৎকে প্রভাবিত করেছিল, সেগুলির মধ্যে জৈনধর্ম বিশেষ উল্লেখযোগ্য। ভারতে এই ধর্মের এক বিশিষ্ট স্থান আছে। প্রায় ২০০ ২০ লক্ষ জৈন অনুরাগী আজও ভারতে বর্তমান যার বেশিরভাগই হলেন অবস্থাপন্ন  বণিক। জৈন ঐতিহ্য অনুসারে জৈন তীর্থঙ্করের মোট সংখ্যা ২৪ এবং এঁরা বিভিন্ন যুগে আবির্ভূত হয়েছিলেন। যাঁর মধ্যে শেষ দুই তীর্থঙ্কর, যথা-পার্শ্বনাথ ও মহাবীর বিশেষ উল্লেখযোগ্য। এই দুইজনের প্রচেষ্টায় জৈনধর্ম বিশেষ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিল।


জৈনধর্ম চারটি মূল শিক্ষার কথা বলেছে, যথা-হিংসা না করা, মিথ্যা কথা না বলা, চুরি না করা এবং সম্পত্তি অর্জন না করার কথা পার্শ্বনাথ বলেছিলেন। এগুলি 'চতুখাম' নামে পরিচিত। তবে পরবর্তীকালে এই 'চতুর্যাম'-এর সঙ্গে মহাবীর একটি নতুন উপদেশ যুক্ত করেছিলেন-'সংযম রক্ষা'। এছাড়া তিনি মুক্তিলাভের উপায় হিসেবে তিনটি পথের নির্দেশ দেন-যা 'ত্রিরত্ন' নামে পরিচিত। এই তিনটি পথ হল সৎ জ্ঞান, সৎ বিশ্বাস এবং সৎ আচরণ। জৈনধর্মের অন্যতম উপদেশ 'অহিংসা'র ওপর মহাবীর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেছিলেন। যা পরে তাঁর অনুগামীগণ কর্তৃক বিশেষভাবে অনুকরণীয় হয়েছিল। এছাড়া জৈন ধর্মাবলম্বীদের জন্য সর্বস্ব ত্যাগ করে সম্পূর্ণ নগ্ন দেহ ধারণের নীতিও তিনি ঘোষণা করেছিলেন।


প্রারম্ভিক পর্বে জৈনধর্মের উপদেশগুলি মৌখিক পদ্ধতিতে সংরক্ষিত হত। খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতাব্দী থেকে এগুলিকে একত্রিত করে লিপিবদ্ধকরণের কাজ শুরু হয়। এই সময়কালে জৈনধর্মের মধ্যে বিভাজন ঘটে। ধর্মীয় নেতা ভদ্রবাহুর নেতৃত্বে দিগম্বর গোষ্ঠীর জন্ম হয়, যারা সম্পূর্ণ নগ্ন দেহ ধারণ করার নীতিতে বিশ্বাসী ছিলেন। অপরদিকে স্থূলভদ্রের নেতৃত্বে শ্বেতাম্বরগণ সাদা পোশাক পরিধান করার রীতিতে বিশ্বাসী হয়ে পড়ে। বিভাজিত হওয়া সত্ত্বেও জৈনধর্ম আজও ভারতবর্ষে তার অস্তিত্ব টিকিয়ে রেখেছে। পরবর্তীকালে জৈনধর্ম ব্রাহ্মণ্য ধর্মীয় ব্যবস্থার অন্যতম কাঠামো জাতি বর্ণ ব্যবস্থার সঙ্গে আপস করেছিল।

About the author

Irisha Tania
"আমি সেই মেয়ে, যে শব্দে বাঁচে। কলম আমার অস্ত্র, আর কাগজ আমার স্বপ্নের আকাশ। প্রতিটি অনুভব, প্রতিটি চিন্তা আমি সাজিয়ে রাখি অক্ষরের গাঁথুনিতে। কখনো গল্পে, কখনো কবিতায়, আবার কখনো নিঃশব্দের ভেতরে। আমি লিখি, কারণ লেখার মাঝে আমি নিজেকে খুঁজে পাই। …

Post a Comment

🌟 Attention, Valued Community Members! 🌟