নব্য প্রস্তর যুগের প্রধান বৈশিষ্ট্য আলোচনা করো।
প্রাচীন ভারতীয় ইতিহাসে প্রস্তর যুগ এক বিশাল আলোচনার ক্ষেত্র। আর এই বিশাল আলোচনার ক্ষেত্রকে আলোচনার সুবিধার্থে তিনটি পর্যায়ে ভাগ করে নেওয়া হয়েছে পুরামস্তর, মধ্যায়প্তর ও নব্য প্রস্তরযুগ। পুরাপ্রস্তরযুগ অতিক্রম করে মধ্যপ্রস্তর মুখের মধ্য দিয়ে মানব সভ্যতা এসে শৌছায় তৃতীয় মুখটির যার গ্রাস্তে, যার নাম নরা প্রস্তর বা নবাগীয় যুখ। এই যুগে এসে মানুষের ইতিহাসে সর্বাপেক্ষা উল্লেখযোগ্য কিনা সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক পরিবর্তনের সুত্রপাত ঘটে। আর এই পরিবর্তনের বিষয়টি আরও স্পষ্টভাবে বোঝার জন্য নব্যপ্রস্তর সংস্কৃতির প্রধান প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলির সম্পর্কে অবহিত ক হওয়া প্রয়োজন।
পুরাপ্রস্তর ও মধ্যপ্রস্তর যুগে মানুষের অর্থনৈতিক জীবন পরিচালিত হত মূলত শিকার ও খাদ্য সংগ্রহের মধ্য দিয়ে, তাদের দৈনন্দিন জীবন ছিল বিপদসংকুল ও নিরাপত্তার অভাবে অনিশ্চিত। তারা প্রকৃতির ওপর একান্ত নির্ভরশীল ছিল। কিন্তু নব্যপ্রস্তর যুগে এসে মানুষের জীবনযাত্রার ধরন পুরোটাই পালটে গিয়েছিল। মানুষ ক্রমশ সভ্য হবে লেখ ঘটিয়েছিল, একটির পর একটি আবিষ্কার মানুষের সামাজিক ও অর্থনৈতিক জীবনে দিলও ঘটিয়েছিল। নব্যপ্রস্তর যুগে বসেই মানুষ প্রথম স্থায়ী বসতি নির্মাণ করতে শুরু করেছিল। স্থায়ী বসতি বলতে প্রথমে গ্রাম ও পরে নগর, যার মধ্য দিয়ে জনসংখ্যা ক্রমশ বৃদি পেয়েছিল এবং এই জনসংখ্যার চাহিদা মেটানোর জন্য মানুষ চাষবাসের দিকে মনোনিবেশ করেছিল।
এই যুগের মানুষ খাদ্যের ব্যাপারে নির্ভরতা কাটিয়ে উঠতে পেরেছিল পশুপালন ও চাষবাসের মাধ্যমে। মধ্যপ্রস্তর সংস্কৃতিতে পশুপালনের যে সুত্রপাত দেখা দিয়েছিল এই বুগে এসে তা আরও বিকাশ লাভ করে এবং কুকুর, ভেড়া, শূকর, ছাগল ইত্যাদি পশুপালন করা হত। মানুষ এই পর্যায়ে সর্বপ্রথম যব চাষকে আওতায় আনতে সক্ষম হয়। তারপর একে একে গম, ধান প্রভৃতি চাষের মধ্য দিয়ে মানুষ খাদ্যের চাহিদা পূরণ করতে থাকে। আর এই পর্যায়ে কৃষিকাজ আরও দ্রুতগতি লাভ করে নতুন নতুন অস্ত্রশস্ত্র নির্মাণের হাত। ধরে। এই যুগের হাতিয়ারগুলি পূর্ববর্তী যুগের তুলনায় অনেক মসৃণ ও ধারালো ছিল এবং হাতিয়ারগুলির আকারেরও পরিবর্তন ঘটেছিল।
এই যুগে নতুন হাতিয়ারের সাহায্যে কৃষিকাজের ফলে কৃষির উৎপাদন বৃদ্ধি পায় যার মধ্য দিয়ে উদ্বৃত্ত শস্য মজুত রাখার জন্য বিভিন্ন মৃৎপাত্র নির্মাণ শুরু হয়। পাত্রগুলি বিভিন্ন আকারের হত। উদ্বৃত্ত উৎপাদনের ফলে সমাজে শ্রেণীবিভাজনের সূচনা হয় এবং অর্থনৈতিক দিক থেকে সবল শ্রেণী দুর্বলের ওপর শক্তির প্রয়োগ করতে থাকে। আর এ উদ্বৃত্ত শস্যর মধ্য দিয়ে বিনিময়ের মাধ্যমে লেনদেন ব্যবস্থা শুরু হয়। চাষবাসের মথ উপায় সাম দিয়ে সেই চাষের জমিকে সুরক্ষিত রাখার জন্য সেই স্থানেই বসতি নির্মাণ শুরু হয়।
নব্যপ্রস্তর যুগে বিপ্লবাত্মক পরিবর্তন ঘটেছিল শিল্পক্ষেত্রেও। এই যুগে মুৎপাত্র নির্মাণ শিল্প এক বিশেষ উৎকর্ষতা লাভ করেছিল। প্রথমদিকে মুৎপাত্রগুলি খুব উন্নত মানের না হলেও পরবর্তী পর্যায়ে তা উন্নতির বিশেষ মাত্রা লাভ করেছিল। মৃৎপাত্রগুলিতে বিভিন্ন রং ও নকশা করার প্রবণতা দেখা দিয়েছিল। মৃৎপাত্রের পাশাপাশি এই সময়ে কিছু মাটির মূর্তিও আবিষ্কৃত হয়েছে। এই পর্বে সম্ভবত বয়ন শিল্পের উদ্ভব হয়েছিল। পশুলোম, চামড়া, উলের ব্যবহার লক্ষ করা যায়। নব্যপ্রস্তর বা নবাশ্মীয় যুগের মানুষ মৃত্যু পরবর্তী জীবনের বিশ্বাসী ছিল। পূর্ববর্তী যুগের মতো এই যুগের মানুষও জীবনধারনের সমস্ত উপকরণ মৃতদেহের সঙ্গে সমাধিস্থ করতো। মৃতদেহের সঙ্গে তার ব্যবহৃত বিভিন্ন অলংকার, পোশাক প্রভৃতিও সমাধি ক্ষেত্রে রেখে দেওয়া হত। এই যুগে বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠান, প্রথা, আইনশৃঙ্খলা, দেবদেবী, ভূত-পেত, ধর্ম প্রভৃতি প্রসার লাভ করে।
পরিশেষে বলা যায় যে, উপরিউক্ত বৈশিষ্ট্যগুলি নব্যপ্রস্তর যুগকে এক অন্যমাত্রা প্রদান করেছিল যা পূর্ববর্তী যুগ থেকে নব্যপ্রস্তর যুগকে পৃথক মর্যাদা প্রদান করেছিল এবং মানুষ এই পর্যায়ে খাদ্যসংগ্রাহক থেকে খাদ্য উৎপাদকে পরিণত হয়েছিল যা তাদের সামগ্রিক দিকে উন্নতি বিধান করেছিল যে কারণে গর্ডন চাইল্ড এই যুগকে নবাশ্মীয় বিপ্লব বলেছেন।
তোমাকে অনেক ধন্যবাদ নব্য প্রস্তর যুগের প্রধান বৈশিষ্ট্য আলোচনা করো। এই নোটটি পড়ার জন্য