শাহজাহানের মধ্য এশিয়ার নীতি সম্পর্কে আলোচনা কর

শাহজাহানের মধ্য এশিয়ার নীতি সম্পর্কে আলোচনা কর

 শাহজাহানের মধ্য এশিয়ার নীতি সম্পর্কে আলোচনা কর

শাহজাহানের মধ্য এশিয়ার নীতি সম্পর্কে আলোচনা কর


শাহজাহানের মধ্য এশিয়ার নীতি 

ভারতের মুঘল সাম্রাজ্যের ভিত্তি সুদৃঢ়  হলেও মুঘল সম্রাটেরা তাদের পিতৃভূমি হিসেবে মধ্য এশিয়ার ওপর কর্তৃত্ব স্থাপনের স্বপ্ন দেখতেন ৷ বাবর মধ্য এশিয়া অঞ্চলে অবস্থিত বালখ ও বাদাখশন লাভের বাসনা লুকায় ছিল ৷ বাবর ওই অঞ্চল থেকে জাতি শত্রুদের দ্বারা বিতাড়িত হয়েছিল তাই সে কথা ভুলতে পারিনি। হুমায়ুন এবং আকবর বালখ ও বাদাখশন দখল করে পিতৃভূমি উদ্ধারের কথা ভাবতেন কিন্তু তারাও সক্রিয় পদক্ষেপ নিতে পারেননি । জাহাঙ্গীর তার আত্মজীবনী গ্রন্থ তুজুক-ই-জাহাঙ্গীরী এবং আব্দুল হামিদ লাহিড়ী তার গ্রন্থে মধ্য এশিয়ার এই অঞ্চল পুনর দখলের ইচ্ছা প্রকাশ করতেন ৷ শেষ পর্যন্ত শাহজাহান তার পূর্বপুরুষদের পিতৃভূমি অভিযানের ইচ্ছাকে কাজে পরিণত করার সাহস দেখান । সমকালীন লেখক ইতিহাসবিদ আব্দুল হামিদ লাহিড়ী উল্লেখ করেছেন যে," শাসন ক্ষমতা লাভের সূচনা থেকে সম্রাটের হৃদয়ে বালখ ও বাদাখশন দখলের ইচ্ছা স্থান নিয়েছিল।"


দক্ষিণ ভারত অভিযানের সাফল্যের পর শাহজাহান মধ্য এশিয়া অভিযানের সিদ্ধান্ত নেন। মধ্য এশিয়া অভিযানের অজুহাত হিসাবে তিনি উজবেগ উপজাতির আক্রমণ ও সাম্রাজ্যের নিরাপত্তার কথা বলেন উজবেগ দের আক্রমণের ফলে একদা বাবর এই অঞ্চল ত্যাগ করে সরে আসতে বাধ্য হয়েছিলেন ৷ কিন্তু উজবেগ দের দলপতিদের অন্তদ্বন্দ্ব এবং উচ্চাকাঙ্ক্ষা মধ্য এশিয়ার রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে ৷ মধ্য এশিয়ার রাজনৈতিক সংকট চরমে উঠেছিল ৷ আব্দুললাহ খাঁ উজবেকের মৃত্যুর পর উজবেক নেতাদের ক্ষমতা লিপসা এই অঞ্চলে রাজনৈতিক শৃঙ্খলা ভঙ্গ করেছিল ৷ শেষ পর্যন্ত ইমাম কুলি খান নামের জন্য উজবেক নেতা বোখারা এবং বালখ দখল করে স্বাধীনভাবে শাসন করতে থাকেন ৷ কিছুদিনের মধ্যে ইমাম কুলি খাঁ ক্ষমতাচ্যুত হলে নজর মুহাম্মদ বোখার ও বালখ দখল করে নেন ৷


উজবেকদের উচ্চাকাঙ্ক্ষা ও আক্রমণের ফলে ভারতের উত্তর-পশ্চিম সীমান্তের নিরাপত্তা বিভিন্ন হয়। এরূপ পরিস্থিতিতে শাহজাহান মধ্য এশিয়ার অভিযানের পরিকল্পনা করেন আফগান উপজাতিদের দমন করার আগেই তিনি সীমান্ত সমস্যার মূল উৎস উজবেকদের ক্ষমতাচ্যুত করার সিদ্ধান্ত নেয় ৷ সম্রাট শাহজাহান ক্ষমতাশীল হবার মুহূর্তে নজর মহাম্মদ কাবুল আক্রমণ এবং সন্নিহিত শহর গুলি লুন্ঠনের ঘটনার সম্রাট যথেষ্ট ক্ষুদ্র ছিলেন এবং উপযুক্ত সময় ও সুযোগ এলে নজর মুহাম্মদকে চরম শাস্তি দিতে দীর্ঘ প্রতিজ্ঞ ছিলেন ৷


উজবেকদের অন্তদ্বন্ধ শাহজাহানের সামনে সুযোগ এনে দেয় ৷ নজর মোহাম্মদ ও তার পুত্র আব্দুল আজিজ এর মধ্যে মতভেদ দেখা দেয় আব্দুল আজিজ বিদ্রোহ ঘোষণা করেন এবং বালখ দখল করে নেন ৷ এমত অবস্থায় ক্ষমতারচুত্য নজর মুহাম্মদ মুঘল সম্রাট শাহজাহানের সাহায্য প্রার্থী হন। শাজাহান মুরাদের নেতৃত্বে ৫০ হাজার অশ্বারোহী ও 10000 পদাতিককে এক বিশাল সৈন্য বাহিনীর মধ্যে এশিয়া প্রেরণ করেন সাহায্য করায় সুস্পষ্ট নির্দেশ দিয়ে মুদারকে অভিযানে পাঠান ৷ শাহজাহান অতঃপর ১৬৪৬ খ্রিস্টাব্দে বালখ ও বাদাখশন দখল করেন কিন্তু নজর মুহাম্মদের হাতে তা প্রত্যাবর্তন না করায় মুরাদ ওই অঞ্চলের ওপর শাসন কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করলে পরিস্থিতি দ্রুত পাল্টাতে থাকে। ৷


এমত অবস্থায় নজর মোহাম্মদ ও আব্দুল আজিজ উভয়ে তাদের রাজ্য ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য শাহজাহানকে অনুরোধ জানান কিন্তু শাহজাহান কোন নির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত গ্রহণে ব্যর্থ হয় ৷ অতঃপর মধ্য এশিয়ার জলবায়ু ও কঠোর জীবনের অতিষ্ঠ হয়ে মুঘল সেনাপতিরা ফিরে আসতে বাধ্য হন এবং শাজাহানের মধ্যে এশিয়া নীতি ব্যর্থ ব্যর্থতার পর্যবসিত হয়


অধিকাংশ ঐতিহাসিক এর মতে শাহজাহানের মধ্যে এশিয়া নীতি ছিল ভ্রান্ত ও ঘটকারিতার অন্যতম নিদর্শন ৷ যথা,


প্রথমত, এই ভান্ত অভিযানে মুঘলের ক্ষতি হয়েছিল বিশাল খরচ হয়েছিল প্রায় চার কোটি টাকা। যুদ্ধক্ষেত্রে নিহত হয়েছিল প্রায় ৫০ সৈন্য কিন্তু ঠান্ডায় প্রাণ হারিয়েছিল এর ১০ গুণ ৷ অধ্যাপক যদুনাথ সরকারের মতে এই অভিযানে ১ ইঞ্চি জমিও মুঘলের অধিকারে আসেননি, শাসন ব্যবস্থার কোন পরিবর্তন ঘটেনি, কিংবা শত্রুর পরিবর্তে কোন মিত্র বালখের সিংহাসনে বসেন নি ৷


দ্বিতীয়তঃ এই ব্যর্থতার ফলে মধ্য এশিয়ার মুঘলের সম্মান ভূলুণ্ঠিত হয়েছিল এবং মুঘল বাহিনীর অপরাজয়তার উপকথা নেহাত গল্পকথায় পর্যবসিত হয়েছিল ৷


তৃতীয়তঃ মধ্য এশিয়ার মুঘলদের ব্যর্থতার ও বিপর্যয়ের সুযোগ নিয়েছিল মুঘলের চিরশত্রু পারস্য এই সুযোগে তারা কান্দাহার পুনর দখল করে নেন ৷ বালখ ও বাদাখশনের ব্যর্থতা উত্তর পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশে বিচ্ছিন্নতাক কামী শক্তিগুলির মনে ইন্ধন জাগাই হয় ৷


ডক্টর আতাহার আলী এক নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে মধ্য এশিয়ার রাজনীতির গতিপ্রকৃতি ব্যাখ্যা করেন তার মতে ,"ইমাম কুলিখাকে ক্ষমতাচ্যুত করে নজর মোহাম্মদ ক্ষমতা দখল করলে উজবেগ রাজ্যে শৃংখল ফিরে আসে তার সাফল্যে উৎসাহিত হয়ে উজবেগরা মুঘল নিয়ন্ত্রণ হাজারো অঞ্চল আক্রমণ করলে শাহজাহান সম্পাদিত হন ৷ এই সময় নজর মোহাম্মদের স্বৈরাচারী আচরণের বিরুদ্ধে উজবেগ দলপতিদের একাংশ বিদ্রোহী হলে শাহজাহানের সামনে একটা সুযোগ আছে এবং তিনি সাফল্য লাভ করেন ৷ তবে এ কথা ঠিক মধ্য এশিয়াই স্থায়ী কর্তৃত্ব মুঘলরা ধরে রাখতে পারেননি । ভৌগোলিক কারণে তা সম্ভব ছিল না ৷ কিন্তু এই কথা ভুললে হবে না যে নজর মোহাম্মদের সাথে সংযুক্তসম্পন্ন নিষ্ফলা ছিল না, কারণ এর ফলে ১৬৪৭ খ্রিস্টাব্দে পরবর্তীকালে উজবেগরা হিন্দকুশ অতিক্রম করে আর মুঘল ভূখণ্ডে কোন অভিযান চালায় নি ৷"
তোমাকে অনেক ধন্যবাদ শাহজাহানের মধ্য এশিয়ার নীতি সম্পর্কে আলোচনা কর এই নোটটি পড়ার জন্য

About the author

Irisha Tania
"আমি সেই মেয়ে, যে শব্দে বাঁচে। কলম আমার অস্ত্র, আর কাগজ আমার স্বপ্নের আকাশ। প্রতিটি অনুভব, প্রতিটি চিন্তা আমি সাজিয়ে রাখি অক্ষরের গাঁথুনিতে। কখনো গল্পে, কখনো কবিতায়, আবার কখনো নিঃশব্দের ভেতরে। আমি লিখি, কারণ লেখার মাঝে আমি নিজেকে খুঁজে পাই। …

Post a Comment

🌟 Attention, Valued Community Members! 🌟