আদি মধ্যযুগে ভারতের সেচ ব্যবস্থা
ভারতবর্ষ ও সুপ্রাচীনকাল থেকে একান্তভাবে কৃষি নির্ভর অর্থনীতির যুক্ত একটি রাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত । এদেশের বেশিরভাগ মানুষের জীবন জীবিকা প্রবাহিত করতো একান্ত ভাবে কৃষিকে কেন্দ্র করে ৷ তাই কৃষি সম্প্রসারণ বা উন্নয়নের বিষয় সর্বদা প্রাধান্য পেয়েছে । যেহেতু সেচ ব্যবস্থার সম্পর্ক অঙ্গাভঙ্গিভাবে যুক্ত সেহেতু সেচ ব্যবস্থার সম্প্রসারণ ছিল উল্লেখযোগ্য ৷ ভারতবর্ষে আদি মধ্যযুগের সেচ ব্যবস্থার দীর্ঘ বিবর্তনের কথা বিশেষভাবে পরিস্ফুটিত হয়েছে । ভারতের সেচ ব্যবস্থায় নোরিয়া ও অরঘট্ট ইত্যাদি শব্দ অনেক পূর্ব থেকেই ব্যবহৃত হলেও আদি মধ্যযুগে এর প্রয়োগ বিশেষভাবে লক্ষ্য করা যায় ৷
৫৩২ খ্রিস্টাব্দে যশোবর্ধনের মান্দাশর লেখমালায় 'জলপাত্র মালিকা' শব্দটি উল্লেখ পাওয়া যায় ৷ ফিরোজ শাহী 'জলপাত্র মালিকা' সংযুক্ত একটি কুপচক্রের (well-wheal) দীর্ঘ বিবরণ রয়েছে । ভারতবর্ষের সেচ ব্যবস্থার 'সাকিয়া' এর প্রয়োগ বিশেষ পরিবর্তন সংঘটিত করেন ৷ ঐতিহাসিক এপি উত্থার,জোসেফ নিরহাম অত্যন্ত সতকর্তার সাথে সাকিয়া ও নোরিয়ার পার্থক্য নির্দেশ করেছেন ৷ ভারতবর্ষের দীপালপুর,পাঞ্জাব, হরিয়ানা অঞ্চলের পারসিক চক্র ব্যবহৃত হতো ৷ ভারতবর্ষের সেচ ব্যবস্থায় বা এর ব্যবহার যথেষ্ট উন্নতি ঘটতে সক্ষম হয় ৷ এছাড়াও সার্কুলার ট্যাঙ্ক সেচ ব্যবস্থার অভূতপন্ন উন্নতি ঘটায় আদি মধ্যযুগে ৷
কাঠের তৈরি পারসিক চক্রে বিয়ারিং-র প্রয়োগ এদেশের জনপ্রিয়তা লাভ করে ৷ পরবর্তীকালে এই প্রযুক্তিকে আরো উন্নত কাজে , যথা দানশস্য পেশাই- র কাজে বন্দুকের নলমসৃন করার কাজে ব্যবহৃত করা হয় । Drawbar সাহায্যে একটি দীর্ঘ উলম্ব অক্ষ ধারাকে ফেরানো হতো ৷ এর সাহায্যে নির্দিষ্ট উচ্চতায় জল তোলা ব্যবহার করা হতো । বাগিচায় জল দেবার কাজে মান্ডি নামক প্রযুক্তির স্তর প্রয়োগ করা হতো ৷ এই প্রযুক্তির মাধ্যমে সরোবর থেকে জল তুলে অন্য জলাধারে পৌঁছে দেয়া হতো ৷ এদেশের সেচ ব্যবস্থার ক্ষেত্রে অন্যান্য প্রযুক্তি হল 'ভিনকলি' এটি একটি ধাপ দেওয়ার যন্ত্র বা লিভার দ্বারা পরিচালিত হতো ৷ তাই দেখা যায় আদি মধ্যযুগের সেচ ব্যবস্থা সম্প্রসারণের ফলে কৃষি জাতপন্য উৎপাদনের চাহিদা বৃদ্ধি পায় ৷ তার ফলেই কৃষি ব্যবস্থার সম্প্রসারণ ঘটে আর সেই কারণেই সেচ ব্যবস্থার নতুন নতুন প্রযুক্তি প্রয়োগ করতে থাকে ৷