জাহাঙ্গীরের রাজত্বকালে নুরজাহান কি ভূমিকা পালন করেছিল অথবা, জাহাঙ্গীরের রাজত্বকালে নুরজাহান কি ভূমিকা নিয়েছিল
![]() |
![]() |
বিষনদাস দ্বারা জাহাঙ্গীরের একটি প্রতিকৃতি ধারণ করা নূরজাহান c.1627 |
তীক্ষ্ণ বুদ্ধিসম্পন্ন নুরজাহান রাষ্ট্রের যাবতীয় রাজনৈতিক ও অন্যান্য সমস্যা সমাধান করতেন ৷ তার পরামর্শ অনুযায়ী রাষ্ট্রের নীতি নির্ধারণ হতো তাই ঐতিহাসিক স্মিথ তাকে বলেছেন সম্রাটের উপর নূরজাহানের প্রভাব প্রসঙ্গে বলা যায় যে জাহাঙ্গীরের সূরা পানে আসক্তি হ্রাসে নুরজাহানের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন ৷" রাজ দরবারে যাবতীয় কার্যের শিক্ষা চর্চার সংস্কৃতি প্রসারে তিনি সম্রাটকে ব্যক্তিগত অর্কমনতার সুযোগ নিয়ে মুঘল রাজনীতিতে পরিপূর্ণভাবে অংশগ্রহণ করেন ৷ মুঘল ইতিহাসে নুরজাহানের প্রভাব কে দুটি পর্যায় বিভক্ত করা যায় প্রথম পর্যায়ে ১৬১২ থেকে ২২ খ্রিস্টাব্দ এবং দ্বিতীয় পর্যায়ে ১৬২২ থেকে ২৭ খ্রিস্টাব্দ ৷
![]() |
আবুল হাসানের হাতে বন্দুক হাতে নূরজাহানের প্রতিকৃতি। |
প্রথম পর্যায়ে নুরজাহানের পিতা-মাতা জীবিত ছিলেন যারা তাঁর উচ্চকাঙ্ক্ষাকে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করতেন এবং দ্বিতীয় পর্যায়ে সম্রাটের অক্ষমতার সুযোগে তার নামের কার্য পরিচালনা করতেন ৷ সাম্রাজ্য জীবনের প্রথম পর্যায়ে অর্থাৎ জাহাঙ্গীরের সাথে বিবাহের পরে নুরজাহানের আত্মীয়-স্বজনকে রাজ দরবারে উচ্চপদে নিয়োগ করে ৷ নুরজাহানের পিতা ইতমাদ দৌলা , আব্দুল হাসান এবং তার ভাই আসফ খাঁ রাজদরবারের উচ্চপদ লাভ করেন ৷
এই সময় মুঘল সাম্রাজ্যের সীলমোহর অঙ্কিত অনুমোদিত পত্রব্যবতীয় যেকোনো ব্যক্তিকে জায়গীর প্রদান করা হতো না ৷ এই সময় তিনি মাঝেমধ্যেই ঝটিকা দর্শনে উপস্থিত হয়ে রাজকার্যের প্রয়োজনে বিভিন্ন রাজত্বের সমস্যার সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ উপদেশ দিতেন ৷ এই সময় থেকেই তার নামংকিত মুদ্রা প্রচলন হয় ৷ এই সমস্ত যাবতীয় রাজকীয় কাজ মুঘল সম্রাট জাহাঙ্গীরের স্বাক্ষরের সাথে নুরজাহানের নাম মুদ্রিত থাকত ৷
![]() |
জাহাঙ্গীরের অধীনে নুরজাহানের নাম ধারণ করা রৌপ্য টাকার মুদ্রা। তারিখ AH 1037, রাজত্বকাল 22 (1627/1628 CE), পাটনায় টাকশালা। |
এর পরবর্তী পর্যায়ে নুরজাহানের প্রভাব সর্বত্রভাবে বিস্তৃত লাভ করেন এবং সম্রাট শুধুমাত্র নামেই সিংহাসন বসতেন ৷ সম্রাট এই সময় কয়েকবার ঘোষণা করেন যে সাম্রাজ্যের যাবতীয় দায়িত্ব কর্তব্য তিনি বেগম নুরজাহানের হাতে দিয়েছেন ৷ মুঘল সাম্রাজ্যের প্রশাসনিক রাজনৈতিক সকল বিষয়ের নুরজাহানের তীক্ষ্ণ দৃষ্টি এড়াতো না ৷ তিনি মন্ত্রীদেরও প্রয়োজনে পরামর্শ দান করতেন এবং জটিল রাষ্ট্রীয় নীতি নির্ধারণে তিনি ছিলেন সিদ্ধ হস্ত এইভাবেই মুঘল সাম্রাজ্যের নিয়ন্ত্রক হয়ে ওঠেন একজন মহিলা।
নুরজাহান নিজ পছন্দ মত ব্যক্তিকে ক্ষমতার শীর্ষে বসিয়ে অপছন্দের ব্যক্তিকে ক্ষমতাচ্যুত করতে পারতেন ৷ এমনকি ওই সময় রাষ্ট্রমন্ত্রীরেও তার অনুগ্রহের মুখপক্ষেই হয়ে থাকতো যুদ্ধ ও শিকারে নুরজাহান হতেন জাহাঙ্গীরের সঙ্গীনি ৷ নুরজাহান তার অস্বাভাবিক বুদ্ধিমত্তা ও কূটনৈতিক ক্ষমতা বলে তিনি রাজাকে বিদ্রোহী মোহাম্মদ খাঁ এর পক্ষ থেকে মুক্ত করেন ৷ তারপর নুরজাহানের ভাতা আসফ খাঁর কন্যার সঙ্গে যুবরাজ খুররমের (শাহজাহানের) বিবাহ দেন ৷ সিংহাসন ভবিষ্যৎ উত্তরাধিকারী গড়ে তোলেন এরপর পরবর্তী কালে নুরজাহান ইতিমাদৌলা ও খুররমের একটি গোষ্ঠীর নুরজাহান জুন্টা বা চক্র নামে পরিচিত হন ।
![]() |
জাহাঙ্গীর ও যুবরাজ খুররমের সাথে নূরজাহান, গ. 1624. এই দৃশ্যটি সম্ভবত আগ্রার আরামবাগে সেট করা হয়েছে, যা সম্রাজ্ঞী নুরজাহান, বাগানের একজন মহান পৃষ্ঠপোষক, 1621 সালে পুনরায় মডেল করেছিলেন। |
নুরজাহান এত প্রভাবশালী হয়ে ওঠেন যে মুঘল দরবারে প্রধান উচ্চপদস্থ অভিজতরা তার ওপরে বিরক্ত হন ৷ যুবরাজ খুররম পিতার বিরোধিতা শুরু করেন সাম্রাজ্যে দেখা যায় যে নানা প্রকাশ ষড়যন্ত্র , প্রকাশে নানা বিদ্রোহ ,দেশের শিল্প ও সংস্কৃতি ক্ষেত্রে নুরজাহানের প্রভাব অনুভূতি হয় । কারণ এইসব ক্ষেত্রেই তিনি ছিলেন উদার সংস্কৃতি মনা ৷ কিন্তু রাজনৈতিক প্রশাসনে তার মাত্রাতিরিক্ত হস্তক্ষেপ মুঘল সাম্রাজ্য কে ধ্বংসের পথে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিল ৷
জাহাঙ্গীরের সাথে নূরজাহানের বিবাহের পর পরবর্তী সময়ে বিলাস প্রিয় সম্রাট রাষ্ট্রীয় কার্যাবলীতে সক্রিয় অংশ না নেওয়া রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার নুরজাহান চক্রের হাতে কেন্দিভূত হয় পরবর্তীকালে নুরজাহানের একনায়কত্বের খুররম বা (শাহজাহান) বিদ্রোহী হয়ে ওঠেন এই সুযোগে খুররম সিংহাসন দখলে উদ্যোগ হয়ে ওঠেনি ৷ ক্ষমতার সাম্রাজ্যের চতুর্দিকে বিদ্রোহ বিক্ষোভের আগুন জ্বলে ওঠে তাই বলা যায় যে নুরজাহান জাহাঙ্গীরের প্রয়াসী হলেও তার প্রভাব মুঘল সাম্রাজ্যের পক্ষে ক্ষতিকর হয়েছিল ৷