বিজ্ঞান বিপ্লব বলতে কী বোঝো? একে কি প্রকৃত অর্থে বিপ্লব বলা যায়, বিজ্ঞান বিপ্লব কি ধর্মনিরপেক্ষ মানসিকতা সৃষ্টিতে সফল হয়েছিল অথবা, বিজ্ঞান বিপ্লব কতটা বৈপ্লবিক ছিল

বিজ্ঞান বিপ্লব বলতে কী বোঝো? একে কি প্রকৃত অর্থে বিপ্লব বলা যায়, বিজ্ঞান বিপ্লব কি ধর্মনিরপেক্ষ মানসিকতা সৃষ্টিতে সফল হয়েছিল অথবা, বিজ্ঞান বিপ্লব কত

 বিজ্ঞান বিপ্লব বলতে কী বোঝো? একে কি প্রকৃত অর্থে বিপ্লব বলা যায়, বিজ্ঞান বিপ্লব কি ধর্মনিরপেক্ষ মানসিকতা সৃষ্টিতে সফল হয়েছিল অথবা, বিজ্ঞান বিপ্লব কতটা বৈপ্লবিক ছিল

বিজ্ঞান বিপ্লব বলতে কী বোঝো? একে কি প্রকৃত অর্থে বিপ্লব বলা যায়, বিজ্ঞান বিপ্লব কি ধর্মনিরপেক্ষ মানসিকতা সৃষ্টিতে সফল হয়েছিল অথবা, বিজ্ঞান বিপ্লব কতটা বৈপ্লবিক ছিল

ধুনিক সভ্যতার যে অগ্রগতি নির্মিত হয়েছে তা একান্তভাবেই বিজ্ঞানের অবদান ৷ বিজ্ঞানের ইতিহাস হলো ধারাবাহিকতার ইতিহাস ৷ পঞ্চদশ শতকে ইউরোপ মহাদেশে বিজ্ঞানের জগতে যে অভূতপূর্ব বিকাশ সাধিত হয়েছিল তা সভ্যতাকে হঠাৎ করে ভীষণ গতি প্রদান করেছিল ৷ এই সময় বিজ্ঞানের প্রতিটি শাখাতে একের পর এক অভিনব আবিষ্কার কেবলমাত্র সেই সময়কালেই সমৃদ্ধ করেননি । ভবিষ্যতের গতিপথ কে আলোক উজ্জ্বল করে তুলেছিল । সেই কারণেই উক্ত কাল পর্বটি ইতিহাসে "Scientific revolution" বা বিজ্ঞান বিপ্লবের যুগ হিসাবে অভিহিত করা হয়ে আছে ।

 শুক্র , মঙ্গল , বৃহস্পতি এবং শনির জন্য গোলকের টলেমাইক মডেল । Georg von Peuerbach , Theoricae novae Planetarum , 1474
আপনি চাইলে এগুলো পড়তে পারেন

পঞ্চদশ থেকে সপ্তদশ শতকের মধ্যে ভৌগলিক আবিষ্কার, নতুন শিক্ষার বিস্তার, নতুন প্রযুক্তি যুদ্ধের নয়া-কলা কৌশল, চিকিৎসা এবং মহাকাশ গবেষণার ক্ষেত্রে যে আমূল রূপান্তর লক্ষ্য করা যায় তার ফলে ইউরোপের মানুষ গড়ে তুলেছিল বিজ্ঞান নির্ভর উন্নত সভ্যতা ৷ যে সভ্যতার বেদিমূল কেবল ওই সভ্যতাকেই নয় পরবর্তী সময় কেউ দিয়েছে বাহুতে শক্তি, মস্তিষ্কে বুদ্ধি, ইন্দ্রিয় সুখ এবং ইউরোপকে করেছে বিশ্বের দরবারে অদ্বিতীয় ৷ আর এই বিজ্ঞান আশ্রয়ী সামগ্রিক পরিবর্তন হলো বিজ্ঞান বিপ্লব বা Scientific revolution ৷

বিজ্ঞান বিপ্লবের সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করেছিল তা হল রেনেসাঁকৃত আলোক-ময়তা এবং মানুষের মননে যে নতুন চিন্তা সঞ্চালিত করেছিল সেই সব উন্মেষিত চিন্তার বিকাশ সাধনে সর্বাপেক্ষা প্রয়োজনীয় ছিল যুক্তি এবং তথ্য ৷ এক কথায় প্রমাণ লব্ধ বিজ্ঞান দ্বারা প্রতিষ্ঠিত নব আঙ্গিকের শিক্ষা ব্যবস্থা ৷ পঞ্চদশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে নেদারল্যান্ড ফ্রান্স ও জার্মানিতে প্রায় ১৫০০ টির মত বিশ্ব বিদ্যালয় স্থাপিত হয় আর এই সকল প্রতিষ্ঠানে ছাত্রদের মধ্যে নবধারায় শিক্ষাবিজ্ঞানের ক্ষেত্র নিকোলাস, ইরাসমাস, আইজ্যাক নিউটন , লিওনার্দো দা ভিঞ্চি,ফ্রান্সিস বেকন প্রমুখরা বিশেষ ভূমিকা নেয় ৷

বিজ্ঞানের রূপান্তরকে বিপ্লবের পর্যায়ে উন্নতি করতে যে বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল তা হল প্রযুক্তির অভাবনীয় উন্নতি ৷ খুনি নিষ্কাশন ধাতুবিদ্যার, রসায়নবিদ্যার অভাবনীয় উন্নতি এই পর্যায়ে ঘটে, এই সময় সেনাবাহিনীর গঠন যুদ্ধাস্ত নির্মাণকৌশল ও নেতৃত্ব সর্বক্ষেত্রে ব্যাপক পরিবর্তন ঘটে, মধ্যযুগে সামরিক বাহিনীতেও তীর ধনুক,বর্শা,হাতুড়ি,কোঠার ছিল অন্যতম কিন্তু চতুর্দশ হতে ক্রমশ তৈরি হয় বন্দুক পিস্তল, কামান ইত্যাদি যুদ্ধের চেহারা পুরোপুরি পাল্টে যায় ৷

এই সময় বারুদের আবিষ্কার সামরিক ক্ষেত্রে এক বিপল পরিবর্তন আনে ৷ সামরিক বিপ্লবের পরিবর্তনের সাথে সাথে নতুন মানচিত্র, কম্পাস ইত্যাদির ব্যবহার সামরিক অভিযানে যুগান্তর আনে । শুধু সামরিক বিপ্লবের ক্ষেত্রেই নয় চিকিৎসা ও বিজ্ঞানের যুগে আমূল পরিবর্তন সাধিত হয় । এই যুগে ভেষজ চর্চার সঙ্গে চিকিৎসার ক্ষেত্রেও উন্নতি পরিলক্ষিত হয় ৷ শুধু তাই নয় কৃত্রিম অঙ্গস স্থাপন শুরু হয় । এই পর্বের উল্লেখযোগ্য চিকিৎসাগণ গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন উইলিয়াম হার্ভে শরীরের রক্ত সঞ্চালনবিদ্যার সূত্রপাত করেন, বৃটেনের রয়েল সোসাইটি, ফ্রান্সের রয়েল একাডেমি ইত্যাদি ন্যায় বিখ্যাত বিজ্ঞান চর্চা কেন্দ্র গড়ে ওঠে ৷

বিজ্ঞান বিপ্লব যুগে মানুষের চেতনা জগতে নতুন পরিবর্তন সাধিত হয় ৷ মহাকাশ বিজ্ঞানের ক্ষেত্রেও টলেমির পৃথিবী কেন্দ্রিক মহাবিশ্বের তত্ত্বকে সম্পূর্ণ ভুয়া প্রমাণিত করে নিকোলাস কোপার্নিকাস সূর্যকেন্দ্রিক মহাবিশ্বের তথ্য প্রবর্তন করেন ৷ কোপার্নিকাসের এই তথ্য প্রচার করে বিজ্ঞানী ব্রুনো ধর্ম দ্রোহিতার অপরাধে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত হয় ৷ তবে মহাকাশ বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে এক যুগান্তকারী দিক নির্ণয় করেন ইতালির পাদুয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক গ্যালিলিও গ্যালিলি ৷ তিনি দুখানি বিজ্ঞান বিষয়ক গ্রন্থ রচনা করেন যথা "Dialogues on two new Science" এবং "Dialogues concerning the two chif world system" ৷

বিজ্ঞান বিপ্লবের যুগে যে ক্ষেত্রটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন সাধিত করেছিল তা হল পদার্থবিজ্ঞান । এ বিষয়ে আর্কিমিডিস, সাইমন সহ একাধিক বিজ্ঞানীর নাম করা যেতে পারে ৷ চুম্বক এবং কম্পাসের উদ্ভাবন এই যুগে বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে এক বিশেষ আবর্ত সৃষ্টি করেন । তবে পদার্থ বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে যার নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা আছে তিনি হলেন জগৎ বিখ্যাত বিজ্ঞানের স্যার আইজ্যাক নিউটন ৷ তিনি তার বিখ্যাত গ্রন্থ 'প্রিন্সিপিয়া ম্যাথমেটিকা' গ্রন্থটির মহাকাশ তত্ত্বের যে ব্যাখ্যা প্রদান করেন তাই ইতিহাসে এক দিক নির্দেশিকা হিসাবে আজও চিহ্নিত হয়ে আছেন ৷ পঞ্চদশ শতকে পিথাগোরাসের অংক শাস্ত্র, ইউক্লিডের জ্যামিতি আর্কিমিডিসের সূত্রাবলী নতুন করে বৃহত্তর আঙ্গিকে চর্চিত হতে শুরু হয় ।

 উইলিয়াম গিলবার্টের ডি ম্যাগনেটের ডায়াগ্রাম , পরীক্ষামূলক বিজ্ঞানের একটি অগ্রণী 1600 কাজ

 বিজ্ঞান বিপ্লবের ফলে উদ্ভিদবিদ্যা, প্রাণিবিদ্যা,রসায়ন স্বাস্থ্য,ত্রিকোণমিতি, গণিত নোবিদ্যা বিজ্ঞানের সকল সাক্ষাতে অভিনব বিকাশের পরিপেক্ষিতে কেউ কেউ এই পর্যায়কে বিজ্ঞান বিপ্লবের যুগ বলে বর্ণনা করে থাকেন ৷ তবে কেউ কেউ এই বক্তব্য মানতে অস্বীকার করেছেন ,তাদের মতে বিজ্ঞান বিপ্লব কোন হঠাৎ ঘটে যাওয়া বৈপ্লবিক নাটকীয় ঘটনা নয় ৷ দীর্ঘ বিবর্তনের মধ্যে দিয়ে এটি সংঘটিত হয়েছিল ৷ তবে আলোচ্য পর্বে বিজ্ঞান চর্চা বিশ্ববিদ্যালয়ের চার দেয়ালের মধ্যে আবদ্ধ না থেকে বেরিয়ে এসে সাধনের মধ্যে আগ্রহ সঞ্চার করে ৷ এই সময় মানুষের জিজ্ঞাসা মন বারেবারে বিজ্ঞানকে আশ্রয় করে কুসংস্কারের পরিবর্তে বিজ্ঞানমনস্কতা বিকশিত হতে থাকে ৷ ধর্মবিশ্বাসের বহুবস্ময় ভ্রান্ত বলে প্রমাণিত হয় ৷ তাহলে বিজ্ঞান চর্চা এক ধর্মনিরপেক্ষ পথ খোঁজার চেষ্টা করে সব দিক থেকেই বিজ্ঞানের এই পরিবর্তন বিজ্ঞান বিপ্লব হিসাবে চিহ্নিত হয়ে আছেন ।

About the author

Irisha Tania
"আমি সেই মেয়ে, যে শব্দে বাঁচে। কলম আমার অস্ত্র, আর কাগজ আমার স্বপ্নের আকাশ। প্রতিটি অনুভব, প্রতিটি চিন্তা আমি সাজিয়ে রাখি অক্ষরের গাঁথুনিতে। কখনো গল্পে, কখনো কবিতায়, আবার কখনো নিঃশব্দের ভেতরে। আমি লিখি, কারণ লেখার মাঝে আমি নিজেকে খুঁজে পাই। …

Post a Comment

🌟 Attention, Valued Community Members! 🌟