দ্বিতীয় পুলকেশীর কৃতিত্ব আলোচনা কর
দ্বিতীয় পুলকেশীর কৃতিত্ব আলোচনা কর
ছোটো কাকা মঙ্গালেশকে পরাজিত ও নিহত করে প্রথম কীর্তিবর্মার পুত্র দ্বিতীয় পুলকেশী বাদামির চালুকা সিংহাসনে বসেন। তাঁর তৃতীয় রাজ্যবর্ষের হায়দরাবাদ তাম্রশাসন অনুযায়ী ৬১১ খ্রিস্টাব্দের কোন সময় তিনি রাজপদ গ্রহণ করেন। পুলকেশী 'সত্যাশ্রয়', 'বল্লভ', 'পৃথিবীবল্লভ', শ্রীপৃথিবীবল্লভ ইত্যাদি বিভিন্ন অভিধায় তিনি ভূষিত হয়েছেন। তাঁর পুত্রদের লেখমালায় তিনি মহারাজাধিরাজ। অসামান্য সামরিক দক্ষতার তিনি অধিকারী। ছিলেন। যদিও তাঁর রাজত্বের প্রথম পর্ব বিভিন্ন কৃতিত্বে সমুজ্জ্বল, তবে দুর্ভাগ্যক্রমে পরাজয় ও অপমানের গ্লানির মধ্য দিয়ে তাঁর রাজত্বের পরিসমাপ্তি ঘটে। ভারত ইতিহাসে একাধারে তিনি বল্লভরাজ পরমেশ্বর ও ভাগ্যাহত পরাজিত নায়ক।
সিংহাসন আরোহণ করার পরেই চালুক্য রাজ্যে শান্তি-শৃঙ্খলা স্থাপন করতে দ্বিতীয় পুলকেশী কৃতসংকল্প হন। কিন্তু তাঁর এ কাজে প্রধান অন্তরায় হয়ে দাঁড়ায় আল্পায়িক ও গোবিন্দ নামে দুজন রাজনৈতিক ভাগ্যান্বেষী। তিনি তাদের নিজপক্ষে করে নিয়ে বাদামিকে বিপদমুক্ত করেন। কদম্বদের উচ্ছেদ করে তিনি আলুপ ও গঙ্গাদের বিরুদ্ধে অস্ত্রধারণ করেন। তাঁরা সম্ভবত কদম্বদের মিত্র ছিলেন। অবশ্য পুলকেশীর সঙ্গে দুর্বিনীত নামক গঙ্গরাজার কন্যার বিবাহজাত সন্তান প্রথম বিক্রমাদিত্য। এরপর তিনি কোঙ্কণের মৌর্যদের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান পরিচালনা করেন। মৌর্য রাজধানী পুরী চালুক্যদের অধিকৃত হয়। বর্তমান মুম্বই শহরের এলিফ্যান্টা দ্বীপই সম্ভবত প্রাচীন পুরী। দক্ষিণ ভারতের পশ্চিমাংশে দিগ্বিজয় করে পুলকেশী উত্তরদিকে অগ্রসর হন।
উত্তরের লাট, মালব ও গুর্জররা একে একে চালুকাদের বশ্যতা স্বীকার করেন। লাট ও গুর্জরদের আনুগত্য লাভের ফলে দক্ষিণ গুজরাটে পূলকেশীর আধিপত্য সুপ্রতিষ্ঠিত হয়। অবশ্য মালব পুলকেশীর প্রভাবাধীন ছিল কিন্তু রাজাভুক্ত ছিল না। এরপর পুলকেশীর কাতা বিষুবর্ধনকে রাজ্য দিয়ে সসৈন্যে পূর্ব দক্ষিশাপথ বিজয়ে অগ্রসর হন। কোশল রাজ বিনাযুদ্ধে আত্মসমর্পণ করে। বেশী নৃপতিও পরাজয় বরণ করে। বিন্ধুকুন্ডি রাজ্যের দক্ষিণে পল্লবরাজ্যের প্রথম মহেন্দ্রবর্মীর বিরুদ্ধে অভিযানের গৌরবময় ব্যাখ্যা আইহোল প্রশস্তিতে স্পষ্ট। একইসঙ্গে দ্বিতীয় নন্দীবর্মার কাশাকুড়ি তাম্রশাসনে এই সাফল্যের সমর্থন আছে। অর্থাৎ, প্রথম মহেন্দ্রবর্মার বিরুদ্ধে সমরাভিযানে পুলকেশী পল্লব রাজধানীর অতি নিকটে এলেও কান্ডী অধিকার করেননি। তবে এ দাবির সমর্থক রবিকীর্তি নন।
দ্বিতীয় পুলকেশীর রাজত্ব পর্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হল পুষ্যভূতিরাজ শিলাদিতা হর্ষবর্ধনের সঙ্গে সশস্ত্র সংঘর্ষ। আইহোল প্রশস্তিতে বলা হয়েছে, নর্মদা তীরে দ্বিতীয় পুলকেশী হর্ষবর্ধনের বিরুদ্ধে প্রবল প্রতিরোধ রচনা করেন, হর্ষবর্ধনের প্রচুর রণহস্তী মারা যায়, তিনি ভীত সন্ত্রস্ত হন। ড. রমেশচন্দ্র মজুমদারের ব্যাখ্যানুযায়ী এই যুদ্ধ ঘটনার ফল ছিল অমীমাংসিত। তবে হর্ষবর্ধন ও দ্বিতীয় পুলকেশীর নিরোধের কারণ ছিল বিভিন্ন। কারও মতে, চালুকারাজের পণ্যশক্তির মিত্রজোট যা নবসারী তামশাসনে সমর্থিত। হর্ষবর্ধন ও দ্বিতীয় পুলকেশীর সংঘর্ষ তারিখ সম্পর্কে নীলকণ্ঠ শাস্ত্রী হায়দরাবান তামশাসনানুযায়ী ৬১২ খ্রিস্টাব্দের কথা বলেছেন। এসব অভিযান সফল হলেও তাঁর পূর্ব লাক্ষিণাত্য অভিযান/বিজ্ঞলা অসম্পূর্ণ ছিল। ৬৩১ খ্রিস্টাব্দে যদিও বেশী অঞ্চলে চালুক্য আধিপত্য সুপ্রতিষ্ঠিত হয়।
রাজত্বের শেষ পর্বে দ্বিতীয় পুলকেশী পুনরায় পল্লব রাজশক্তির সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িত হন। এ সংঘর্ষ সম্পর্কে চালুকালেখ নীরব থাকলেও পল্লবলেন সোচ্চার। পল্লবলেখতে ঘোষিত হয়েছে, পরিশয়ল, মণিমঙ্গালম্, শূরমার প্রভৃতি স্থানে দ্বিতীয় পুলকেশী নরসিংহবর্মীর কাছে বার বার পরাজিত হয়েছে। মণিমতালম্ যে কাল্টীপুরমের ৩২,১৮০ কিমি পূর্বে অবস্থিত তা সুনিশ্চিত। তাই দ্বিতীয় পুলাকেশীর দ্বিতীয় অভিযান ব্যর্থ হয়েছিল। বলেই মনে করা হয়। প্রথম নরসিংহবর্মার বিরুদ্ধে যুদ্ধে দ্বিতীয় পুলকেশী চরম ব্যর্থ হন।। বাদামি শহরের কেন্দ্রস্টালে প্রাপ্ত প্রস্তরলেখে নরসিংহবর্মী বাতাপী জয় করে 'ব্যতাপীকোন্ড' বা 'বাতাপী বিজয়ী' অভিধা গ্রহণ করেন।