রাজপুত জাতির উৎপত্তি এবং ভারতীয় জীবনে তাদের অবদানের কথা উল্লেখ কর
ভারতের ইতিহাসে ৭১২ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১১৯২ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত সময়কাল রাজপুত যুগ নামে পরিচিত। এই সময়ের মধ্যে উত্তর ভারতে বিভিন্ন রাজপুত রাজবংশের উত্থান ঘটে। এগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল গুজরাটের চালুক্য বংশ, আজমির ও দিল্লির চৌহান বংশ, কনৌজের গহড়বাল বংশ, বুন্দেলখন্ডের চান্দের বংশ, মালবের পারমার বংশ প্রভৃতি।
রাজপুত রাজা ও রাজবংশের উত্থান
চতুর্থ বিগ্রহরাজের আমলে আজমীরের চৌহান বংশ একটি শক্তিশালী জাতিতে পরিণত হয়। তিনি দিল্লি, পূর্ব পাঞ্জাব, দক্ষিণ রাজপুতানা প্রভৃতি অস্থল জয় করে চৌহান আধিপত্যের প্রসার ঘটান। এই বংশের শেষ শাসক তৃতীয় পৃথ্বীরাজ কালিঞ্জর, আনহিলবার, রোহিলখও প্রভৃতি অঞ্চল জয় করেন। তিনি ১১১১ খ্রিস্টাব্দে তরাইনের প্রথম। যুদ্ধে গজনীর মহম্মদ মুরির আক্রমণ প্রতিহত করলেও ১৯৯২ খ্রিস্টাব্দে তরছিনের দ্বিতীয় যুদ্ধে তাঁর কাছে পরাজিত হন।
ভারতে রাজপুত রাজবংশগুলির মধ্যে অলাতম ছিল যুক্তরাষ্ট্রের চালুকা বংশ। এদের রাজধানী হিল আনহিলবার। চালুকরগণ আজমীরের চৌহানদের সঙ্গে দীর্ঘ সংগ্রামে লিপ্ত থাকার ফলে তাদের শক্তি হ্রাস পায়। এই বংশের শ্রেষ্ঠ রাজা ছিলেন জয়সিংহ।
গাহড়বাজ বংশীয় চন্দ্রদের প্রতিহার বংশের পতন ঘটিয়ে কনৌজে ওই বংশের শাসন প্রতিষ্ঠা করেন (১০৯০ খ্রি.)। এই বংশের শ্রেষ্ঠ রাজা গোবিন্দাদ্রে উত্তরপ্রদেশ ও বিহারের বিস্তীর্ণ অঞ্চল নিজ অধিকারে আনেন। রাজপুত পাহড়বাজ বংশের শেষ রাজা জয়চন্দ্র গজনীর মহম্মদ ঘুরীর হাতে পরাজিত ও নিহত হন (১১৯৮ খ্রি.)।
যশোবমন খ্রিস্টীয় নবম গতকে বুন্দেলখণ্ডের চান্দের বাশের প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি দিল্লির চৌহান বংশীয় পৃথ্বীরাজকে পরাজিত করেন। এ বংশের উল্লেখযোগ্য শক্তিশালী রাজা ছিলেন পরমাদদেব এবং শের রাজা ছিলেন পেরামল। চাপের বংশীয় রাজাদের আমলে নির্মিত খাজুরাহোর স্থাপত্য-সুষমামণ্ডিত মন্দিরগুজি শিল্পরসিকদের মনে আজও বিশ্বয় সৃষ্টি করে।
খ্রিস্টীয় দশম শতকে গোদাবরী ও নর্মদা নদীর মধ্যবর্তী অঞ্চলে রাজা লক্ষ্মণ চেদী রাজবংশের প্রতিষ্ঠা করেন। অবশ্য পরবর্তীকালে পারমার নামে অপর একটি রাজপুত বংশ পৌদের রাজা অধিকার করে নেয়।
খ্রিস্টীয় একাদশ শতকে প্রতিহার ও সৌ রাজ্যের উপর পারমার বংশের শাসন প্রতিষ্ঠিত কার হয়। এই বংশের শ্রেষ্ঠ রাজা ছিলেন ভোজ (৯০০৮৮-১০৮০ এন্ড খ্রি.)। তিনি ছিলেন সুদক্ষ যোদ্ধা, সুশাসক ও সংস্কৃতির অনুরাগী।
উপরিউক্ত রাজপুত শক্তিগুলি ছাড়াও আরও কিছু কিছু রাজপুত শক্তির অভিয় ছিল। এদের মধ্যে অন্যতম হিল মধ্যপ্রদেশের জনবলপুরের কলচুরি বাশ রাজশানের কামিয়াবাড়ে সোলাঙ্কি বংশ প্রভৃতি।
রাজপুত যুগে বিভিন্ন রাজপুত রাজ্যও নিজেদের মধো ও অন্য রাজাগুলির সঙ্গে বিরোধে জড়িয়ে শক্তিক্ষয় করে। প। ঐ সুযোগে বহিরাগত তুর্কিরা উত্তর ভারত আক্রমণ করে এবং একে একে রাজপুত শক্তিগুলির অভিন্ন সুপ্ত হতে থাকে।