মার্শাল পরিকল্পনা সম্পর্কে কি জানো আলোচনা কর
ট্রুম্যান নীতির সাফল্যে উৎসাহিত হয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আরও ব্যাপকভাবে ইউরোপীয় রাষ্ট্রগুলিকে সাহায্য দানের পরিকল্পনা গ্রহণ করতে থাকে ৷ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অব্যাহতির পর ইউরোপের প্রায় সর্বোচ্চ অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সংকট প্রবল হয়ে ওঠে ৷ অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সংকট বলতে যুদ্ধে যোগদান, উৎপাদন হ্রাস, বিভিন্ন কলকারখানা ইত্যাদিকে চিহ্নিত করেছেন সেই সঙ্গে রাজনৈতিক ক্ষেত্রে সংকট বলতে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে কমিউনিস্ট সমাজতন্ত্রের প্রভাব কে বোঝায় ৷ এই পরিস্থিতিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র উপলব্ধি করেন যে সাম্যবাদের গতি রোধ করতে না পারলে পৃথিবীতে তাদের অস্তিত্ব বিপন্ন হবে তাই পশ্চিম ইউরোপে রুশ প্রভাব বিনষ্ট করতে এবং অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে পশ্চিম ইউরোপ পুনর্গঠন এর উদ্যোগ মার্কিন পররাষ্ট্র সচিব জন মার্শাল ইউরোপীয় পুনর্জীবন পরিকল্পনার কথা ঘোষণা করেন এই পরিকল্পনায় মার্শাল পরিকল্পনা নামে পরিচিত ৷
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিদেশ মন্ত্রী জর্জেসি মার্শাল ১৯৪৭ সালের ৫ই জুন হারবার বিশ্ববিদ্যালয়ের এক বক্তৃতায় ইউরোপীয় অর্থিক পুনর্জীবন এর জন্য মার্কিন নীতি ব্যাখ্যা করে বলেন ন,"পশ্চিম ইউরোপের দরিদ্রতা হতাশা বেকারত্ব ও সামান্য অর্থনৈতিক সংকট নিরসনের জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অর্থ সাহায্য করবে , প্রস্তাবে বলা হয় যে সাহায্য গ্রহণকারী দেশকে মূল মার্কিন পরিকল্পনা অনুযায়ী অর্থ বন্টন করতে হবে এই সাহায্য প্রাপ্ত দেশগুলির রাজত্ব মার্কিন পরিকল্পনায় স্বীকৃতি হবে ।"
তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিছক মানবতার খাতিরে এই পরিকল্পনা গ্রহণ করেনি ৷ তা প্রকৃত উদ্দেশ্য ছিল
- পূর্ব ইউরোপের সাম্যবাদের প্রচার হওয়া এর আওতা থেকে পশ্চিম ইউরোপকে রক্ষা করা
- এই পরিকল্পনা রূপায়ণের মাধ্যমে ইউরোপের দেশ গুলিতে মার্কিন প্রাধান্য তাপন সুনিশ্চিত করা
- পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলোতে অর্থনৈতিক উন্নতি ঘটিয়ে এক বিশাল শক্তিশালী ও আন্তর্জাতিক বাজার গড়ে তোলা
- অর্থ সাহায্যকারী গ্রহণকারী রাষ্ট্রগুলিকে নিয়ে মার্কেটিং রাষ্ট্র জোটের শক্তি বৃদ্ধি বাড়ানোর
- অর্থ সাহায্যকারী দেশগুলির অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক নীতি নির্ধারণের হস্তক্ষেপ করে মার্কিন আধিপত্য সুপ্রতিষ্ঠিত করা ৷
এই পরিকল্পনার প্রতিক্রিয়া স্বরূপ ১৯৪৭ সালের রাশিয়া তার আনুগত্য দেশ গুলিকে নিয়ে 'কমিউনিস্ট ইনফরমেশন ব্যুরো' গঠন করেন ৷ ইংল্যান্ড,ফ্রান্স,রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীতে এক সভায় বসে সোভিয়েত বিদেশ মন্ত্রী মলটভ এই প্রস্তাবের তীব্র সমালোচনা করে বলেন," এর ফলে সাহায্য গ্রহণকারী দেশগুলির সার্বভৌমত্ব বিনষ্ট হবে ৷ এই দেশগুলোর ওপর মার্কিন এবং বাণিজ্য সংস্থার শোষন শুরু হবে এবং দেশগুলোর অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করবেন ৷ তাই তিনি এই পরিকল্পনাগুলিকে ডলার সাম্রাজ্যবাদ বলে অভিহিত করেন ৷
এই পরিকল্পনা অনুসারে ১৯৪৭ সালে মার্কিন কংগ্রেস এক আইন পেশ করেন ইউরোপের পুনজীবনের পরিকল্পনা করে ১৬ টি দেশ এই পরিকল্পনা গ্রহণ করেন ৷ যাদের মধ্যে অন্যতম হলো ইংল্যান্ড,ফ্রান্স,ইতালি, তুরস্ক প্রভৃতি ৷ তাদের আর্থিক পুনর জীবনের জন্য ১৯৪৮ থেকে ৫১ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ব্যয় করেন ১২০০ কোটি ডলার ৷ এবং রাশিয়ার সহ ৮ টি দেশ এই পরিকল্পনা গ্রহণ থেকে বিরত থাকে যেমন,- বুলগেরিয়া,পোল্যান্ড, হাঙ্গেরি প্রভৃতি ৷ ১৯৫২ সালে এই পরিকল্পনা সমাপ্তি ঘটে ৷
অবশেষে এই কথা বলা যায় মার্শাল প্ল্যানের উদ্দেশ্য ব্যর্থ হননি, এই পরিকল্পনার মাধ্যমে ইউরোপের অর্থনীতিতে নবজীবনের সূচনা হয়, ইউরোপ অর্থনৈতিক মন্দাকে অতিক্রম করতে পেরেছিল, সাহায্য প্রদানকারীর সব দেশেই উৎপাদন রপ্তানি বৃদ্ধি পায় ,হ্রাস পায় মুদ্রাঅর্থনৈতিক স্ফৃতি ৷ বিভিন্ন দেশে কমিউনিস্টদের প্রভাব হ্রাসপায় কিন্তু এর সত্ত্বেও ঠান্ডা লড়াইয়ের তীব্রতা আরো বৃদ্ধি পায় ৷ আর মার্শাল প্ল্যানের সাফল্যে উল্লেখযোগ্য উদাহরণ হল বর্তমান বিশ্ব ৷