মেকলে মিনিট কি অথবা মেকলে মিনিট সম্পর্কে আলোচনা কর অথবা মেকলে মিনিট সম্পর্কে টীকা লেখ

মেকলে মিনিট কি অথবা মেকলে মিনিট সম্পর্কে আলোচনা কর অথবা মেকলে মিনিট সম্পর্কে টীকা লেখ

 মেকলে মিনিট কি অথবা মেকলে মিনিট সম্পর্কে আলোচনা কর অথবা মেকলে মিনিট সম্পর্কে টীকা লেখ

স্যার টমাস ব্যাবিংটন এডওয়ার্ড মেকলে ছিলেন একজন খ্যাতনামা ব্রিটিশ পন্ডিত ঐতিহাসিক সাহিত্যিক এবং হুইগ দলের রাজনৈতিক নেতা ও একাধারে লর্ড উইলিয়াম বেন্টিংকের আইন সচিব এবং 'কমিটি অব পারমিক ইনস্ট্রাকশন'- এয় সভাপতি, তিনি প্রাচ্যশিক্ষার পরিবর্তে এদেশে পাশ্চাত্য শিক্ষার বিষয়ে যে বিখ্যাত প্রস্তাব পেশ করেন (১৮-৩৫ খ্রিঃ ২ সোমুয়ারি) তা 'মেকলে মিনিটস' নামে পরিচিত । তিনি বলেছিলেন,"একটি ভালোই ইউরোপীয় গ্রন্থাগারের একটি পাক ভারত বা আরবের সমগ্র সাহিত্যের সমকক্ষ।"

ইংল্যান্ডের হুইগপন্থী দলের সদস্য লর্ড উইলিয়াম বেন্টিং বেন্থামের উপযোগবাদে বিশ্বাস করতেন, তিনি মনে করতেন যে, ইংরেজি ভাষার মাধ্যমে ভারতে পাশ্চাত্য জ্ঞানবিজ্ঞানের প্রসার ঘটাতে পারলে ভারতবাসীয় আর্থ- সামাজিক, সাংস্কৃতিক মান উন্নত করা সম্ভব । পাশ্চাত্য শিক্ষায় সুষ্ঠু প্রেসারের লক্ষ্যেই লর্ড মেকলে ভারতের বড়লাট লর্ড উইলিয়াম বেন্টিং এর সভাপতিত্বে গঠন করেন 'কমিটি অব পাবলিক ইনস্ট্রাকশন'(১৮২৮-১৮৩৫খ্রিঃ)

মেকলে তৎকালীন বড়লাট লর্ড উইলিয়াম বেন্টিং কে বোঝাতে সক্ষম হয়েছিল যে বিদ্যালয়ে মাতৃভাষা শিক্ষা গ্রহণে ষষ্ঠ বর্ষ থেকে ইংরেজি ভাষাকে ভারতের উচ্চ শিক্ষার প্রসারের ভাষা মাধ্যম হিসেবে চালু করা উচিত ৷ এর ফলে এদেশে এমন কিছু ভারতীয় জনগোষ্ঠী তৈরি হবে যারা রক্তে ও বর্ণে হবে ভারতীয় কিন্তু রুচি,মত,নৈতিকতা এবং বুদ্ধিমত্তায় হবে ইংরেজ ৷

মেকলের মূল বক্তব্য ছিল ইংরেজি ভাষার মাধ্যমে ভারতবাসীকে ইউরোপীয় দর্শন, সাহিত্য ও জ্ঞানবিজ্ঞানের সঙ্গে পরিচিত করে তোলা, কমিটি অব পাবলিক ইনস্ট্রাকশনের সভাপতি হিসাবে মেকলে তাঁর বিখ্যাত প্রস্তাব বড়োলাটের কাছে পেশ করে বলেন-

  1. পাশ্চাত্য শিক্ষাকে প্রথম উচ্চমধ্যবিত্তদের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে হবে,
  2.  উচ্চবিত্ত ও মধ্যবিত্ত শ্রেনির মধ্যে ইংরেজি শিক্ষার প্রসার ঘটলে তা নিম্নমুখী পরিশ্রুত নীতি অনুসারে ধীরে ধীরে ভারতবাসীর মধ্যে ছড়িয়ে পড়বে।
  3. ইংরেজি শিক্ষাই একমাত্র পারবে অঞ্জ ও কুসংস্কারাছন্ন ভারতবাসীকে শিক্ষায় আলোয় নিয়ে আসবে ৷

ভারতের পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসার নিয়ে পাবলিক ইনস্ট্রাকশন কমিটির সদস্যরা দুভাগে ভাগ হয়ে যান ৷ প্রাচ্যবাদী বা ওরিয়েন্টালিস্ট, এদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন যথা- উইলসন, কোলব্রুক, এইচ. টি. প্রিন্সেপ প্রমুখ চান ভারতীয় দর্শন ও সাহিত্যকে উন্নত করা হোক, অপরদিকে পাশ্চাত্যবাদী বা অ্যাংথিসিস্টরা, এদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন যথা- আলেকজান্ডার ডাফ, সান্ডার্স, কেয়াভিন প্রমুখ ৷ যারা ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষাব্যবস্থার প্রসার ঘটাতে চেয়েছিলেন ৷

মেকলে সংস্কৃত কলেজসহ সকল প্রাচ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি বন্ধ করে দেওয়ার প্রস্তাব দিলেও তা গ্রহন করা হয়নি, তবে তাঁর প্রস্তাব মেনেই বেন্টিঙ্ক ইংরেজি শিক্ষাকে সরকারি নীতিরূপে ঘোষণা করেন (১৫৩৫ খ্রিঃ-৭ মার্চ) এরপরেই

  1. কলকাতায় মেজিকম কলেজ (১৮৩৫), মুয়কিতে বুরকি ইঞ্জিনিয়ারি কলেজ, মাদ্রাজে মাদ্রাজ ইউনিভার্সিটি হাইস্কুল, বোম্বাইতে এলফিনস্টোন ইন্সটিটিউশন গড়ে ওঠে,
  2.  সরকারি কাজে ফার্সির পরিবর্তে ইংরেজি ভাষা প্রচলিত হয় (১৮৩৭ খ্রিঃ),
  3. ইংরেজি ভাষায় দক্ষ ব্যক্তিরা সরকারি কাজে অগ্রাধিকার পাবে বলে ঘোষনা করা হয় ।
  4. ইংরেজি ভাষার ওপর বেশি গুরুত্ব দেওয়ায় মাতৃভাষায় শিক্ষাদান পদ্ধতি অবহেলিত হয়।

মেকলে মনে করেন প্রথম পর্যায়ে ভারতের উচ্চ মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মধ্যে ইংরেজি ও পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসার ঘটাতে হবে ৷ জল যেভাবে উপর থেকে নিচের দিকে প্রবাহিত হয় তেমনি পরবর্তীকালে এই উচ্চ ও মধ্যবিত্ত শ্রেণীর সহায়তায় পাশ্চাত্য শিক্ষা কমে ভারতের সাধারণ ও নিম্ন মধ্যবিত্তদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়বে মেকলের এই নীতি 'ক্রমনিম্ন প্রস্তুতি নীতি' বা 'চুঁইয়ে পড়া নীতি (Downward filtration theory) নামে পরিচিত ৷

মেকলে মিনিটস্ ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসারে নবদিগন্ত উন্মোচন করে । সমাজের উচ্চবর্গের ভারতীয়দের মাধ্যমে আধুনিক পশ্চাত্য শিক্ষা চুঁইয়ে পড়ে । সমাজের নিম্নবর্গের মানুষের কাছে না পৌঁছালেও নীচু তলায় আধুনিক চিন্তাধারার অনুপ্রবেশ ঘটেছিল। ডক্টর অমলেশ ত্রিপাঠী বলেছেন যে সমসাময়িক কালের উচ্ছ্বাসিত অভিনন্দন লাভ করলেও মেকলে ঐতিহাসিক খ্যাতি আজও নিষ্প্রভ ৷...এক শতাব্দী অতিক্রান্ত হয়নি, মেকলে স্তুতির সপ্তম স্বর্গ হতে নিন্দার পঙ্কশয্যায় নেমে এসেছেন ৷"

সম্ভাব্য প্রশ্নঃ- 
  • মেকলে মিনিট কি 
  • মেকলে মিনিট কি প্রশ্ন 
  • মেকলে মিনিট pdf 
  • মেকলে মিনিট টিকা 
  • মেকলে মিনিট এর গুরুত্ব কি 
  • মেকলে মিনিট কি মান ৫/১০ 
  • মেকলে মিনিট কাকে বলে

About the author

Irisha Tania
"আমি সেই মেয়ে, যে শব্দে বাঁচে। কলম আমার অস্ত্র, আর কাগজ আমার স্বপ্নের আকাশ। প্রতিটি অনুভব, প্রতিটি চিন্তা আমি সাজিয়ে রাখি অক্ষরের গাঁথুনিতে। কখনো গল্পে, কখনো কবিতায়, আবার কখনো নিঃশব্দের ভেতরে। আমি লিখি, কারণ লেখার মাঝে আমি নিজেকে খুঁজে পাই। …

Post a Comment

🌟 Attention, Valued Community Members! 🌟