বক্সারের যুদ্ধের গুরুত্ব আলোচনা কর
বক্সারের যুদ্ধের গুরুত্ব :-
সিরাজউদ্দৌলার পতনের পর কোম্পানি প্রথমে মীরজাফরকে বাংলার নবাব পদে বসায় এবং প্রচুর পরিমাণে অর্থ ও সম্পদ লাভ করে । মীরজাফর নবাব পদ লাভের জন্য কোম্পানিকে ক্ষমতার অতিরিক্ত পরিমাণ অর্থ প্রদানের প্রতিশ্রুতি দেন । নবাব পদ লাভের পর মীরজাফর কোম্পানিকে প্রতিশ্রুতি মতো অর্থ প্রদানে অক্ষম হন । অপরদিকে কোম্পানি নবাবের প্রশাসনিক কাজে হস্তক্ষেপ শুরু করলে মীরজাফর ওলন্দাজদের সঙ্গে যোগাযোগ শুরু করেন । এই অবস্থায় কোম্পানি মীরজাফরকে সরিয়ে মীরকাশিমকে বাংলার নবাব পদে বসায় । কিন্তু কিছুদিনের মধ্যে মীরকাশিমের স্বাধীনভাবে শাসন কার্য পরিচালনা, সেনা বাহিনীর সংস্কার, মুর্শিদাবাদ থেকে মুঙ্গেরে রাজধানী স্থানান্তর,দেশীয় বণিকদের বিনা শুল্কে বাণিজ্য করার অধিকার দেওয়া ইত্যাদি ঘটনাকে কেন্দ্র করে কোম্পানির সঙ্গে বিরোধ ঘটে ।যার ফলশ্রুতি হল ১৭৬৪ খ্রিস্টাব্দে বক্সারের যুদ্ধ। এই যুদ্ধে ইংরেজ শক্তির বিরুদ্ধে বাংলার মীরকাশিম, অযোধ্যা নবাব সুজাউদ্দৌলা, এবং দিল্লির সম্রাট শাহ আলমের মধ্যেকার ত্রিশক্তি জোট অংশগ্রহণ করেছিল । কিন্তু শেষ পর্যন্ত ইংরেজ বাহিনীর হাতে মীরকাশিম সহ ত্রিশক্তিবাহিনীর পরাজয় ঘটে। এই যুদ্ধের গুরুত্ব গুলি হল ----
- প্রথমত,বক্সারের যুদ্ধ ছিল ভারতের ইতিহাসে এক ভাগ্য নির্ণায়ক যুদ্ধ । এই যুদ্ধের ফলাফল যদি ইংরেজদের প্রতিকূলে যেত তাহলে ভারতের ইতিহাস অন্যরকম ভাবে লেখা হত ।
- দ্বিতীয়ত, পলাশীর যুদ্ধে জিতে কোম্পানি ভারতে ঔপনিবেশিক শাসনের প্রথম ধাপ অতিক্রম করেছিল । কিন্তু বক্সারের যুদ্ধে জিতে কোম্পানি ভারতে ঔপনিবেশিক শাসনকে দৃঢ় ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত করে।
- তৃতীয়ত, বক্সারের যুদ্ধে বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব মীরকাশিমের পরাজয় ঘটায় ব্রিটিশ শক্তিকে বাধা দেওয়ার মতো আর কোনো শাসক রইল না, ফলে বাংলায় কোম্পানির আধিপত্য প্রতিষ্ঠা হল।
- চতুর্থত, বক্সারের যুদ্ধে জিতে কোম্পানি বাংলার আধিপত্যকে দৃঢ় করে উত্তর ভারতের দিকে নজর দেয়। অযোধ্যার নবাব সুজাউদ্দৌলা কোম্পানির অনুগত হন এবং নামসর্বস্ব মোগল বাদশা কোম্পানির দয়ার উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েন। ফলে সমগ্র উত্তর ভারত জুড়ে কোম্পানির আধিপত্যের সূচনা ঘটে।
- পঞ্চমত, বক্সারের যুদ্ধে জয়লাভের পর বাংলার বাণিজ্য ও অর্থনীতির ওপর ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির একচেটিয়া আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয় । বাংলায় কোম্পানির অবাধ অর্থনৈতিক লুণ্ঠন শুরু হয়।
- ষষ্ঠত, বক্সারের যুদ্ধে চরম প্রাপ্তি হিসাবে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি বাংলা, বিহার ও উড়িষ্যায় দেওয়ানি লাভ করেছিল । দেওয়ানি লাভের ফলে এক দিকে বাংলা রাজনীতিতে কোম্পানির কর্তৃত্ব দৃঢ় হয়েছিল অপরদিকে কোম্পানির আর্থিক স্বাচ্ছল্য বহুগুণ বেড়েছিল।
সুতরাং বক্সারের যুদ্ধের পরেই বণিকের মানদন্ড শাসকের রাজদণ্ড রূপে দেখা দিয়েছিল । বক্সারের যুদ্ধে জেতার পর থেকেই ভারতের ইতিহাসে প্রকৃতপক্ষে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের সূচনা হয়।