আদি মধ্যযুগে ইতিহাসের সাহিত্যিক উপাদান ?
আদি মধ্যযুগে ইতিহাসের সাহিত্যিক উপাদান ?
প্রাচীন গ্রিসের ইতিহাস সম্পর্কে জানতে গেলে আমরা হেরোডোটাস ও থুকিটিডিস এর রচিত ইতিহাসের সাহায্য পেয়ে থাকি কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত দুর্ভাগ্যবশত প্রাচীন ভারতের ইতিহাসের সেরূপ লিখিত প্রাধান্য বা আকারের গ্রন্থের অগ্রতুলতা খুবই প্রখর ৷ বিজ্ঞানসম্মত যে ইতিহাস ভারতবর্ষে তার উৎসকাল হলো ব্রিটিশ রাজত্ব ৷ তবে আধুনিক ভারতবর্ষের ইতিহাসবিদ্যা বা যুক্তিসঙ্গত ইতিহাস চর্চা বা পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্বধর্মীর ইতিহাসের ব্যাপক প্রচলন ঘটলেও প্রাচীন ভারতবর্ষের ইতিহাস বোধ বা ইতিহাস চর্চার যে একেবারেই ছিল না তা নয় ৷
আপনি চাইলে এগুলো পড়তে পারেন
Herolands গীত গাওয়ার ভ্রুন আকারে ঐতিহাসিক বিষয় বস্তুর সন্ধান পাওয়া যায়। কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্র খ্রিস্টপূর্ব (তৃতীয় শতক থেকে খ্রিস্টপূর্ব প্রথম শতকে) ইতিহাসের বিষয়বস্তুর ব্যাপক পরিধি উল্লেখ করা হয়েছে এখানে পুরান ইতিবৃও,আখ্যায়িক,ধর্মশাস্ত্র, অর্থশাস্ত্র, ইতিবিদ্যা,ইত্যাদি কে ইতিহাসের বিষয়বস্তুতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে প্রাচীন ভারতের ইতিহাস সম্পর্কীয় বা সময় সম্পর্কেও জ্ঞান প্রদানের ক্ষেত্রে এটি অতি গুরুত্বপূর্ণ স্থান লাভ করেছে আদি মধ্যযুগের ইতিহাসে অন্যতম তথ্যসম্মত গ্রন্থটি হল বাণভট্ট রচিত 'হর্ষচরিত' এই গ্রন্থ থেকে হর্ষবর্ধনের রাজত্বকাল সম্পর্কে জানা যায়। যদিও অনেক ঐতিহাসিক মনে করেন যেহেতু বানভট্ট ছিলেন হর্ষচরিতের পৃষ্ঠপোষকতায় ধন্য তাই হর্ষচরিতে নিরপেক্ষতা সম্পর্কে সন্দেহ থেকে যায়৷
এছাড়াও কাশ্মীরের ব্রাহ্মণ বিলবহন দাক্ষিণাত্যের চালুক্য বংশের রাজা ষষ্ঠ বিক্রমাদিত্যের সভাকবি ছিলেন এবং তার গ্রন্থ 'বিক্রম দেব চরিত' এই সময়কার উল্লেখযোগ্য ঐতিহাসিক উপাদান এই সময়ের কার পাল বংশের শাসকদের বিশেষ করে রামপালের কীর্তিকাহিনী জানার জন্য সন্ধ্যাকার নন্দীর রচিত 'রামচরিত' একটি গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ এছাড়াও আচার্য জয়সিংহ চরিত 'কুমার পাল চরিত' চালুক্য বংশ সম্পর্কে একটি উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ।
আদি মধ্যযুগীয় ইতিহাসের সাহিত্যিক উপাদান গুলির মধ্যে অপর একটি গ্রন্থ হলো হাজার পাঁচ খ্রিস্টাব্দে পদ্মগুপ্ত রচিত "নব শশাঙ্ক চরিত" অন্যতম বিখ্যাত গ্রন্থ। তবে আনুমানিক হাজার ৪৯ থেকে ৫০ খ্রিস্টাব্দে কাশ্মীর এই ইতিহাস রচিত ঐতিহাসিক রচিত গ্রন্থটির গুণমান বিচারে এবং ঐতিহাসিক দিক থেকে সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ এবং চিরাচরিত এই গ্রন্থ এর প্রসঙ্গে এ.এল.ব্যাসাম বলেন - the book is unique as the only attempt at the true history in the whole of surviving Sanskrit literature. এছাড়াও সাহিত্য তো স্থানীয় ভিত্তিতে সোমেশ্বর রচিত 'রাসমেলা' ও কীর্তি কোমুদি এবং বারো চন্দ্র রচিত 'বসন্ত বিলাস' থেকে গুজরাট সম্পর্কিত বহু তথ্য সরবরাহ করেন৷ এই সকল গ্রন্থ গুলি ছাড়াও ভারতে আগত চৈনিক পরিব্রাজ্য হিউয়েন সাঙ্গে রচিত সি -ইউ -কি তাছাড়া আল বিরুনী রচিত তহকক- ই-রিহিম ইত্যাদি হচ্ছে আদি মধ্যযুগীয় ইতিহাস জানার অন্যতম উৎস গ্রন্থ ৷