লেভেলাররা কি যথার্থই গণতান্ত্রিক ছিল? অথবা লেভেলাররা যথার্থই গণতান্ত্রিক ছিল কি?
ইংল্যান্ডের গৃহযুদ্ধের পরবর্তীকালে রাজতন্ত্রে সংঘর্ষ এবং সংকট সৃষ্টি হয় কিন্তু এই সময়কার বিপ্লব, সামাজিক উন্নয়ন বা সংস্কারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ৷ এই সময় গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সঙ্গে লেভেলাররা এক আমূল সংস্কারবাদী দল হিসাবে সক্রিয়ভাবে গড়ে উঠেছিল ৷ পার্লামেন্টের যুদ্ধের অবসানের পর ইংল্যান্ডের ক্রমওয়েলের নেতৃত্বে সামরিক শাসন প্রতিষ্ঠিত হয় ৷ কিন্তু তার প্রতি সামরিক দলের বিশ্বাস নষ্ট হতে শুরু করেন ৷ সামরিক দলের ধারণা ছিল যে ক্রমওয়েলের দ্বারা ব্যাপক কোনো সংস্কারের কার্যকারী করা সম্ভব নয় ৷ এই পরিস্থিতিতে অধীনস্থ সামরিক কর্মচারী ও গরিব জনসাধারণের মধ্যে থেকে লেভেলার নামে একটি দলের উদ্ভব হয় ৷ ঐতিহাসিক ক্রিস্টোফার হিল গবেষণা করে দেখিয়েছেন যে ,"একদিকে বুর্জোয়া বিপ্লব ইংল্যান্ডের প্রগতিশীল করে তোলার পথে উত্তীর্ণ হয়েছিল অন্যদিকে নিম্ন মধ্যবিত্তরা বিভিন্ন দাবি নিয়ে আন্দোলনে নেমেছিল ৷"
আপনি চাইলে এগুলো পড়তে পারেন
১৬২০ থেকে ১৬৫০ খ্রিস্টাব্দ সময়কালে ইংল্যান্ডের মূল্যবৃদ্ধি,বেকারত্ব,করের বোঝা,তামাকের উপর শুল্কধার্য ইত্যাদি কারণে ১৬৪৮ সালে গরীব মানুষেরা আন্দোলনের নামে ৷ এইরকম পরিস্থিতিতে লেভেলররা দ্রুত সেনাবাহিনীর মধ্যে দিয়ে প্রভাব বিস্তার করে এবং সেনাবাহিনীর মধ্যে এক উগ্র গোষ্ঠীর সৃষ্টি হয় যারাই লেভেলার নামে পরিচিত হয় ৷ ১৬৪৯ খ্রিস্টাব্দে ইংল্যান্ডের রাজা দ্বিতীয় চার্লসের প্রানদন্ড হয় চার্লসের প্রানদন্ডের কয়েক সপ্তাহের মধ্যে লেভেলারদের আন্দোলন নতুন মাত্রা ধারণ করেছিল ৷ ১৬৪৮ খ্রিস্টাব্দে "The argument of due people" প্রকাশ করা হয় লিহবার্ন ছাড়াও আরো তিনজন লেভেলার নেতা, সেনাবাহিনীর চারজন উচ্চপদস্থ কর্মচারী, পার্লামেন্টের চারজন সদস্য নিয়ে একটি কমিটি গঠিত হয় ৷ এই কমিটির একটি সংবিধান প্রস্তুত করে এটি ছিল একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ ৷
লেভেলাররা প্রতি দু'বছর অন্তর সংশোধন নির্বাচনের দাবি তুলেছিলেন ৷ তাছাড়াও লেভেলারদের বক্তব্যের মূল কথা হলো জনগণের সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী,জমিদারি শ্রেণি, একচেটিয়া ব্যবসায়ী এবং আইনজীবীরা দেশের প্রচলিত আইন অনুসারে যেসব সুযোগ সুবিধা ভোগ করত তার অবসান ঘটানোই ছিল তাদের লক্ষ্য ৷ অন্যদিকে আইনের চোখে সমান ও অধিকার ও রাজনৈতিক সাম্য প্রতিষ্ঠার দ্বারা মধ্যবিত্ত সম্প্রদায়ের স্বার্থ দুঃখ করায় ছিল তাদের ওপর উদ্দেশ্য ৷ তবে লেভেলাররা বুর্জয়াদের উপর নির্ভরশীল ছিল,পার্লামেন্টের উপর তারা তাদের আধিপত্য বিস্তার করতে পারেননি ৷
লেভেলারদের প্রধান নেতা ছিলেন লিনবার্ন ৷ লিনবার্ন বলেছিলেন যে," সকল মানুষের সমান তাই ক্ষমতাও কৃতিত্বের দিক দিয়ে তাদের মধ্যে কোন বৈষম্য থাকতে পারে না ৷" লেভেলারদের বিশ্বাস ছিল যে সংবিধান লিখিত হলে পার্লামেন্ট সহযোগিতার উপর হস্তক্ষেপ করতে পারে না এই জন্য পার্লামেন্টের ক্ষমতা সীমাবদ্ধ করে সংবিধানের স্থান আইনের উর্ধ্ব স্থাপন করা ৷ একটি লিখিত সংবিধানের দাবি জানানো হয়, এই দিক থেকে লেভেলরা অনেকটাই গণতান্ত্রিক ছিল ৷
ক্রিস্টোফার হিল মনে করেন লেভেলার শ্রমজীবী মানুষদের সঙ্গবদ্ধ করতে পারেনি ৷ বিপ্লব চলাকালীন তাদের ক্ষণস্থায়ী অবস্থান রেডিক্যাল বামপন্থী আন্দোলনকে সফল করে তুলতে পারেননি । লিনবার্ন ও অন্যান্য লেভেলার নেতারা গ্রেপ্তার হওয়ার ফলে লন্ডনে বিক্ষোভ সৃষ্টি হয় কিন্তু এই সময় লিনবার্নকে দেশদ্রোহীতার অভিযোগে অভিযুক্ত করে ১৬৫২ সালে পার্লামেন্ট নির্বাসন দেয় । এর প্রতিবাদস্বরূপ ওড়ারটন সেনাবাহিনীকে সঙ্ঘবদ্ধ করে যুদ্ধ ঘোষণা করেন ৷ ওড়ারটন শেষ পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যান, তবে ১৬৫৯ সালে তিনিও শেষ পর্যন্ত কারারুদ্ধ হন ৷ এইভাবে লেভেলার আন্দোলন ইংল্যান্ডের রেডিক্যাল বামপন্থী আন্দোলন পরিচিত লাভ করেন ৷