হোমরুল আন্দোলন সম্পর্কে টীকা লেখ

হোমরুল আন্দোলন সম্পর্কে টীকা লেখ

হোমরুল আন্দোলন সম্পর্কে টীকা লেখ অথবা, হোমরুল আন্দোলনের উপর একটি টীকা লেখো।

হোমরুল আন্দোলন সম্পর্কে টীকা লেখ

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে ভারতের জাতীয়তাবাদী আন্দোলন একেবারে স্তিমিত হয়ে পড়ে নি । এই সময় কংগ্রেসের নরমপন্থী ও চরমপন্থী গোষ্ঠীর মধ্যে বিবাদের অবসান ঘটে এবং অন্যদিকে জাতীয় কংগ্রেস ও মুসলিম লীগ পারস্পরিক সহযোগিতার সিদ্ধান্ত নেয়। এই অনুকূল পরিবেশে অ্যানি বেসান্ত ও বাল গঙ্গাধর তিলকের নেতৃত্বে পরিচালিত হোমরুল আন্দোলন জাতীয় আন্দোলনকে গতিশীল ও পুনরুজ্জীবিত করে তুলেছিল। আয়ারল্যান্ডের হোমরুল লীগের দৃষ্টান্ত অনুসরণ করে অ্যানি বেসান্ত ও তিলক ভারতে হোমকল লীগ গঠনের প্রস্তাব দেন। এই প্রস্তাবের মূল বক্তব্য হল 'আয়ারল্যান্ডের অনুসরণে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত থেকে ভারতে হোমরুল বা স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠা। জনগণের নির্বাচিত এক দায়িত্বশীল সরকার গঠন এই পরিকল্পনার উদ্দেশ্য ছিল।

আপনি চাইলে এগুলো পড়তে পারেন

হোমরুল লীগের আদর্শ কংগ্রেসের নরমপন্থী নেতাদের মনঃপূত হয়নি। তাই অ্যানি বেসান্ত নিজ দায়িত্বে ১৯১৬ সালের সেপ্টেম্বরে 'হোমরুল লীগ' নামে পৃথক সংস্থা স্থাপন করেন। সমাজসেবা ও শিক্ষা প্রসারের কাজে ইতিপূর্বেই অ্যানি বেসান্ত জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। ১৮৯৩ সালে ভারতে এসে প্রথমে তিনি থিওসোফিকাল সোসাইটির মাধ্যমে শিক্ষা প্রসারের কাজে আত্মনিয়োগ করেন। কিন্তু তিনি বুঝেছিলেন যে, রাজনৈতিক অধিকার ও প্রশাসনিক ক্ষমতা না পেলে ভারতবাসীর প্রকৃত মঙ্গল সাধন সম্ভব নয়। এই জনাই ভারতকে একটি স্ব-শাসিত রাষ্ট্রে পরিণত করা প্রয়োজন।

হোমরুল লীগ প্রতিষ্ঠার কিছুদিনের মধ্যেই বোম্বাই, মাদ্রাজ, কানপুর প্রভৃতি শহরে এর শাখা স্থাপিত হয়। অ্যানি বেসান্ত 'নিউ ইণ্ডিয়া' নামে এক দৈনিক পত্রিকা প্রকাশ করে হোমরুলা আন্দোলনের আদর্শ প্রচার করেন। অন্যদিকে অ্যানি বেসান্তের অনুকরণে বালগম্বাধর তিলক মহারাষ্ট্রে হোমরুল লীগের প্রতিষ্ঠা করেন।

বেসান্ত ও তিলকের প্রতিষ্ঠিত দুটি সংস্থা রাজনৈতিক সংস্কারের দাবি জনপ্রিয় করে তুলতে সক্ষম হয়। তিলক তাঁর 'মারাঠা' ও 'কেশরী পত্রিকা দুটিতে হোমরুল আন্দোলনের আদর্শ প্রচার করতে লাগলেন। ভারতের একপ্রান্ত থেকে অদ্যপ্রাপ্ত পর্যন্ত তিলক পরিক্রমা করেন এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেন। শীঘ্রই তাঁর জনপ্রিয়তা তুঙ্গে ওঠে। 'লোকমান্য' অভিধায় তিনি বন্দিত হলেন এইভাবে অতি অল্প সময়ের মধ্যে অ্যানি বেসান্ত ও তিলকের প্রচেষ্টা সফল হল। এতদিন পর্যন্ত জাতীয় আন্দোলনের পরিধি শহরাঞ্চলের শিক্ষিত মানুষের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু হোমরুল আন্দোলনের প্রভাবে জাতীয় আন্দোলনের শিকড় গ্রামেগঞ্জে জনমানসের গভীরে প্রবেশ করল।

হোমরুল আন্দোলনের প্রসার ও জনপ্রিয়তা ব্রিটিশ সরকারের কাছে অস্বস্তিকর হয়ে উঠল। ভারত সরকারের স্বরাষ্ট্র দপ্তরের গোপন প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল-"পরিস্থিতি অত্যন্ত জটিল, জনগণের উপর নরমপন্থীদের প্রভাব ক্ষীণপ্রায় এবং তিলক ও বেসান্তের প্রতি তাদের সমর্থন ব্যাপক।" এই পরিস্থিতিতে সরকার প্রথমে দমন নীতি অনুসরণে উদ্যত হলেন। ১৯১৯ সালে মাদ্রাজে অ্যানি বেসান্ত গ্রেপ্তার হলে। গান্ধীজী মহম্মদ আলি জিন্না প্রমুখ নেতারা তাঁর প্রতিবাদ জানালেন। অন্যদিকে তিলকও রেহাই পেলেন না। তিনিও গ্রেপ্তার হলেন এবং বিশ হাজার টাকা জরিমানা ধার্য করা হল। তিলক জরিমানা দিতে অস্বীকার করলেন। সরকারের দমন নীতি সর্বত্র ঘৃণার সঞ্চার করল এবং হোমরুল আন্দোলনের প্রতি সাধারণ মানুষ। সহানুভূতিসম্পন্ন হয়ে উঠল।

সরকারী মহল ক্রমশ বুঝতে পারল যে দমন নীতির পরিণাম ভয়ঙ্কর। উত্তাল জনমতের চাপে ভারত-সচিব মান্টেগু ১৯১৭ সালে ২০শে আগস্ট ঘোষণা করলেন- 'ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত থেকে ভারতবাসী যাতে স্বায়ত্ত শাসনের অধিকার লাভ করতে পারে, ব্রিটিশ সরকার সে ধরনের নীতি গ্রহণ করবেন।" এক কথায়, সংস্কারের দাবি অগ্রাহ্য করা সম্ভব হল না ৷

আপনি চাইলে এগুলো পড়তে পারেন

হোমরুল আন্দোলন জাতীয় আন্দোলনের ইতিহাসে এক গৌরবজনক ও ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালন করেছিল। জাতীয় কংগ্রেস যখন নরমপন্থী-চরমপন্থী মতবিরোধে দুর্বল হয়ে পড়েছিল, সেই মুহূর্তে হোমরুল আন্দোলন রাজনীতিকে সংগ্রামী ও গণমুখী করে তুলতে সক্ষম হয়। হোমরুল আন্দোলনের মধ্য দিয়ে তিলকের নেতৃত্ব স্বীকৃত হল। রমেশচন্দ্র মজুমদারের মতে হোমরুল আন্দোলন ছিল 'তিলকের মহান রাজনৈতিক জীবনের শেষ পর্যায়।" পরিশেষে বলা যায়, হোমরুল আন্দোলন জাতীয় মুক্তি আন্দোলনের ইতিহাসে গান্ধী-যুগের পটভূমি রচনা করেছিল। হোমরুল আন্দোলনের দৃষ্টান্তে উৎসাহিত হয়ে গান্ধীজী সর্বভারতীয় গণ-আন্দোলনের পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। হোমরুল লীগ যে সাংগঠনিক শক্তি প্রতিষ্ঠা করেছিল তার উপরে গান্ধীজী আলেলনের। ভিত্তি বচনা করেন।

তোমাকে অনেক ধন্যবাদ হোমরুল আন্দোলন সম্পর্কে টীকা লেখ এই নোটটি পড়ার জন্য

About the author

Irisha Tania
"আমি সেই মেয়ে, যে শব্দে বাঁচে। কলম আমার অস্ত্র, আর কাগজ আমার স্বপ্নের আকাশ। প্রতিটি অনুভব, প্রতিটি চিন্তা আমি সাজিয়ে রাখি অক্ষরের গাঁথুনিতে। কখনো গল্পে, কখনো কবিতায়, আবার কখনো নিঃশব্দের ভেতরে। আমি লিখি, কারণ লেখার মাঝে আমি নিজেকে খুঁজে পাই। …

Post a Comment

🌟 Attention, Valued Community Members! 🌟