কাশ্মীরের ভারতভূক্তিজনিত সমস্যা আলোচনা করো

ভারত স্বাধীনতা লাভ করার পর তার সবথেকে বড় সমস্যা ছিল দেশীয় রাজ্য গুলিকে কিভাবে ভারতের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধ করবে ৷ সর্দার বল্লভ ভাই প্যাটেল এর নেতৃত্বে ৬০২টি রাজ্যের মধ্যেই বেশির ভাগই স্বইচ্ছাই অংশ গ্রহণ করে ৷ কিন্তু যে দেশীয় রাজ্য গুলি রাষ্ট্রের অন্তর্ভুক্ত হতে সমস্যা হচ্ছিল তার মধ্যে অনতম হল জুনাগড়, হায়দ্রাবাদ ও কাশ্মীর । এদের মধ্যে কাশ্মীরের ভারত-ভুক্তি নিয়ে এক জটিল সমস্যার সৃষ্টি হয়েছিল, যার সমাধান আজও হয়নি । কাশ্মীরের ভৌগোলিক অবস্থান একে গুরুত্বপূর্ণ করে তুলেছিল । এর একদিকে ছিল ভারত, অপরদিকে পাকিস্তান ।
আপনি চাইলে এগুলো পড়তে পারেন
কাশ্মীরের মহারাজা হরি সিং ছিলেন হিন্দু আর রাজ্যের এ ৮০% প্রজা ছিল মুসলিম সম্প্রদায়ভুক্ত । ভারত ও পাকিস্তান -দুই দেশই কাশ্মীরকে নিজ নিজ দেশে যোগদানের জন্য আবেদন করে । সর্বশেষ ব্রিটিশ গভর্নর জেনারেল লর্ড মাউন্ট ব্যাটেন কাশ্মীরের মহারাজাকে ভারত বা পাকিস্তান যে-কোনো দেশে যোগ দেওয়ার কথা বলেন । এছাড়া কাশ্মীরের প্রধান রাজনৈতিক দল 'ন্যাশনাল কনফারেন্স'-এর নেতা শেখ আবদুল্লা কাশ্মীরকে ভারতভুক্তির জন্য আন্দোলন শুরু করেন । তাহা সত্ত্বেও অশীরের মহারাজা কাশ্মীরকে স্বতন্ত্র ও স্বাধীন রাষ্ট্ররূপে ঘোষনার পক্ষে অনড় ছিলেন।
এই পরিস্থিতিতে ১৯৪৭সালে অক্টোবরে পাক মদতপুষ্ট হানাদার বাহিনী কাশ্মীরে প্রবেশ করে ব্যাপক হিংসাত্মক কার্যকলাপ শুরু করে । ফলে কাশ্মীরের প্রশাসনিক ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে এবং মহারাজা হরি সিং শ্রীনগড় থেকে পালিয়ে এসে অরতের কাছ থেকে সামরিক সাহায্যের জন্য অনুরোধ করেন। কিন্তু ভারত সরকারের পক্ষ থেকে জানিয়ে দেওয়া হয় মহারাজা হরি সিং কাশ্মীরের ভারতভুক্তির দলিলে স্বাক্ষর করলে তবেই কাশ্মীরে ভারত সামরিক সাহায্য পাঠাবে। মহারাজা তাহা বাধা হয়ে মেনে নেন।
এদিকে পাক হানাদাররা ক্রমে শ্রীনগরের কাছাকাছি আসতে থাকে। এই অবস্থায় হরি সিং ভারতভুক্তির দলিলে স্বাক্ষর করেন এবং ন্যাশনাল কনফারেন্স-এর নেতা শেখ আবদুল্লা তাহা সমর্থন করেন। পরের দিন ভারতীয় সেনারা বিমানে শ্রীনগরে প্রবেশ করে এবং কাশ্মীরের দুই-তৃতীয়াংশ উদ্ধার করে। এরপর কাশ্মীরে শেক আবদুল্লার নেতৃত্বে একটি আপাৎকালীন মন্ত্রীসভা গঠিত হয়। এই সরকারের বিরোধীতা করে পাকিস্তান তার দখলীকৃত কাশ্মীরে 'আজাদ কাশশ্মীর' নামে একটি সমান্তরাল মন্ত্রীসভা গঠন করে ।
কাশ্মীর সমস্যার সমাধানকল্পে ও যুদ্ধ এড়াবার জন্য মাউন্টব্যাটেনের পরামর্শে ভারত জাতিপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদে কাশ্মীর সমস্যা উত্থাপন করে। ভারত দাবী করে কাশশ্মীর ভারতভুক্তি দলিলে স্বাক্ষর করে ভারতের অঙ্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে। ফলে কাশ্মীর সম্পূর্ণরূপে ভারতের। অপরদিকে পাকিস্তান যুক্তি দেখায় যে জুনাগড়ের নবাব পাকিস্তানে যোগদানের পক্ষে স্বাক্ষর দিলেও ভারত বলপূর্বক জুনাগড় দখল করে। কারণ সেখানের জনগণ ভারতে যোগদানের পক্ষে ছিল। সুতরাং গণভোটের মাধ্যমেই কাশীনের ভাগ্য নির্ধারিত হোক।
দীর্ঘ আলাপ-আলোচনার পর ১৯৪৮ সালের শেষদিকে নিরাপত্তা এই পরিষার কাশ্মীরে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করে। একই সাথে কাশ্মীরে গণভোটের কথা বল হলেও এখনও পর্যন্ত তাহা বাস্তবায়িত হয়নি। ফলে কাশ্মীর সমস্যারও আজ পর্যন্ত রিপে কোনো সমাধান হয়নি ৷