১৯২১-২২-এর ওয়াশিংটন সম্মেলনের প্রেক্ষাপট ও ফলাফল আলোচনা করো । অথবা, ওয়াশিংটন সম্মেলনের পটভূমি ও তাৎপর্য ব্যাখ্যা কর

১৯২১-২২-এর ওয়াশিংটন সম্মেলনের প্রেক্ষাপট ও ফলাফল আলোচনা করো । অথবা, ওয়াশিংটন সম্মেলনের পটভূমি ও তাৎপর্য ব্যাখ্যা কর

১৯২১-২২-এর ওয়াশিংটন সম্মেলনের প্রেক্ষাপট ও ফলাফল আলোচনা করো । অথবা, ওয়াশিংটন সম্মেলনের পটভূমি ও তাৎপর্য ব্যাখ্যা কর

১৯২১-২২-এর ওয়াশিংটন সম্মেলনের প্রেক্ষাপট ও ফলাফল আলোচনা করো ।  অথবা, ওয়াশিংটন সম্মেলনের পটভূমি ও তাৎপর্য ব্যাখ্যা কর  

১৯২১-২২-এর ওয়াশিংটন সম্মেলন


প্রথম বিশ্বযুদ্ধোত্তর যুগে বিভিন্ন কারনে দূর প্রাচ্যে জাপানের শক্তি অতিরিক্ত বৃদ্ধি পায় ৷ বিংশ শতকের প্রথম দিকে জাপানের সাম্রাজ্যবাদ অগ্রগতির নেতৃত্বে প্রণীত হতে থাকে এর ফলশ্রুতি হল ১৯২১ থেকে ২২ খ্রিস্টাব্দে ওয়াশিংটন সম্মেলন ৷ এই অঞ্চলের যে ৯টি দেশ নিয়ে সম্মেলন বসেছিল সেগুলি হল চীন ,জাপান, ইংল্যান্ড, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ইতালি ফ্রান্স, বেলজিয়াম  পর্তুগাল ও হল্যান্ড ৷ ঐতিহাসিক ভিনাক যথার্থই বলেছেন দূর প্রাচ্যের আধুনিক ইতিহাস ওয়াশিংটন সম্মেলনের পটভূমি তৈরি করেছে ৷ চীন জাপান যুদ্ধের সময় থেকেই জাপান-পূর্ব এশিয়ার অদ্ভুত-পূর্ব সাফল্য লাভ করেন ৷ জাপান ইংল্যান্ডের সঙ্গে বন্ধুত্ব করে ১৯০২ খ্রিস্টাব্দে এবং রাশিয়াকে পরাজিত করে আঞ্চলিক শক্তি থেকে বিশেষ শক্তি তার উন্নতি হয় ৷ প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় জাপান চীনের উপর ২১ দফা দাবি চাপিয়ে দিয়ে এবং চীন তার অধিকাংশই দাবি মেনে নেয় ৷ প্যারিস শান্তি সম্মেলনে জাপান প্রথম সরাসরি রাষ্ট্রের মর্যাদা লাভ করেন এবং চীন ও অনেকগুলি অঞ্চলের ওপর অধিকার বজায় রাখে ৷ কোরিয়া মাঞ্চুরিয়া এবং শান্টুং জাপানের অধীনস্থ হয় ও ক্ষণিক সংক্রান্ত অধিকার যৌথভাবে জাপান দূর প্রাচ বিশেষত্ব চীন তার প্রতিদ্বন্দ্বী থেকে বেশ কয়েকটি ধাপ এগিয়ে গিয়েছিল ৷
আপনি চাইলে এগুলো পড়তে পারেন

১৯০২ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে জাপান পূর্ব এশিয়ার নিজের আধিপত্য প্রচেষ্টা করতে সক্ষম হন ৷ শাখালিনের অর্ধেক এবং কুরাইশ দ্বীপপুঞ্জ নিজ অধিকারের এনে জাপান অকোটস সাগরে অনুপ্রবেশ রক্ষার ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেন ৷ সাখালীন ও কোরিয়ান ওপর জাপানের নিয়ন্ত্রণ বিশ্বের কাছে জাপান সাগরের প্রচলন এর দার বন্ধ করে ৷ আবার ফরমৌজার ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে জাপান ইউকো সাগরে মুখ বন্ধ করতে সক্ষম হয় ৷ এইভাবে উত্তর থেকে দক্ষিণ পর্যন্ত বিস্তৃত যাবতীয় সমুদ্রের মুখগুলি জাপানের নিয়ন্ত্রণে চলে আয় । জাপান কর্তৃক কোরিয়ার অধিকার এবং চীনের প্রাচীরের উত্তর ও শান্টুং অঞ্চলের কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত হলেও জাপান পিকিং এর ওপর প্রাধান্য বিস্তার করার সুযোগ পায় । ১৮৯৫ থেকে ১৮৯৫-১৯২১ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে জাপানের সাম্রাজ্যবাদী কার্যকলাপ পাশ্চাত্য সাম্রাজ্যবাদী শক্তিগুলির অপেক্ষা তাকে কয়েকটি ধাপ এগিয়ে দিয়েছিল ৷


বিংশ শতাব্দীর প্রথম দিক থেকে দূর প্রাচে রাশিয়ার অগ্রগতি বন্ধ করার জন্য গ্রেট ব্রিটেন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জাপানকে প্রথম ব্যবহার করে ৷ সাম্রাজ্যবাদ বিপদজনক হয়ে উঠলে তারা আতঙ্কিত হয় ৷ বিশেষত সম্পর্কিত সাধারণ যুক্তরাষ্ট্রের দৃষ্টিভঙ্গি ছিল মুক্তদ্বার নীতি বাধা পাবে ৷ ১৯১৫-১৬ খ্রিঃ নগাত জাপানের অগ্রাস্নীতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে ক্ষুব্ধ করে তোলে মাঞ্চুরিয়া অঞ্চলে মার্কিন পুজি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে জাপান প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করেছিল , যার ফলে উভয় রাষ্ট্রের মধ্যেই তিক্ততার সম্পর্ক বাড়তে থাকে আমেরিকা এবং জাপানের মধ্যে সম্পর্ক যত তিক্ত হতে থাকে ইঙ্গো জাপান সম্পর্ক ততই দুর্বল হতে থাকে ৷


প্রকৃতপক্ষে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চীনের বাজার হাতছাড়া করতে চাইনি ৷ চীন থেকে কাঁচামাল সংগ্রহ ও মূলধন বিনিয়োগের ব্যাপক সম্ভাবনা ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ৷ পূর্ব এশিয়ায় রাশিয়াকে তার প্রধান শত্রু হিসেবে মনে করেছিল ৷ সেই কারণে ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানের মধ্যে এক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় ৷ কিন্তু, অল্প দিনের মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই চুক্তি বন্ধন থেকে মুক্ত হতে চাই ৷ জাপান মাঞ্চুরিয়ার রেলপথ স্থাপনের উদ্যোগ নিলে ব্রিটেন ও আমেরিকা তাতে পুঁজিবিনিয়োগ করতে চেয়েছিলেন ৷ কিন্তু জাপান তাতে রাজি হয়নি ৷ তাই ১৯২১ খ্রিস্টাব্দে আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র দূর প্রাচ্যে শক্তি প্রসানের প্রস্তাব দিলে তার রাজধানি ওয়াশিংটন নিয়ে একটি সম্মেলন আহ্বান করা হয় ৷ ব্রিটেন এই সময়ে মনেপ্রাণে ইঙ্গ জাপান চুক্তির অবসান চেয়েছিলেন ৷ তাই এই আমন্ত্রণ ইংল্যান্ড গ্রহণ করেন ৷ ব্রিটেন ছাড়াও ফ্রান্স বেলজিয়াম, পর্তুগাল, হলান্ড, ইতালি, জাপান, চীন এই নয়টি দেশ ওয়াশিংটন সম্মেলনে যোগ দেয় ৷ এই সম্মেলন ১৯২২ খ্রিস্টাব্দের ২ রা ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলেছিল ৷


ওয়াশিংটন সম্মেলনের স্বাক্ষরিত ৭টি চুক্তির মধ্যে তিনটি চুক্তি ছিল প্রধান 
(১). প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপগুলির ওপর ঔপনিবেশ মালিকানা ও কর্তৃত্ব সংক্রান্ত চতুর শক্তি জোট ব্রিটেন , জাপান ,আমেরিকা ও ফ্রান্সের মধ্যে স্বাক্ষরিত এই চতুর শক্তি চুক্তিতে স্থির হয় যে , তারা প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে একে অপরের অধিকার কে মর্যাদা দেবে এবং কোন সমস্যা দেখা দিলে নিজেদের মধ্যে আলোচনায় বসবে ‌৷
 পঞ্চশক্তির চুক্তির দ্বারা দূর প্রাচ্যে জাপানের নৌবল ইংরেজ ও মার্কিন
যুক্তরাষ্ট্রের নৌ-শক্তির শতকরা ৬০% হবে বলে স্থির হয়। পঞ্চশক্তির চুক্তিতে প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ইংরেজ ও মার্কিন নৌশক্তির হার সমান সমান হবে বলে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। পঞ্চশক্তির চুক্তিতে যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, জাপান, ফ্রান্স, ইতালির নৌ- শক্তির হার যথাক্রমে- ৫:৫:৩: ১৭৫: ২.৭৫ হবে বলে নির্ধারিত হয়।
চীনের আঞ্চলিক অখন্ডতার রক্ষার বিষয়ে ন'টি দেশ যে চুক্তিতে স্বাক্ষর করে তাতে চীনের সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীনতা এবং অখন্ডতা রক্ষার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়। জাপান চীনকে শান্টুং প্রদেশ ফেরত দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয় ৷ কিন্তু মাঞ্চুরিয়া ছাড়তে রাজি হননি ৷


আধুনিক বিশ্বের ইতিহাসে ওয়াশিংটন সম্মেলন একটি অত্যন্ত সফল সম্মেলন সম্মেলনের সব থেকে বড় সাফল্য ছিল জাপান কর্তৃক চীনকে শান্টুং প্রদেশ ফেরত দেওয়া এবং পঞ্চ চুক্তির মাধ্যমে নৌবহর বৃদ্ধির প্রতিযোগিতা বন্ধ করা ৷ এর ফলে দূর প্রাচ্যের উত্তেজনা সামরিক প্রহসন ঘটে ৷ ফেয়ার ব্যাঙ্ক লিখেছেন," ওয়াশিংটন সম্মেলনে স্বাক্ষরিত চুক্তি গুলি দূর প্রাচ্যে স্থিতিশীল তৈরি করে এবং চীনে অগ্রগতি সম্ভাবনা দেখা দেয় ৷


10- marks এর হলে এই খান পর্যন্ত লিখতে হবে ৷

সম্মেলনের সাফল্য ছিল আংশিক ৷ এখানেই চীনের মর্যাদা ও সার্বভৌম প্রতিষ্ঠিত হয়নি ৷ প্রকৃতপক্ষে চীন কয়েকটি বৃহৎ শক্তি সাম্রাজ্যবাদী প্রতিযোগিতায় নির্লজ্জ ক্ষেত্র হয়ে উঠেছিল ৷ ই.এইচ.কার মনে করেন যে দূর প্রাচ্যের সমস্যা ছিল দুটি - (১). চীনের সার্বভৌমত্ব সমস্যা এবং প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে কর্তৃত্বের সমস্যা ৷ চীনের সমস্যা সমাধানের জন্য প্রয়োজন ছিল চীনের আধা উপনিবেশিক অবস্থার এবং চীনের সার্বভৌমত্বের বজায় রাখা । কিন্তু সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলি চীনের বিরাট বাজার থেকে হাত গুটিয়ে নিতে ইচ্ছুক ছিল না অর্থাৎ তারা এই যুক্তির মধ্যে দিয়ে চীনকে নিজেদের ইচ্ছামত বিভক্ত করেই একটি মিশ্র উপনিবেশিক স্থাপন করার চেষ্টা করেছিলেন ৷

সম্মেলনের সাফল্যের দাবিতে অস্ত্র প্রতিযোগিতা কেউ সীমিত করার সাফল্য দাবি করা হয় ৷ কিন্তু বাস্তবে এটি সঠিক ছিল না । কারণ এই সম্মেলনে কেবল বড় যুদ্ধ জাহাজের ক্ষেত্রেই নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেছিল ৷ ডুবোজাহাজ, ক্রসার ইত্যাদির ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণ আরোগ্য করা করেননি । এর ফলে অস্ত্র প্রতিযোগিতা বন্ধ হয়নি ৷ প্রধানত দুটি কারণেই এই সম্মেলনের সাফল্য অর্জন করতে পারেনি (১). বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন উদ্দেশ্য নিয়ে এই সম্মেলনে অংশগ্রহণ করায় এই সম্মেলনের ব্যর্থতা অবসম্ভাবী হয়ে ওঠে ৷ (২). চীনে বিদেশীদের সাম্রাজ্যবাদী কার্যকলাপ বন্ধ করায় ছিল এই সম্মেলনের উদ্দেশ্য ৷ কিন্তু এই কাজটিতে কোন শক্তি আগ্রহ না থাকায় ওয়াশিংটন সম্মেলন ব্যর্থ হয় ৷


সামগ্রিকভাবে ওয়াশিংটন সম্মেলনের মূল্যায়ন করতে গিয়ে দেখা যায় এই সম্মেলনের বেশ কিছু সিদ্ধান্ত ছিল ইতিবাচক ৷ বৃহৎ শক্তি গুলিকে অন্তত কিছুদিনের জন্যই বিরামহিল অস্ত্র প্রতিযোগিতা থেকে দূরে সরে রাখা সম্ভব হয়েছিল ৷ দূর প্রাচ্যের জটিল পরিস্থিতি অন্তত কিছুদিনের জন্য নিয়ন্ত্রণে রাখা গিয়েছিল এবং এশিয়া তথা বিশ্ব রাজনীতিতে শান্তি বজায় ছিল ৷ তবে যখন ওয়াশিংটন সম্মেলন ব্যর্থ হয়েছিল তখন শুরু হয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ ৷ 

About the author

Irisha Tania
"আমি সেই মেয়ে, যে শব্দে বাঁচে। কলম আমার অস্ত্র, আর কাগজ আমার স্বপ্নের আকাশ। প্রতিটি অনুভব, প্রতিটি চিন্তা আমি সাজিয়ে রাখি অক্ষরের গাঁথুনিতে। কখনো গল্পে, কখনো কবিতায়, আবার কখনো নিঃশব্দের ভেতরে। আমি লিখি, কারণ লেখার মাঝে আমি নিজেকে খুঁজে পাই। …

Post a Comment

🌟 Attention, Valued Community Members! 🌟