ইঙ্গ-জাপান মৈত্রীচুক্তির (১৯০২) প্রেক্ষাপট আলোচনা করো। অথবা ইঙ্গ জাপান চুক্তির প্রেক্ষাপট সম্পর্কে আলোচনা কর

ইঙ্গ-জাপান মৈত্রীচুক্তির (১৯০২) প্রেক্ষাপট আলোচনা করো। অথবা ইঙ্গ জাপান চুক্তির প্রেক্ষাপট সম্পর্কে আলোচনা কর

ইঙ্গ-জাপান মৈত্রীচুক্তির (১৯০২) প্রেক্ষাপট আলোচনা করো। অথবা, ইঙ্গ জাপান চুক্তির প্রেক্ষাপট সম্পর্কে আলোচনা কর বা,১৯০২-এর ইঙ্গ-জাপান মৈত্রী চুক্তির পটভূমি আলোচনা কর ৷

ইঙ্গ-জাপান মৈত্রীচুক্তির (১৯০২) প্রেক্ষাপট আলোচনা করো। অথবা ইঙ্গ জাপান চুক্তির প্রেক্ষাপট সম্পর্কে আলোচনা কর 

 ইঙ্গ-জাপান মৈত্রীচুক্তির (১৯০২) 



১৮৯৫ খ্রিঃ চীন-জাপান যুদ্ধের অবসানের পর জাপান তার বৈদেশিক নীতি নির্ধারণে দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পড়ে ।
এই যুদ্ধে চীন পরাজিত হলে এবং জাপান জয়লাভ করলে জাপান এই জয়ের পূর্ণ সুফল ভোগ করতে পারেননি । রাশিয়ার নেতৃত্বে ফ্রান্স ও জার্মানি মিলিতভাবে জাপানকে শিমনশেখের চুক্তি পরিবর্তনে বাধ্য করেছিল । এই চুক্তি অনুযায়ী জাপান পরাজিত চীনের কাছ থেকে ফরমৌজার দ্বীপ, পেসকাডেরস লিওটন উপদ্বীপ এবং কোট আর্থার পেয়েছিল ৷ এর ফলে রাশিয়ার নেতৃত্বে ত্রিশক্তি জোট জাপানকে লিও ওটাং দ্বীপ ত্যাগ করতে বাধ্য করেছিল ৷ এই সময় জাপান সঠিকভাবে অনুভব করেছিল যে দূর প্রাচ্যে তার বিচ্ছিন্নতার তার অবসান ঘটাতে না পারলে তার পক্ষে এই এলাকায় সাম্রাজ্য স্থাপন করা সম্ভব হবে না ৷ জাপান এটা অনুভব করেছিল দূর প্রাচ্যে তার সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী হলো রাশিয়া, রাশিয়া চেয়েছিল দূর  থেকে জাপানের প্রভাবকে নষ্ট করতে এবং জাপানও চেয়েছিল রুশ বাধাকে দূর প্রাচ্যে নিজের শক্তি প্রতিষ্ঠা করতে ৷




জাপান রাশিয়ার নেতৃত্বে ত্রিশক্তি জোটের চাপের কাছে নীতি শিকার করে লিওটন উপদ্বীপ থেকে সরে আসে ৷ তাছাড়া জাপান আশা করেছিল যে ওই এলাকায় শান্তি শৃঙ্খলা বজায় থাকবে ৷ জাপান আরো ভেবেছিল যে সে কোরিয়া ও মাঞ্চুরিয়া তে বাণিজ্যিক সুযোগ সুবিধা হবে । কিন্তু জাপান দেখল যে সে উপস্থিত থেকে সরে আসার কিছুদিনের মধ্যেই রাশিয়া কোট আর্থার রন্দরকে চীনের কাছ থেকে ইজারা প্রণ পেয়েছিল ৷ এইভাবে লিয়াওটাং উপত্যকার অঞ্চল গুলিতে সে ইজারা পেয়েছিল ৷ রাশিয়া মাঞ্চুরিয়া সচেষ্ট সমগ্র উত্তর চীনে বিশেষ সুবিধা অর্জনের সমর্থন হলে , রাশিয়ার বিরুদ্ধে জাপানের ক্ষোভ ও অবিশ্বাস বৃদ্ধি পায় ৷ রাশিয়ার এই অগ্রাসন জাপানকে মানতে পারেনি ৷


চীন জাপান যুদ্ধের পরই সবাই কোরিয়ার স্বাধীনতাকে মেনে নিয়েছিল ৷ কিন্তু বাস্তবে দেখা যায় যে এই যুদ্ধের পর সিত্তল দরবারে জাপানের প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত হয় ৷ তাছাড়া কোরিয়া জাপানের নিকটবর্তী দেশ ৷ যদি করিয়া অন্য কোন দেশ দখল করে নেয় তাহলে জাপান নিরাপত্তা বিকৃত হবে ৷ তাছাড়া শিল্পপানত জাপান এশিয়ার মূল ভূখণ্ডে সাম্রাজ্যের বিস্তারে স্বপ্নে বিভোর ছিল ৷ জাপানের নায়কেরা এটা অনুভব করেছিল যে করিয়া দখল করতে পারলে তাদের স্বপ্নপূরণ হবে ৷ আসলে কোরিয়া ছিল কৃষিযোগ খনিজ ও প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ একটি দেশ ৷ তাই করিয়াকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারলে জাপানের সব সমস্যার সমাধান হতে পারে ৷ 



কোরিয়াতে দ্রুতগতিতে রুশ প্রভাব বৃদ্ধি পাই স্বাভাবিক কারণে জাপান শঙ্কিত হয়েছিল ৷ কারণ করিয়া কোন শক্তিশালী বিদেশী শক্তির নিয়ন্ত্রণে গেলে তা জাপানের নিরাপত্তার লক্ষ্যে বিপদের কারণ হয়ে উঠতে পারে ৷ তাই জাপান কোরিয়াতে রুশ প্রভাব বৃদ্ধিতে শঙ্কিত হয়ে তা প্রতিকার করার চেষ্টা করে ৷ এই উদ্দেশ্যে জাপান রাশিয়া সঙ্গে ১৮৯৬ সালে ইয়ামাতাঙ্গা লোকাল চুক্তি স্বাক্ষর করেন ৷ এই চুক্তিতে উভয় পক্ষে করিয়া থেকে তাদের সৈন্য প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত নেন এবং কোন পক্ষে কোরিয়ার ওপর আধিপত্য বিস্তার করবে না ৷ অর্থাৎ এই সমঝোতা ছিল সামরিক ৷ কারণ রাশিয়া সামঝতাকে মানতে চাননি ৷ চুক্তি স্বাক্ষরের পরেও রাশিয়া কোরিয়ার ওপর তার প্রভাবকে বজায় রাখার চেষ্টা করেছিল ৷



রাশিয়ার সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপন করে সুদূর প্রাচ্যে পারস্পরিক রাজনৈতিক প্রভাবাধীন স্থান নির্দিষ্ট করার জন্য একদল রাজনীতিবিদ সুপারিশ করেন। অপরদল ইংল্যান্ডের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপনের পক্ষপাতী ছিল । দ্বিতীয় দলের প্রবক্তা ছিলেন কাউন্ট-হায়াসি । তাদের বক্তব্য ছিল যে শিমোনোশেকের চুক্তি ইউরোপের তিনটি দেশ রাশিয়া, ফ্রান্স ও জার্মানি জাপানের বিরোধিতা করলেও ইংল্যান্ড করেননি ৷ এছাড়া দূর প্রাচ্যে রুশ অগ্রগতিতে জাপানের মতো ইংল্যান্ড ও শঙ্কিত ছিল ৷ তাই জাপান ইংল্যান্ড কে তার স্বাভাবিক মিত্র হিসেবে গ্রহণ করতে পারবে ৷



ইংল্যান্ডও দূর প্রাচ্যে তার বাণিজ্যিক বিস্তারে বিশেষভাবে আগ্রহী ছিল ৷ কিন্তু রাশিয়া এবং তার মিত্র ফ্রান্সের বিরোধিতার ক্ষেত্রে কিছুটা অসুবিধা সৃষ্টি করেছিল ৷ দূর প্রাচ্যে রুশ প্রতিদ্বন্দ্বিতা প্রতিহত করার জন্য ব্রিটেন প্রথমে জার্মানির সঙ্গে মৈত্রী বন্ধনে আবদ্ধ হতে চেয়েছিল ৷ কিন্তু রাশিয়ার বিরোধীতা করতে জার্মানি সম্মত না হওয়ায় ইংল্যান্ড ফ্রান্সের সাথে বন্ধুত্ব করার চেষ্টা করে ৷রাশিয়ার মতো ফ্রান্সও চীনের বিভিন্ন অংশের ওপর কর্তৃত্ব স্থাপনে আগ্রহী ছিল বলে ইংল্যান্ডের আবেদনে সাড়া দেওয়া তার পক্ষে সম্ভব ছিল না। আমেরিকা উন্মুক্ত দ্বার নীতিতে বিশ্বাসী হলেও সরাসরিভাবে কোনো শক্তি জোট গঠন করতে রাজি ছিল না । তাই ব্রিটেন অনুভব করেছিল যে এই ক্ষেত্রে দূর প্রাচ্যে রাশিয়ার বিরুদ্ধে তার স্বাভাবিক মিত্র হতে পারে একমাত্র জাপান ৷ এর পরিণতি স্বরূপ ১৯০২ সালে জানুয়ারি মাসে স্বাক্ষরিত হয় ইঙ্গ জাপান চুক্তি ।


১৯০২ খ্রিঃ ইঙ্গ-জাপান মৈত্রীচুক্তি জাপানের ইতিহাসের এক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা । এই চুক্তিতে প্রথম একটি প্রাচ্য-রাষ্ট্র পাশ্চাত্যের একটি রাষ্ট্রের সাথে পদমর্যাদায় রাজনৈতিক চুক্তি সম্পাদন করতে সমর্থহ হয় । এই চুক্তির উপর ভিত্তি করেই জাপান তার সাম্রাজ্যবাদী নীতি অনুসরণ করতে শুরু করে এবং তার এই সাম্রাজ্যবাদী নীতি সুদূর প্রাচ্যে নানারূপ জটিল সমস্যার সৃষ্টি করে। এই চুক্তি চীন ও -এমেরিকার পক্ষে ক্ষতিকারক হয়ে ওঠে এবং তারা ইংল্যান্ডের নীতির তীব্র সমালোচনা করে। অপরদিকে চিনে রাশিয়ার অগ্রগতি রুদ্ধ হয় এবং রুশ-জাপান যুদ্ধের আশঙ্কা দূর করার উদ্দেশ্যে ইংল্যান্ডের লর্ড ল্যান্সডাউন এই চুক্তি সম্পাদনের জন্য বিশেষভাবে অগ্রহী হলেও এই চুক্তি সম্পাদনের ফলে রুশ-জাপান যুদ্ধ ত্বরান্বিত হয়ে ওঠে।


About the author

Irisha Tania
"আমি সেই মেয়ে, যে শব্দে বাঁচে। কলম আমার অস্ত্র, আর কাগজ আমার স্বপ্নের আকাশ। প্রতিটি অনুভব, প্রতিটি চিন্তা আমি সাজিয়ে রাখি অক্ষরের গাঁথুনিতে। কখনো গল্পে, কখনো কবিতায়, আবার কখনো নিঃশব্দের ভেতরে। আমি লিখি, কারণ লেখার মাঝে আমি নিজেকে খুঁজে পাই। …

Post a Comment

🌟 Attention, Valued Community Members! 🌟