স্বদেশী আন্দোলনের ঐতিহাসিক গুরুত্ব আলোচনা করো।
স্বদেশী আন্দোলন পরিপূর্ণভাবে সাফলা না পেলেও ভারতের জাতীয় সংগ্রামের ইতিহাসে এই আন্দোলনের গুরুত্ব অপরিসীম।
স্বদেশী আন্দোলনের গুরুত্বঃ
স্বদেশী আন্দোলনে ছাত্র, যুব, নারী, শ্রমিক, মধ্যবিত্ত প্রভৃতি সকল শ্রেণীর মানুষেরা অংশগ্রহণ করে ভারতের জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের ভিত্তি স্থাপন করেছিল, যা পরবর্তীকালের ঐক্যবদ্ধ স্বাধীনতা আন্দোলন পরিচালনায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে।
ভারতে বৈপ্লবিক আন্দোলনের সূচনাও হয়েছিল এই স্বদেশী আন্দোলনের ফলশ্রুতিতে। বাংলায় গড়ে ওঠে অনুশীলন সমিতি, যুগান্তর নামে দুটি গুপ্ত সমিতি। বঙ্গভঙ্গকে কেন্দ্র করেই জাতীয় কংগ্রেসসে চরমপন্থী মতবাদের প্রসার ঘটে এবং নরমপন্থী ও চরমপন্থী দ্বন্দ্বের সূচনা হয়। ১৯০৭ সালে কংগ্রেস দু-ভাগে ভাগ হওয়ার মাধ্যমে এই দ্বন্দ্বের অবসান ঘটে।
স্বদেশী আন্দোলনের ফলে বাংলার সাহিত্য ও লোকসংগীত, শিল্পকলা ও বিজ্ঞান প্রভৃতি ক্ষেত্রগুলিকে উৎসাহ দান করে এগুলিকে উজ্জীবিত করেছিল। এই আন্দোলন স্বদেশী শিল্প ও কুটির শিল্পকে পুনরুজ্জীবিত করতে বিশেষ সহায়তা করে। স্বদেশী বস্ত্র কারখানা, সাবান কারখানা, দেশলাই কারখানা, লৌহ-ইস্পাত কারখানা প্রভৃতি গড়ে ওঠার মাধ্যমে স্বদেশী শিল্পের
বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের তীব্রতায় সরকার ভারতীয়দের হাতে কিছু শাসনতান্ত্রিক সুবিধা দিতে ১৯০৯ সালে প্রবর্তন করে মর্লে-মিন্টো সংস্কার। স্বদেশী আন্দোলনের তীব্রতায় সরকার ১৯১১ সালে ১২ ডিসেম্বর বঙ্গভঙ্গের সিদ্ধান্ত রদ করতে বাধা হয়। কিন্তু এর সাথেই ভারতের রাজধানী কলকাতা থেকে দিল্লীতে স্থানান্তরিত করে।
গোপালকৃষ্ণ গোখলে এই আন্দোলনকে ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের একটি দিকচিহ্ন বলে অভিহিত করেছেন। এ বিষয়ে গান্ধিজী বলেছেন যে, বঙ্গভঙ্গের পরেই ভারতে প্রকৃত নবজাগরণ ঘটে। তিনি স্বীকার করেন যে, বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনই ভারতবর্ষে ব্রিটিশ সাম্রাজ্য বিনাশের পথপ্রদর্শক।