ওয়ারেন হেস্টিংসের এর রাজস্ব ব্যবস্থা আলোচনা কর।

ওয়ারেন হেস্টিংসের এর রাজস্ব ব্যবস্থা আলোচনা কর।

ওয়ারেন হেস্টিংসের এর রাজস্ব ব্যবস্থা আলোচনা কর।


ওয়ারেন হেস্টিংস-এর ভূমি-রাজস্ব নীতিঃ


গভর্নর হিসেবে ওয়ারেন হেস্টিংস তাঁর পুরা শাসনকাল (১৭৭২-৮৬) জুড়েই ভূমি রাজস্ব ব্যবস্থার উপর নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালান। 'দ্বৈত-শাসন' অবসানের স্পষ্ট নির্দেশ ছিল তাঁর উপর। তাই কার্যভার গ্রহণ করেই হেস্টিংস রেজা খাঁ, সীতাব রায়কে পদচ্যুত করেন এবং নায়েব নাজিম পদ তুলে দেন। অতঃপর গভর্নর ও কাউন্সিলের সদস্যদের নিয়ে 'বোর্ড অব রেভিনিউ' নামক একটি সমিতি গঠন করে তার উপর রাজস্বব্যবস্থা পর্যালোচনা ও পরিচালনার দায়িত্ব অর্পণ করা হয়। রাজস্ব-সংক্রান্ত কাজকর্ম পরিচালনার জন্য প্রতি জেলায় একজন করে ইংরেজ কালেক্টর নিয়োগ করা হয়। এই কাজে কালেক্টরকে সাহায্য করার জন্য একজন করে ভারতীয় দেওয়ান নিয়োগ করা হয়। প্রাথমিকভাবে স্থির হয়, নীলামের মাধ্যমে জমি বন্দোবস্ত দেওয়া হবে । যে ব্যক্তি সর্বোচ্চ নিলাম ডাকবেন, তাঁকেই বন্দোবস্তু দেওয়া হবে। এইভাবে 'ইজারাদারী' ব্যবস্থার পত্তন হয় । স্থির হয়, কাউন্সিল সদস্যদের নিয়ে গঠিত একটি 'ভ্রাম্যমাণ কমিটি' (Committee of Circuit) জেলায় জেলায় গিয়ে নিলামের কাজ তত্বাবধান করবেন। হেস্টিংস পরীক্ষামূলকভাবে পাঁচ বছরের জন্য জমি বন্দোবস্তু দেবার সিদ্ধান্ত নেন। পাঁচসালা বন্দোবস্তু প্রথম কার্যকরী করা হয় নদীয়া জেলায়। ক্রমে অন্যান্য জেলায় এই ব্যবস্থা সম্প্রসারিত হয়। নিলামে সর্বোচ্চ করদাতাকে বন্দোবস্ত দেবার সিদ্ধান্ত হয়। তবে নীতিগতভাবে ঠিক ছিল যে, বর্তমান জমিদারদের হাতেই যাতে জমি থাকে তার চেষ্টা করা হবে। কিন্তু বাস্তবক্ষেত্রে তা সম্ভব হয় না, কারণ জমিদার নয় এমন ব্যক্তিরাই ইজারার লোভে অস্বাভাবিক দর হেঁকে নিলাম ধরে নেন। কিছু কিছু জমিদার মর্যাদারস্কার তাগিদে অসম্ভব জেনেও সর্বোচ্চ দর দিতে রাজী হন।


নির্দিষ্ট সময়সীমা অতিক্রান্ত হবার আগে হেস্টিংসের পাঁচসালা বন্দোবস্তের ত্রুটিগুলি প্রকট হয়ে ওঠে। সরকার, জমিদার এবং রায়ত সকলেই এই ব্যবস্থায় ক্ষতিগ্রস্ত হযেছিল। (১) হেস্টিংসের উদ্দেশ্য ছিল নিলামের মাধ্যমে এদেশের রাজস্ব চিত্র অনুধাবন করা এবং পরবর্তী পর্যায়ে যুক্তিপূর্ণ রাজস্ব নির্ধারণ করা । কিন্তু বংশানুক্রমিক জমিদারদের পরিবর্তে, যারা কোনদিন, কোনভাবেই জমির সাথে সম্পর্কিত নয়, এমন সব ব্যক্তির অনুপ্রবেশের ফলে জমির উৎপাদন। ক্ষমতার থেকে বহুগুণে বেশি রাজস্ব নির্ধারিত হয়ে যায় । ফলে হেস্টিংস রাজস্বের প্রকৃত চিত্রও পেলেন না, পরক্ত এই অস্বাভাবিক রাজস্ব সঙ্গত কারণেই অনাদায়ী থেকে গেল। ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হল ইংরেজ সরকার। (২) বহু জমিদার রাজস্বের অস্বাভাবিক হার বৃদ্ধিতে ভীত হয়ে নিলাম-দৌড় থেকে সরে গিয়েছিলেন। অনেকে মান-মর্যাদা রক্ষার তাগিদে বেশি দরেই নিলাম ডেকে জমিদারি রক্ষা করেন। কিন্তু বিপত্তির হাত থেকে তাঁরাও রেহাই পাননি। হুজুরিমল, মদন দত্ত, বিরাট সিং, রামজয় চক্রবর্তীর মত ব্যবসায়ী-ইজারাদার রায়তদের উপর অমানুষিক শোষণ করেও রাজস্ব মেটাতে ব্যর্থ হন। রানী ভবানীর মত দয়াবতী জমিদার নিজের সমস্ত মূল্যবান অলংকার দিয়েও প্রতিশ্রুত রাজস্ব মেটাতে পারেননি। ফলে সেই জমিদারিও দুলাল রায়ের মত ইজারাদারের হস্তগত হয় । (৩) এই ব্যবস্থায় সব থেকে ক্ষতিগ্রস্ত হয় রায়তগণ । এদের স্বার্থ দেখার জন্য কেউ ছিল না। অধিকাংশ ইজারাদারের সাথে জমি বা কৃষকের কোন আত্মিক- সম্পর্ক ছিল না। পূর্বে জমিদার ও রায়ত ছিল পরস্পরের প্রতি সহানুভূতিশীল। এক পারস্পরিক নির্ভরতাবোধ উভয়কে চালিত করত। কিন্তু বর্তমানের ইজারাদার ছিল অন্য ধাতের মানুষ। এদের একমাত্র লক্ষ্য ছিল রায়তদের শোষণ করে যত বেশি সম্ভব টাকা লুট করা। কাউন্সিল সদস্য ফিলিপ ফ্রান্সিস তাই সমালোচনা করে বলেছেন যে, "সরকারের লক্ষ্য হল সব থেকে বেশি রাজস্ব আদায় করা, তার পক্ষে অন্যের জবরদস্তি থেকে রায়তদের রক্ষা করা সম্ভব নয়।"


ভূমি-রাজস্ব ব্যবস্থার ঘন ঘন পরিবর্তন ইংল্যাণ্ডের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকেও বিচলিত করে তুলেছিল। তাই তাঁরাও ১৭৭৬ -এর ডিসেম্বরে এক পত্র দ্বারা হেস্টিংসকে এখনই কোন চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না- নিয়ে আপাতত জমিদারদের সাথে একটা স্বল্পমেয়াদী বন্দোবস্তের পরামর্শ দেন। অবশেষে পাঁচসালা বন্দোবস্তের মেয়াদ পূর্ণ হলে হেস্টিংস আবার 'একসালা বন্দোবস্তু' চালু করেন। ১৭৭৭ থেকে ১৭৮৯ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত একসালা বন্দোবস্তু-প্রথা চালু থাকে। একসালা বন্দোবস্ত দেবার সময় জমিদারদের অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। স্থির হয়, কোন জমিদার রাজস্ব প্রদানে ব্যর্থ হলে তার জমিদারির একাংশ বিক্রি করে তা উসুল করা হবে। রাজস্ব আদায়ের জন্য একসালা বন্দোবস্তু -প্রথাও ত্রুটিমুক্ত ছিল না। আশা করা হযেছিল, জমিদারদের হাতে দায়িত্ব থাকলে ভূমি-রাজস্ব যথাযথভাবে আদায় হবে। কিন্তু কার্যত দেখা গেল, বহু জমিদারের রাজস্ব অনাদায়ী থেকে যাচ্ছে। এর অন্যতম কারণ রাজস্ব নির্ধারণ-ব্যবস্থার ত্রুটি। একসালা বন্দোবস্তের সময় বিগত তিন বছরের নির্ধারিত রাজস্বের গড়কে রাজস্বের পরিমাণ হিসেবে ধরা হয়েছিল । কিন্তু যেহেতু পাঁচসালা বন্দোবস্তে রাজস্বের হার অস্বাভাবিক বেশী ছিল, তাই একসালা বন্দোবস্তের ক্ষেত্রেই সেই ত্রুটির জের চলে আসে। 


তোমাকে অনেক ধন্যবাদ ওয়ারেন হেস্টিংসের এর রাজস্ব ব্যবস্থা আলোচনা কর। এই নোটটি পড়ার জন্য

About the author

Irisha Tania
"আমি সেই মেয়ে, যে শব্দে বাঁচে। কলম আমার অস্ত্র, আর কাগজ আমার স্বপ্নের আকাশ। প্রতিটি অনুভব, প্রতিটি চিন্তা আমি সাজিয়ে রাখি অক্ষরের গাঁথুনিতে। কখনো গল্পে, কখনো কবিতায়, আবার কখনো নিঃশব্দের ভেতরে। আমি লিখি, কারণ লেখার মাঝে আমি নিজেকে খুঁজে পাই। …

Post a Comment

🌟 Attention, Valued Community Members! 🌟