বিশ্বব্যাংক (World Bank)
বিশ্বব্যাংকের ইতিহাস (History of World Bank)
T১৯৪৪ সালের জুলাই মাসে যুক্তরাষ্ট্রের নিউ হ্যাম্পশায়ারের ব্রেটন উডস নামক স্থানে জাতিসংঘ মুদ্রা ও অর্থবিষয়ক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। আর সেই সম্মেলনে দুটি প্রতিষ্ঠান সৃষ্টি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় আইএমএফের পুনর্গঠন ও উন্নয়নের জন্য আন্তর্জাতিক ব্যাংক বা বিশ্বব্যাংক। এই সম্মেলনে আরো অনেক দেশের প্রতিনিধিত্ব থাকলেও দর-কষাকষিতে যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের সুস্পষ্ট প্রাধান্য পরিলক্ষিত হয়। ঐতিহ্যগতভাবে আইএমএফের প্রধান নির্বাচিত হন ইউরোপীয় দেশগুলো থেকে আর বিশ্বব্যাংকের প্রধান নির্বাচিত হন যুক্তরাষ্ট্র থেকে।
আপনি চাইলে এগুলো পড়তে পারেন
বিভিন্ন সমালোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্বব্যাংক ১৯৮৯ সালের শুরুর দিকে বিভিন্ন পরিবেশবাদী সংগঠন ও এনজিওকে তার কার্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত করা শুরু করে। মন্ট্রিল প্রটোকলের সাথে সাথে প্রতিষ্ঠানটি একটি বাস্তবায়ন প্রতিষ্ঠানের সৃষ্টি করে, যার উদ্দেশ্য ছিল পরিবেশে ওজোনস্তরের ক্ষতিসাধন কমিয়ে আনা। ২০১৫ সালের মধ্যে ওজোনস্তরের জন্য ক্ষতিকর রাসায়নিক পদার্থ নিঃসরণ ৯৫% কমিয়ে আনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। এর পর থেকে তথাকথিত 'ছয় কৌশলগত পটভূমি'-এর মধ্যে থেকে বিশ্বব্যাংক পরিবেশ রক্ষার সাথে সাথে উন্নয়নমূলক বিভিন্ন কর্মসূচি চালিয়ে যায়। যেমন ১৯৯১ সালে বিশ্বব্যাংক ঘোষণা করে যে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে কাঠ কাটা বা পরিবেশের ক্ষতি করে, এমন স্থাপনা নির্মাণের জন্য প্রতিষ্ঠানটি কোনো অর্থায়ন করবে না। ম্যালেরিয়াসহ অন্যান্য মহামারি মোকাবেলায় বিশ্বব্যাংক বিশ্বব্যাপী টিকাদান ও সরবরাহ কার্যক্রম শুরু করে। ২০০০ সালে প্রতিষ্ঠানটি 'এইডসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ' ঘোষণা করে এবং ২০১১ সালে স্টপ টিউবারকিউলোসিস পার্টনারশিপে যোগ দেয়। ঐতিহ্যগতভাবে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের মধ্যকার অলিখিত সমঝোতা অনুযায়ী বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে মনোনীত ব্যক্তিবর্গ নির্বাচিত হন যুক্তরাষ্ট্র থেকে। প্রথা ভেঙে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ২৩ মার্চ ২০১২ সালে বিশ্বব্যাংকের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হিসেবে দক্ষিণ কোরিয়ার নাগরিক জিম অং কিমের নাম ঘোষণা করেন। ১৬ এপ্রিল, ২০১২ সালে দাপ্তরিকভাবে কিমকে পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হিসেবে নির্বাচিত করা হয়। গত ৫ এপ্রিল ২০১৯ বিশ্বব্যাংকের ২৫ সদস্যের নির্বাহী পর্ষদ ডেভিড ম্যালপাসকে বিশ্বব্যাংকের ১৩তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে অনুমোদন দিয়েছে। গত ৯ এপ্রিল ২০১৯ থেকে ম্যালপাস আনুষ্ঠানিকভাবে বিশ্বব্যাংকের দায়িত্ব পালন করছেন।
বিশ্বব্যাংক বা আন্তর্জাতিক পুনর্গঠন ও উন্নয়ন ব্যাংক। ইংরেজিতে International Bank for Reconstruction and Development (IRDB) যা World Bank নামেও পরিচিত। ১৯৪৬ সালে ২৫ জুন এই ব্যাংক প্রতিষ্ঠিত হয় এর প্রধান কার্যালয় ওয়াশিংটনে অবস্থিত । বিশ্বব্যাংকে উদ্দেশ্য হলো যুদ্ধ বিধ্বস্ত ইউরোপীয় অর্থনীতির পুনর্গঠনে অর্থ প্রদান করা এবং বিশ্বের অনুন্নত এলাকাসমূহের উন্নয়নে সাহায্য করা । অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিশ্বব্যাংকের ভূমিকা হলো উৎপাদনমুখী উদ্দেশে পুঁজি বিনিয়োগ করা, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের দীর্ঘমেয়াদী ও ভারসাম্যপূর্ণ সূষম উন্নয়ন এবং জরুরি প্রয়োজনীয় প্রকল্পগুলোকে অগ্রাধিকারমূলকভাবে ঋণ প্রদান করা । ব্যাংকের সমস্ত ক্ষমতা প্রতিটি সদস্য রাষ্ট্রের একজন করে গভর্ণর সমন্বয়ে গঠিত বোর্ড অব গভর্ণরদের হাতে ন্যস্ত।
বিশ্বব্যাংক (World Bank)
বিশ্বব্যাংক (World Bank) একটি আন্তর্জাতিক আর্থিক সহায়তাকারী প্রতিষ্ঠান, যা উন্নয়নশীল দেশগুলোর উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের জন্য ঋণ এবং অনুদান প্রদান করে। বিশ্বব্যাংকের অনুষ্ঠানিক লক্ষ্য হলো বিশ্বব্যাপী দারিদ্র্য বিমোচন। এটি সারা বিশ্বের ১৮৯টি সদস্য রাষ্ট্র নিয়ে গঠিত একটি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান। এর প্রধান সদর দপ্তর ওয়াশিংটন ডিসিতে অবস্থিত।
সংগঠনটির আর্টিকেলস অব অ্যাগ্রিমেন্ট (১৬ ফেব্রুয়ারি, ১৯৮৯ সালে এই সংশোধনীটি কার্যকর হয়) অনুযায়ী বৈদেশিক বিনিয়োগ ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্যেকে সহজতর করা এবং পুঁজির বিনিয়োগ নিশ্চিত করা-এই দুটি উদ্দেশ্য হবে বিশ্বব্যাংকের সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রধান নিয়ামক। দুটি প্রতিষ্ঠান নিয়ে বিশ্বব্যাংক গঠিত পুনর্গঠন ও উন্নয়নের জন্য আন্তর্জাতিক ব্যাংক (International Bank for Reconstruction and Development, IBRD) আর আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা (International Development Association, IDA)। বিশ্বব্যাংক বিশ্বব্যাংক গ্রুপের মোট চারটি সদস্যের মধ্যে একটি। অন্য তিনটি প্রতিষ্ঠান হলো আন্তর্জাতিক ফাইন্যান্স করপোরেশন (International Finance Corporation, IFC), মিগা (Multilateral Investment Guarantee Agency, MIGA) ও আইসিএসআইডি (International Centre for Settlement of Investment Disputes, ICSID)।
বিশ্বব্যাংকের উদ্দেশ্য (Purposes of World Bank)
- বিশ্বব্যাংকের বর্তমান প্রাথমিক ফোকাস ছয়টি কৌশলগত থিমকে কেন্দ্র করে।
- দরিদ্রতম দেশগুলো: দারিদ্র্যতা হ্রাস এবং দরিদ্রতম দেশগুলোতে, বিশেষত আফ্রিকায় টেকসই বৃদ্ধি। ভঙ্গুর অবস্থাসম্পন্ন দেশসমূহ: ভঙ্গুর রাষ্ট্রগুলোর বিশেষ চ্যালেঞ্জগুলোর সমাধান করা।
- মধ্যম আয়ের দেশ মধ্যম আয়ের দেশগুলোর জন্য উন্নয়ন কার্যক্রমের পাশাপাশি অর্থায়নের সাথে বিকাশের সমাধান।
- বৈশ্বিক পণ্য জলবায়ু পরিবর্তন, সংক্রামক রোগ, বাণিজ্য ইত্যাদির মতো জাতীয় সীমানা অতিক্রমকারী আঞ্চলিক এবং বৈশ্বিক ইস্যুগুলোকে সম্বোধন করা।
- আরব বিশ্ব: আরব বিশ্বে বৃহত্তর উন্নয়ন ও সুযোগ সৃষ্টি।
- জ্ঞান ও শেখা: বিশ্বব্যাপী উন্নয়নের পক্ষে সমর্থন করার জন্য সেরা জ্ঞান অর্জন করা।
বিশ্বব্যাংকের প্রধান চ্যালেঞ্জসমূহ (Major Challenges of World Bank)
আইএমএফের মতো বিশ্বব্যাংকের সমালোচক ও সমর্থক উভয়ই রয়েছে। নিউ আমেরিকান নেশন এবং নিউ ইয়র্ক টাইমসের এনসাইক্লোপিডিয়া অনুসারে বিশ্বব্যাংক নিম্নলিখিত কারণগুলোর জন্য মূলত সমালোচিত, যথা:
- প্রশাসনিক অক্ষমতা।
- অদক্ষ বা দুর্নীতিগ্রস্ত দেশগুলোকে পুরস্কৃত করা বা সহায়তা করা: স্থানীয় উদ্যোগের চেয়ে বড় প্রকল্পগুলোতে মনোনিবেশ করা:
- তত্ত্ব এবং অনুশীলনের নেতিবাচক প্রভাব:
- জি-৭ দেশের আধিপত্য।