মন্ত্রীমিশনের পরিকল্পনা বা প্রস্তাব কী ছিল?
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন সময় থেকেই ভারতের রাজনৈতিক অবস্থার দ্রুত অবনতি ঘটতে থাকে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর ভারতে গণ-আন্দোলন তীব্র হয়ে ওঠে। আজাদ হিন্দ ফৌজের সেনানীদের বিচারকে কেন্দ্র করে সারা ভারতে ভীষণ ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। নৌ-বিদ্রোহ, বিমানবাহিনীতে ধর্মঘট প্রভৃতি ঘটনায় ব্রিটিশ সরকার উপলব্ধি করে ভারতে তাদের দিন ফুরিয়ে এসেছে। অবস্থার চাপে তারা ভারতীয়দের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে এবং ভারতে মন্ত্রীমিশন পাঠায়।
এরূপ পরিস্থিতিতে নতুন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ক্লিমেন্ট এটলী ভারতের রাজনৈতিক সমস্যার সমাধানের জন্য তাঁর মন্ত্রীসভার তিনজন সদস্য- ভারত-সচিব লর্ড প্যাথিক লরেন্স, বাণিজ্য-সচিব স্যার স্ট্যাফোর্ড ক্রীপস এবং নৌ-সচিব এডি আলেকজান্ডারকে ভারতে পাঠান। এই উচ্চ-ক্ষমতাসম্পন্ন দলটি 'মন্ত্রীমিশন' নামে - পরিচিত। ১৯৪৬ সালে নৌ-বিদ্রোহ শুরু হওয়ার পরদিনই প্রধানমন্ত্রী এটলি ভারতে মন্ত্রীমিশন পাঠানোর কথা ঘোষণা করেন।
১৯৪৬ সালের ২৪মার্চ মন্ত্রীমিশনের সদস্যরা ভারতে আসেন। এরপর দীর্ঘ সাত সপ্তাহ ধরে ভারতের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও ব্যাক্তিত্বের সাথে বহু বৈঠক করে ১৬মে মন্ত্রীমিশন তাদের পরিকল্পনা বা প্রস্তাব ঘোষণা করে। এই প্রস্তাবে বলা হয়-
- ব্রিটিশ ভারত ও দেশীয় রাজ্যগুলি নিয়ে একটি যুক্তরাষ্ট্র গঠন করা হবে।
- কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক সরকারের মধ্যে ক্ষমতার বণ্টন করা হবে।
- কেন্দ্রের হাতে থাকবে পররাষ্ট্র, প্রতিরক্ষা ও যোগাযোগ ব্যবস্থা।
- প্রদেশগুলিতে পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন প্রবর্তিত হবে।
- ভারতের হিন্দুপ্রধান প্রদেশগুলিকে 'ক' শ্রেণী, মুসলিম প্রধান প্রদেশগুলিকে 'খ' শ্রেণী এবং আসাম ও বাংলাকে 'গ' শ্রেণীতে বিভক্ত করা হবে।
- প্রদেশগুলি নিজেদের শাসনতন্ত্র নিজেরাই তৈরী করবে।
- নতুন সংবিধান রচনার জন্য প্রত্যেক শ্রেণীর নির্বাচিত প্রতিনিধিদের নিয়ে। একটি গণ-পরিষদ গঠন করা হবে।
- নতুন সংবিধান রচিত না হওয়া পর্যন্ত একটি অন্তবর্তীকালীন সরকার গঠন করা হবে।
একমাত্র শিখ সম্প্রদায় ব্যতীত ভারতের অন্যানা রাজনৈতিক দল যেমন- কংগ্রেস, মুসলীম লীগ প্রভৃতি এই প্রস্তাব মেনে নেয়। এরপর মন্ত্রীমিশনের সদস্যরা ২৯জুন ভারত ত্যাগ করেন।