ভিয়েতনামের যুদ্ধে মার্কিন হস্তক্ষেপ এর প্রকৃতি আলোচনা কর অথবা, ভিয়েতনামের মুক্তিযুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ আলোচনা কর

ভিয়েতনামের যুদ্ধে মার্কিন হস্তক্ষেপ
১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দে জেনভা সম্মেলন দ্বারা ভিয়েতনাম সমস্যা স্থায়ী সমাধান করতে পারেননি ৷ তবে এই চুক্তি ভিয়েতনামের যুদ্ধের একটি অধ্যায়ের অবসান ঘটিয়ে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছিল ৷ ইন্দোচীন থেকে ফ্রান্স দূরে গেলেও সেখানে সাম্যবাদী দ্রুত প্রচার করতে থাকলে আমেরিকা ভিয়েতনামকে নিয়ে বিশেষ আগ্রহী হয়ে উঠেছিল ৷ মার্কিন প্রেসিডেন্ট আইজেন হাওয়ার ভিয়েতনামের ঠান্ডা লড়াই এর সূত্রপাত করে ৷ ইন্দোচীনে হো চি মিন এর প্রভাব প্রতিপত্তকে আটকানোর জন্য ফরাসি নিয়ন্ত্রণাধীন ন-দিন- ডিএমকে 1955 খ্রিস্টাব্দে অক্টোবর মাসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাহায্যে দক্ষিণ ভিয়েতনামের রাষ্ট্রপতি পদে বসানো হয় এবং ভিয়েতনাম প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠার ঘোষণা করে নিজেকে এই প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রপতি রূপে ঘোষণা করেন ৷ হো চি মিন এর উত্তর ভিয়েতনামের গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র সরকার গণভোটে রাজি হলেও দক্ষিণ ভিয়েতনামের সরকার এই ভোটে রাজি ছিল না ৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্ররোচনায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দুই ভিয়েতনামের পুনর্মিলনের কাজে কর্মগত বাধার সৃষ্টি করেছিল এবং এর ফলে ভিয়েতনামের এক ভয়াবহ গৃহযুদ্ধের উদ্ভব হয় ৷
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ভিয়েতনামে সাম্যবাদের প্রসার প্রতিরোধের জন্য দিয়েম সরকারকে প্রচুর পরিমাণে আর্থিক ও সামরিক সাহায্য দিয়ে অঙ্গীকার করেন এবং দক্ষিণ ভিয়েতনামের একটি মার্কিন সামরিক মিশন বসানো হয় । দিয়েম সরকারের কাছে বার্ষিক মার্কিন সাহায্যের পরিণাম দাঁড়ায় ৩০০ মিলিয়ন ডলার ৷ এইভাবে দক্ষিণ ভিয়েত নামে সাম্যবাদ বিরোধী একটি কেন্দ্র গড়ে ওঠে ৷ এর জন্যই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভিয়েতনাম কে বাড়তি গুরুত্ব দিয়েছিলেন ৷
হো-চি-মিন সোভিয়েত ইউনিয়ন ও গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের সমর্থন লাভ করে এবং শক্তি বৃদ্ধির জন্য আর্থসামাজিক সংস্কার কর্মসূচি গ্রহণ করে ৷ হো-চি-মিন উত্তর ভিয়েতনামে নানা ধরনের সংস্কার ও জমি বন্টনের মাধ্যমে জনগণের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন । কিন্তু দক্ষিণ ভিয়েতনামের পরিস্থিতি অবশ্যই খারাপ ছিল ৷এখানে জনগণের কোন মৌলিক অধিকার ছিল না ৷ দিয়েম সরকার 1956 খ্রিস্টাব্দের নির্বাচনের বিরোধিতা করলে সমগ্র ইন্দোচীন প্রবল বিক্ষোভ দেখা দেয় এমন কি বৌদ্ধ সন্ন্যাসীরাও এই সরকারের বিরোধিতা করতে থাকেন ৷ ১৯৬০ খ্রিস্টাব্দের ভিয়েতনামে জাতীয় মুক্তি ফন্ট গঠিত হয় ৷
জাতীয় মুক্তিফন্ড গঠিত হবার পর 1960 খ্রিস্টাব্দে থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভিয়েতনামের আরো বেশি করে সংশ্লিষ্ট হয়ে পড়ে ৷ ইতিমধ্যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট আইজেন হাওয়ার দক্ষিণ ভিয়েতনামের পরোক্ষভাবে হস্তক্ষেপ নীতি গ্রহণ করেন ৷ এরপর ১৯২৬ খ্রিস্টাব্দে মার্কিন বিমান বাহিনী ভিয়েত কং বাহিনীর অগ্রগতি রোধের জন্য দক্ষিণ ভিয়েতনাম বাহিনীর সঙ্গে যৌথভাবে আক্রমণ শুরু করে ৷ দক্ষিণ বিয়েতনামে দিয়েন সরকার ছিল দুর্নীতিগ্রস্ত ও অত্যাচারের প্রতীক তাই দক্ষিণ ভিয়েতনামের দিয়েম সরকারের বিরুদ্ধে এই গণ-আন্দোলন প্রবল হয়ে ওঠার এক সামরিক অভ্যুত্থানের দ্বারা ১৯৬৩ খ্রিস্টাব্দে নভেম্বর মাসে দিন সরকারের পতন ঘটে ৷ ১৯৬৫ খ্রিস্টাব্দে জেনারেল নগুয়েন ভ্যান হিউম দক্ষিণ ভিয়েতনামের ভাগ্য নিয়ন্ত্রকে পরিণত হন ৷
দক্ষিণ ভিয়েতনামকে কমিউনিস্টদের হাত থেকে সুরক্ষিত করার উদ্দেশ্যে মার্কিন প্রেসিডেন্ট কেনেডি ভিয়েতনামের আরো বেশি মাত্রায় যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েন ৷ মার্কিন রাষ্ট্রপতি লিন্ডন জনরসের আমলে ভিয়েতনামের মার্কিন হস্তক্ষেপের পরক্ষর চরিত্র থেকে প্রত্যক্ষ স্থানে উন্নতি হয় ৷ ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে দক্ষিণ ভিয়েতনাম বিমানবাহিনীর প্রধান নগুয়েন উত্তর ভিয়েতনামের উপর বিমান আক্রমণের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন, শুধু বিমান বাহিনী নয় আমেরিকার স্থলবাহিনীকে ও উত্তর ভিয়েতনামের বিরুদ্ধে প্রয়োগ করা হয় ৷ জনগণের এই জাতীয় কার্যকলাপের দরুন ভিয়েতনামের গৃহযুদ্ধ কার্যত একটি বৃহত্তর আন্তর্জাতিক সমস্যায় পরিনত হয় ৷
জনগণের ভিয়েতনাম যুদ্ধনীতি ঘরে বাইরে সর্বত্র প্রবলভাবে সমালোচক সম্মুখীন হয়েছিল ৷ ভিয়েতনাম যুদ্ধ বন্ধের ব্যাপারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রচন্ড বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয় ৷ সমগ্র বিশ্বব্যাপী যুদ্ধের ব্যাপারে প্রতিবাদের ঝড় বয়ে গিয়েছিল নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট নিন্ডন ভিয়েতনাম প্রসঙ্গে নতুন নীতি গ্রহণ করেন আর ভিয়েতনাম সম্পত্তির নতুন নীতি "ভিয়েতনামি করণ" নামে পরিচিত । এই নীতিতেই আমেরিকার সৈন্যবাহিনীর পরিবর্তে ভিয়েতনামের সৈন্যবাহিনীকে কাজে লাগানো হয় ,এর পাশাপাশি ভিয়েতনাম থেকে ধীরে ধীরে মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের নীতি গ্রহণ করা হয় । তবে উত্তর ভিয়েতনামের ওপর বোমা বর্ষণের মাত্রা বাড়ানোর নির্দেশ দেওয়া হয় । এর সাথে সাথে লাউস ও কম্বোডিয়ায় রাসায়নিক অস্ত্র নিক্ষেপ করা হয় । এভাবে রাসায়নিক অস্ত্র প্রয়োগ করে আমেরিকা ভিয়েতনামের হাজার হাজার সামরিক ও অসামরিক মানুষকে হত্যা করেছিল ৷
১৯৭২ খ্রিস্টাব্দে ভিয়েতনাম বাহিনী প্রচন্ড আক্রমণের মুখে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ছিনতাই পড়ে শেষ পর্যন্ত আমেরিকা অগ্রাসে মনোভাব ত্যাগ করতে বাধ্য হন । ১৯৭৩ খ্রিস্টাব মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দুই ভিয়েতনাম এবং ভিয়েতকং এর মধ্যে যুদ্ধ বিরতি চুক্তি স্বাক্ষর হয় ৷ এই চুক্তি অনুসারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দক্ষিণ ভিয়েতনাম থেকে সৈন্য প্রত্যাহার করে নিতে বাধ্য হন ৷ ১৯৭৩ খ্রিস্টাব্দে শেষভাগ এবং ১৯৭৪ খ্রিস্টাব্দের উত্তর ও দক্ষিণ ভিয়েতনাম এর মধ্যে যুদ্ধ অব্যাহত ছিল, দক্ষিণ ভিয়েতনামদের প্রায় সকল অংশ জাতীয় মুক্তিফন্ডের দখলে আসেন শেষ পর্যন্ত ১৯৭৬ খ্রিস্টাব্দে উত্তর ও দক্ষিণ ভিয়েতনাম ঐক্যবদ্ধ হয়ে জন্ম নেয় সোসালিস্ট রিপাবলিক অফ ভিয়েতনাম এর রাষ্ট্রপতি হন ফাম- ফান -দং ৷
সম্ভাব্য প্রশ্নঃ
- আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র কেন ভিয়েতনাম যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে? এই যুদ্ধে আমেরিকা কেন পরাজিত হয়?
- ভিয়েতনামে আমেরিকা হস্তক্ষেপ করেছিল কেন? ভিয়েতনামের বিরুদ্ধে যুদ্ধে আমেরিকার পরাজয়ের কারণ সংক্ষেপে বিশ্লেষণ কর?
- আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র কেন ভিয়েতনাম যুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছিল ?ভিয়েতনাম যুদ্ধে আমেরিকার পরাজয়ের কারণ সংক্ষেপে বিশ্লেষণ কর
তোমাকে অনেক ধন্যবাদ ভিয়েতনামের যুদ্ধে মার্কিন হস্তক্ষেপ এর প্রকৃতি আলোচনা কর অথবা, ভিয়েতনামের মুক্তিযুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ আলোচনা কর এই নোটটি পড়ার জন্য