দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধত্তর কালে পূর্ব ইউরোপের সোভিয়েতকরণ প্রক্রিয়া বলতে কী বোঝো?

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধত্তর কালে পূর্ব ইউরোপের সোভিয়েতকরণ প্রক্রিয়া
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সোভিয়েত রাশিয়া একটি মহাশক্তিধর রাষ্ট্র রূপে আবির্ভূত হয় ৷ সমাজতান্ত্রিক শিবিরের নেতা হিসাবে সোভিয়েত ইউনিয়ন স্বীকৃত পেয়েছিলেন ৷ পূর্ব ইউরোপের ওপর ইউরোপীয় সাম্রাজ্যবাদের অভিনব করেছিল হিটলার , পূর্ব ইউরোপের জার্মান সাম্রাজ্য বিস্তারের কথা ভেবেছিলেন ৷ আবার উনিশ শতকে এই অঞ্চলের ওপর জাতীয়তাবাদের প্রভাব পড়েছিল ৷ বিংশ শতকের গোড়ার দিকে অটোমান তুর্কি সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে লড়াই করে সার্বিয়া ,গ্রিস, রোমানিয়া ও বুলগেরিয়া স্বাধীনতা অর্জন করেছিল ৷ কিন্তু এদের মধ্যে ভালো সম্পর্ক ছিল না । পোলান্ড, হাঙ্গেরি ও চিকাস্লোবিয়া রাজনৈতিক জটিলতা পশ্চিমে শক্তিবর্গ পরিস্থিতি জটিলতা উপলব্ধি করে সোভিয়েত রাশিয়ার প্রাধান্য মেনে নিয়েছিলেন ৷ তাছাড়া যুদ্ধের সময় লাল ফৌজ এই সম্পূর্ণ অঞ্চল দখল করেন ৷ ১৯৪৫ সালে ইয়াল্টা সম্মেলনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট রুশ ভেল্ট ইউরোপ থেকে সৈন্যদের অপসারণের সিদ্ধান্ত দিয়েছিলেন স্ট্যালিন এই পরিস্থিতিতে সুযোগ নিয়েছিলেন ।
পূর্ব ইউরোপের দুর্দশা লক্ষ্য করে স্ট্যালিন এখানে সোভিয়েত প্রাধান্য সাধনের সিদ্ধান্ত কেন নেন ৷ পূর্ব ইউরোপে রুশ আধিপত্য প্রতিষ্ঠা তথা সামাবাদের প্রসারের পিছনে রাশিয়ার প্রকৃত উদ্দেশ্য কি ছিল তা নিয়ে ঐতিহাসিকদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। রুশ রাষ্ট্রপ্রধান স্তালিন নিজেই স্বীকার করেছেন যে, কোনো বিশেষ মতাদর্শের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে তিনি পূর্ব ইউরোপের সোভিয়েতীকরণের কাজে অগ্রসর হননি।
তিনি উপলব্ধি করেন যে পূর্ব ইউরোপের রাশিয়ার অধীনে থাকলে তার দেশ নিরাপদ হবে, পূর্ব ইউরোপ নিয়ে স্ট্যালিন একটি নিরাপত্তা বলয় গঠন করতে চেয়েছিলেন ৷ যুদ্ধবিধ্বস্ত রাশিয়ার পূর্ব গঠনের জন্য শান্তি বজায় রাখার প্রয়োজন ছিল ৷ স্ট্যানিল আরো মনে করেন শুধু সামরিক নিরাপত্তা নয় পূর্ব ইউরোপের দেশগুলি রাশিয়ার অর্থনৈতিক পুনর জীবনের সহায়তা দিতে পারে ৷ এমনকি এই সব দেশের সোভিয়েত শিল্পের উৎপন্নের বাজারও পাওয়া যাবে । এর ফলে রাশিয়ার বিশ্ব রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে পারে ৷
পূর্ব ইউরোপের সোভিয়েত প্রাধান্য স্থাপনের ব্যাপারে রাশিয়া কোন সুনির্দিষ্ট ছিল না । এখানকার চারটি দেশ যুগশ্লেভিয়া ,বুলগেরিয়া, চেকোস্লোবিয়া ও আলবানিয়া কমিউনিস্ট আদর্শে বিশ্বাসী ছিল ৷ তবে যুদ্ধের সময় হাঙ্গেরি, বুলগেরিয়া ও রোমানিয়া ছিল জার্মানির মিত্র দেশ এরা সতুত্তর সোভিয়েত বিরোধী ছিল ৷ তবে অন্যদিকে চেকোস্লোবিয়া ও পোল্যান্ডের সঙ্গে রাশিয়ার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল ৷ পরবর্তিকালে পূর্ব ইউরোপের এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় যেখানে পশ্চিমী শক্তিবর্গ ইচ্ছা থাকলেও সোভিয়েত প্রাধান্য স্থাপনের বিরোধিতা করতে পারেনি ৷
১৯৪৭ সালের মার্চ মাসে ট্রুম্যান নীতি ঘোষিত হয়, পরে মার্শাল পরিকল্পনার মাধ্যমে অর্থনৈতিক পুনর্গঠনের পরিকল্পনা নেয়া হয় ৷ রাশিয়া মার্কিন পরিকল্পনা গ্রহণ করেননি, বরং এই পরিকল্পনার প্রতিহত করার জন্য তিনটি কর্মসূচি গ্রহণ করেন , পূর্ব ইউরোপের অ কমিউনিস্ট রাষ্ট্র ব্যবস্থার অবসান ঘটানো হয় ৷ সোভিয়েত বিরোধী যুগশ্লেভিয়াকে বহিষ্কার করা হয় ৷ পশ্চিমী দেশ গুলির বিরুদ্ধে সংঘাতের নীতি অনুকরণ করা হয়, মার্শাল পরিকল্পনা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়ে স্ট্যানিল আতঙ্কিত বোধ করেন ৷ তিনি মনে করেন সমগ্র পূর্ব ইউরোপের সোভিয়েত প্রভাব ক্ষুন্ন হবে ৷ অর্থাৎ চেকোস্লোবিয়া সাম্যবাদ ও পুঁজিবাদ পাশাপাশি বহমান থাকবে ৷ ১৯৪৮ সালে চেক প্রধানমন্ত্রী ক্রিমের গল্ড অফ বিরোধী দমন করে একদলীয় শাসন স্থাপন করেন ৷ এই কারণে পশ্চিম ইউরোপে আতঙ্কে সৃষ্টি হয় ৷ সাম্যবাদকে প্রতিহত করার জন্য পশ্চিমে দেশ গুলি সংকল্পবদ্ধ হয়েছিলেন ৷
পশ্চিমী দেশগুলির সোভিয়েত বিরোধী অবসান নিয়েছিলেন ৷ তার পূর্ব ইউরোপের দেশগুলিতে জাতীয়তাবাদী সশতন্ত্রবোধ বিকাশ ঘটতে থাকে ৷ পোল্যান্ড ও যুগশ্লেভিয়া স্পষ্ট হয়ে উঠেছিলেন ৷ স্ট্যানিল পোল্যান্ডের ওপর প্রভাব বিস্তার করেছিলেন কিন্তু, যুগশ্লেভিয়ার উপর আধিপত্য বিস্তার করতে পারেনি ৷ যুগশ্লেভিয়ার স্বতন্ত্রবোধ স্ট্যানিলকে ক্ষুব্ধ করেছিল ৷ পূর্ব ইউরোপের সাতটি কমিউনিস্ট পার্টি কমিকন গঠন করেন ৷ এই সংস্থার মাধ্যমে ইউরোপের সাম্যবাদী দলগুলির মধ্যে সংঘাতিকরভাবে বজায় রাখার চেষ্টা করেন ৷ ১৯৪৮ সালে টিটো কমিকন থেকে বহির্ভূত হন এরপর পশ্চিমে দেশগুলির সংস্থা বাণিজ্য সম্পর্ক গঠন করেন ৷
১৯৫০ সাল নাগাদ পূর্বে ইউরোপের সোভিয়েত পাধান্য স্থাপিত হয় ৷ মার্কিন পুঁজিবাদের প্রসার রোধ করে সাম্যবাদী জোটকে অক্ষত রাখার লক্ষ্যই মূলত রাশিয়া পূর্ব ইউরোপের প্রাধান্য বিস্তারে উদ্যোগী হয় ৷ তবে পূর্ব ইউরোপে সোভিয়েত রাশিয়ার যে রাষ্ট্র ব্যবস্থা স্থাপন করেছিল তার নাম গণপ্রজাতন্ত্র ৷ এগুলি পুরোপুরি সাম্যবাদী ছিল না ৷ স্ট্যানিল এইসব দেশ গ্রাস করেননি কারণ এই দেশগুলিকে রাশিয়া অন্তর্ভুক্ত করা হলে পশ্চিমের দেশগুলি আক্রমণাত্মক হয়ে উঠবে ৷ ইউরোপের দেশগুলি সদস্য রাশিয়া ছিল না ৷ এইজন্য পশ্চিমী দেশগুলির পর্যবেক্ষকরা এর নাম দিয়েছেন মুখোশ পরা সাম্রাজ্যবাদ ৷
সম্ভাব্য প্রশ্নঃ
- পূর্ব ইউরোপের সোভিয়েতীকরণের কারণ কী ছিল?
- পূর্ব ইউরোপীয় দেশগুলিতে রাশিয়ান নেতৃত্বে সাম্যবাদের বিস্তার সম্বন্ধে আলোচনা কর
- দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর রাশিয়া কিভাবে পূর্ব ইউরোপে তার প্রাধান্য স্থাপন করেছিল
- রোমানিয়া চেকোশ্লোভাকিয়া, হাঙ্গেরি ও যুগশ্লোভিয়া সোভিয়েত করনের প্রক্রিয়া আলোচনা কর
তোমাকে অনেক ধন্যবাদ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধত্তর কালে পূর্ব ইউরোপের সোভিয়েতকরণ প্রক্রিয়া বলতে কী বোঝো? এই নোটটি পড়ার জন্য