১৯৯০-১৯৯১ খ্রিস্টাব্দের উপসাগরীয় যুদ্ধ সম্বন্ধে আলোচনা করো।

১৯৯০-১৯৯১ খ্রিস্টাব্দের উপসাগরীয় যুদ্ধ সম্বন্ধে আলোচনা করো।
১৯৯০ খ্রিস্টাব্দে ইরাক-ইরানের যুদ্ধের অবসান এবং উভয়পক্ষের মধ্যে শান্তি স্থাপনের কিছুদিন পরেই ১৯৯০ খ্রিস্টাব্দের আগস্ট মাসে ইরাকের প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেন প্রতিবেশী রাষ্ট্র কুয়েইত আক্রমণ করেন । সাদ্দাম হোসেনের কুয়েইত আক্রমণের কারণগুলো ছিল--
ক) সাদ্দাম হোসেনের মূল উদ্দেশ্য ছিল কুয়েইতের ধনসম্পদ অধিকার করা । ইরাক-ইরানের যুদ্ধের পর ইরাকে চরম অর্থসঙ্কট দেখা দেয় । আয়তনে ক্ষুদ্র হলেও খনিজ তৈলসম্পদে কুয়েইত খুবই সমৃদ্ধ । এই সম্পদ হস্তগত করার জন্য সাদ্দাম হোসেন সচেষ্ট হয়ে ওঠেন ।
খ) সাদ্দাম দাবি করেন যে ঐতিহাসিকভাবে কুয়েইত ইরাকের অবিচ্ছেদ্য অংশ। যদিও প্রকৃতপক্ষে ১৮৯৯ খ্রিস্টাব্দ থেকেই কুয়েইত ব্রিটিশের রক্ষণাধীন একটি স্বতন্ত্র রাষ্ট্রে পরিণত হয় এবং প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরে ইরাক রাষ্ট্রটি গঠিত হয়।
গ) সাদ্দাম হোসেনের ধারণা ছিল যে কুয়েইতে ইরাকের আক্রমণ শুরু হলে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে কোনপ্রকার প্রতিক্রিয়া দেখা দেবে না এবং অনায়াসেই ইরাকের সৈন্য কুয়োইতের ওপর কর্তৃত্ব সুপ্রতিষ্ঠিত করার সুযোগ পাবে । তাছাড়া ইরাকের সৈন্যবাহিনীও মধ্যপ্রাচ্যের সর্বাপেক্ষা শক্তিশালী সৈন্যবাহিনী হিসাবে পরিচিত ছিল। সাদ্দাম হোসেন আরও বিশ্বাস করতেন যে পশ্চিমী রাষ্ট্র গোষ্ঠী তাঁর প্রতি সহানুভূতিসম্পন্ন এবং ইরানের যুদ্ধের সময় ইরাকের কাছে সশস্ত্র বিক্রি করতে তারা কোন আপত্তি করেনি । এমনকি স্বাধীনতার জন্য ও উত্তরাংশের কার্ডদের নিষ্ঠুরভাবে দমন করার সময় বিশ্বজনমত তার বিরুদ্ধে কোন আন্দোলন গড়ে তোলেনি ।
কিন্তু ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার মতো কুয়েইত আক্রমণ করার সময় সাদ্দাম হোসেন মারাত্মক ভুল করেন । মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বুশ কুয়েইত থেকে ইরাকীদের বহিষ্কৃত করার নেতৃত্ব গ্রহণ করেন। তাছাড়া সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ ইরাকের সঙ্গে বাণিজ্যের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে এবং ইরাকের আয়ের প্রধান উৎস খনিজ তৈল আমদানির পরিমাণ হ্রাস করে । ১৯৯১ খ্রিস্টাব্দের ১৫ জানুয়ারি সাদ্দাম হোসেন কুয়েইত থেকে তাঁর সৈন্য অপসারিত না করলে সম্মিলিত জাতিপুঞ্জ প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের এই সতর্কবাণীর ওপর কোন প্রকার গুরুত্ব আরোপ করার পক্ষপাতী ছিলেন না সাদ্দাম হোসেন । কিন্তু মার্কিন প্রেসিডেন্ট বুশ এবং ইংল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী মার্গারেট থ্যাচার সাদ্দাম হোসেনের ক্ষমতা খর্ব করার জন্য প্রস্তুতি শুরু করেন। সাদ্দামের শক্তিবৃদ্ধিতে আতঙ্কিত সৌদি আরব, সিরিয়া ও মিশরও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও গ্রেট ব্রিটেনের নীতি সমর্থন করে সম্মিলিত জাতিপুঞ্জকে কুয়েতের স্বার্থে দ্রুত হস্তক্ষেপ করতে অনুরোধ জানায় ।
এইরূপ পরিস্থিতিতে সাদ্দাম হোসেন কূটনীতির সাহায্যে আত্মসম্মান রক্ষার জন্য নানাভাবে চেষ্টা করেন। কিন্তু ইতিমধ্যে সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের নির্দেশে ৬,০০,০০০ সৈন্যের দ্বারা গঠিত একটি আন্তর্জাতিক বাহিনী সৌদি আরবে এসে উপস্থিত হয়। প্রায় ত্রিশটি দেশের সৈন্য.. এই আন্তর্জাতিক বাহিনীতে যোগ দেয় এবং বহু দেশ অর্থসাহায্য করে। সম্মিলিত জাতিপুঞ্জের দ্বারা স্থিরীকৃত দিন অর্থাৎ ১৯৯১ খ্রিস্টাব্দের ১৫ জানুয়ারি অতিক্রান্ত হওয়ার পর 'অপারেশন ডেজার্ট স্টর্ম' (Operation Desert Storm) নামে পরিচিত এই যুদ্ধাভিযান শুরু হয়। আন্তর্জাতিক সৈন্যবাহিনী দুটি পর্যায়ে এই যুদ্ধ পরিচালনা করে। প্রথম পর্যায়ে ইরাকের রাজধানী বাগদাদের ওপর নির্বিচারে বোমাবর্ষণ করা হয় এবং রাস্তাঘাট, সেতু প্রভৃতি ধ্বংস করে যোগাযোগ ব্যবস্থা সম্পূর্ণভাবে বিপর্যস্ত করা হয়। ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে যুদ্ধের দ্বিতীয় পর্যায় শুরু হয় এবং এই পর্যায়ে আক্রমণকারীদের প্রধান লক্ষ্য ছিল ইরাকের সৈন্যবাহিনী। মাত্র চারদিনের মধ্যে ইরাকী সৈন্য কুয়েইত থেকে বহিষ্কৃত হয়। সাদ্দাম হোসেন পরাজয় স্বীকার করে নেন এবং কুইয়েত পুনরায় স্বাধীন রাষ্ট্রে পরিণত হয়। এই যুদ্ধের ফলে ইরাক খুবই ক্ষতিগ্রস্ত হয় ।
তোমাকে অনেক ধন্যবাদ ১৯৯০-১৯৯১ খ্রিস্টাব্দের উপসাগরীয় যুদ্ধ সম্বন্ধে আলোচনা করো। এই নোটটি পড়ার জন্য