ইমানুয়েল ওয়ালারস্টাইনের বিশ্ব ব্যবস্থা তথ্য সম্পর্কে আলোচনা কর।
আন্তর্জাতিক রাজনীতি হলো একটি অবিরত দন্তের ক্ষেত্রে আর ৷ এই দ্বন্দ্ব বা সংঘর্ষ ঘটে মূলত দুই অর্থনৈতিক শ্রেণীর মধ্যে ৷ রাষ্ট্র হল এই সংঘাতের উপলক্ষ মাত্র ৷ শক্তিশালী শ্রেণীর দ্বারা দুর্বলতার শ্রেণীর শোষণ হলো বিশ্ব রাজনীতির চূড়ান্ত সত্য ৷ অর্থাৎ মার্কসবাদের মূল সূত্রটি রয়েছে বিশ্ব রাজনীতির মধ্যে ৷
বিশ্বব্যবস্থা তথ্যের মুখ্য প্রবক্তা হলেন ইমানুয়েল সু ওয়ামারস্টাইন ৷ তার মতে সমাজ বিবর্তনের ইতিহাসে দুই ধরনের বিশ্ব ব্যবস্থা লক্ষ্য করা যায় ৷ বিশ্ব সাম্রাজ্য আর বিশ্ব অর্থনীতি ৷ এই দুই ব্যবস্থার মূল পার্থক্য হল এই যে বিশ্ব সাম্রাজ্যের কেন্দ্র ও প্রান্তবর্তী অঞ্চলে অর্থনৈতিক সম্পদের বন্টন বা কেন্দ্রিকরণ ঘটে থাকে কেন্দ্রীয় রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের তথা বল প্রয়োগের মাধ্যমে ৷ আর বিশ্ব অর্থনীতির ক্ষেত্রে এই ধরনের কোন কেন্দ্রীয় কর্তৃত্বের অস্তিত্ব লক্ষ্য করা যায় না ৷ সেখানে সম্পদের বন্টন ঘটে থাকে বাজার ব্যবস্থা দ্বারা ৷ কিন্তু বন্টন যেভাবেই হোক না কেন উভয় ক্ষেত্রেই প্রান্তবর্তী অঞ্চল থেকে কেন্দ্রীয় অঞ্চলের সম্পদের হস্তান্তর করতে দেখা যায় ৷
ওয়ালারস্টাইল আধুনিক বিশ্ব ব্যবস্থার বৈশিষ্ট্য গুলিকে চিহ্নিত করেন স্থানীয় ও বালিক ভিত্তিতে ৷ স্থানীয় মাত্রাগত দিক থেকে বিশ্ব ব্যবস্থার তিনটি অংশ যথা কেন্দ্র,প্রান্ত ও অর্ধপান্ত ৷ কেন্দ্রীয় অঞ্চলগুলি হল উন্নত অর্থনৈতিক কার্যকলাপের ভরকেন্দ্র ৷ শিল্পপ্রযুক্তি কৃষি ইত্যাদি সব ক্ষেত্রেই তারা অনেক এগিয়ে ৷ অন্যদিকে প্রান্তিক অঞ্চল গুলির ভূমিকা হল কাঁচামাল সরবরাহের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় অঞ্চলের অর্থনৈতিক প্রকৃতির পথে নিয়ে যাওয়া ৷ প্রযুক্তি, শিল্পায়ন শ্রমের মজুরি সমস্ত দিকেই এই প্রান্তিক অঞ্চলগুলি অনেক পিছিয়ে ৷ আবার অর্ধপান্ত হলো সেই অঞ্চল যার মধ্যে কেন্দ্র ও প্রান্ত উভয়ের বৈশিষ্ট্যের সংমিশ্রণ লক্ষ্য করা যায় ৷ এই মিশ্র চরিত্রের জন্য এই অঞ্চল গুলি বিশ্ব পুঁজিবাদী ব্যবস্থার এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ৷
কালি বা কাল গত মাত্রার দিক থেকে বিচার করলে ওয়ালারস্টাইল দুই ধরনের পরিবর্তনের কথা বলেছেন অভ্যন্তরীণ পরিবর্তন আর বিশ্ব প্রতিবাদী ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন । অভ্যন্তরীণ পরিবর্তনের ক্ষেত্রে ক্ষমতার স্তরবিন্যাসের পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায় ৷ আর আমূল পরিবর্তন তখন দেখা দেবে যখন ব্যবস্থার মুখ্য কারকদের দীর্ঘ ও স্বল্পমেয়াদি লক্ষ্য বা আচরণের মধ্যে অসামঞ্জস্যের পরিস্থিতি তৈরি হবে । পুঁজিবাদী ব্যবস্থার উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন যে এই ব্যবস্থার স্বল্প মেয়াদী ক্ষেত্রে শ্রমিককে বেতন কম দিতে পারলেও পুঁজিপতিদের লাভ বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা কিন্তু দীর্ঘমেয়াদি দৃষ্টিতে শ্রমিককে যদি ভোক্তা হিসেবে দেখা যায় তাহলে তার আয় হ্রাস পাওয়ার অর্থ হল সমাজে ভোগের সংকট সৃষ্টি ৷ অর্থাৎ উৎপাদিত পণ্যের ক্রেতার অভাব দেখা দেবে ৷ তার মধ্যে বিশ্ব পুঁজিবাদী ব্যবস্থা বর্তমানে এমন এক সংকটের পর্যায়ে ৷
ওয়ালারস্টাইল মনে করেন বিশ্ব রাজনৈতিক ক্ষমতা মূলত অর্থনৈতিক কাইমোর দ্বারাই নির্ধারিত হয় তার মতে বিশ্ব রাজনীতিতে কোন একটি রাষ্ট্রের হাতে চূড়ান্ত রাজনৈতিক তথা অর্থনৈতিক ক্ষমতা না থাকার জন্যই কেন্দ্র প্রান্ত অর্ধ-পান্তর ভিত্তিক এক বিস্বজনের সামদ বিভাজন ব্যবস্থার উদ্ভব ঘটেছে ৷
ওয়ালারস্টাইনের বিশ্ব ব্যবস্থা তথ্য নানা ধরনের সমালোচনার সম্মুখীন হয়েছে ৷ আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক ব্যবস্থার কেবলমাত্র আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থার দ্বারাই নির্ধারিত হয় এটা গ্রহণযোগ্য নয় ৷ মার্কসীয় বিপ্লবী আদর্শের অতিমাত্রায় বিশ্বস্ত তাই এই তথ্যের গ্রহণযোগ্যতা কে ব্যাহত করেছে ৷ তাছাড়া দক্ষিণ কোরিয়া, সিঙ্গাপুর, চীন, ভারত, ব্রাজিল প্রভৃতি রাষ্ট্র যেগুলি মূলত পশ্চিমে তাদের অর্থনৈতিক সাফল্যের কোন গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা এই তথ্য থেকে পাওয়া যায় না ।