ঠান্ডাযুদ্ধের বিবর্তন যা পর্যায়গুলি আলোচনা করো

ঠান্ডাযুদ্ধের বিবর্তন যা পর্যায়গুলি আলোচনা করো।Discuss the evolution or stages of the Cold War.

 ঠান্ডাযুদ্ধের বিবর্তন যা পর্যায়গুলি আলোচনা করো।

ঠান্ডাযুদ্ধের বিবর্তন যা পর্যায়গুলি আলোচনা করো।Discuss the evolution or stages of the Cold War.


উত্তর:- দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ঠান্ডাযুদ্ধকে কেন্দ্র করে আন্তর্জাতিক রাজনীতি আবর্তিত হয়েছিল। ঠাণ্ডা যুদ্ধ প্রায় সমগ্র বিশ্বকে গ্রাস করেছিল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর পশ্চিমী শক্তির সঙ্গে সোভিয়েত ইউনিয়নের মতপার্থক্য তীব্র হয়। এই মতপার্থক্যের পরিণতি হিসাবে ঠাণ্ডাযুদ্ধের সূচনা হয়। প্রায় পাঁচ দশক ধয়ে আন্তর্জাতিক রাজনীতির প্রার সব ঘটনাতেই ঠাণ্ডা যুদ্ধের প্রভাষ লক্ষ্য করা গিয়েছিল। ওয়াল্টার লিপম্যান সর্বপ্রথম ঠাণ্ডা যুদ্ধ শব্দটি ব্যবহার করেন।


* ঠাণ্ডা যুদ্ধের অর্থ: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরিসমাপ্তির পর আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে দুটি মহাশক্তিধর রাষ্ট্রের আবির্ভাব ঘটে-একটি হল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং অপরটি হল সোভিয়েত ইউনিয়ন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পুজিবাদী শিবিরের নেতা এবং সোভিয়েত ইউনিয়ন সমাজতান্ত্রিক শিবিরের নেতা এই দুই মহাশক্তির মধ্যে রাজনৈতিক মতাদর্শগত লড়াই ঠান্ডা যুদ্ধ নামে পরিচিত। ঠাণ্ডা যুদ্ধ পলতে সশস্ত্র যুদ্ধ নয়, শাস্তিও নয়, বরং অস্বস্তির শাস্তির অবস্থা বোঝায়। ভাই অধ্যাপক বার্নেট ঠান্ডা যুদ্ধকে গরম শান্তি বলে বদল করেছেন।


ঠান্ডা যুদ্ধের বিভিন্ন পর্যায়: বিভিন্ন ঘটনা ঠাণ্ডা যুদ্ধের বিস্তারে সহায়ক হয়েছি ঠাণ্ডা যুদ্ধের বিস্তারকে কয়েকটি পর্যায়ে ভাগ করে আলোচনা করা হল-


আপনি চাইলে এগুলো পড়তে পারেন

>প্রথম পর্যায় (১৯৪৫-৫০): দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর পূর্ব ইউরোপের বিভি দেশে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়। এই দেশগুলির উপর সোভিয়েত ইউনিয়ন তম প্রভাব বিস্তার করে। এতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে পুজিবাদী শিবির অভাত শঙ্কিত হয়ে পড়ে। তারা সোভিয়েতে অগ্রগতি প্রতিরোধ করার জন্য চিন্তাভাবনা শুরু করে। ১৯৪৭ সালে তৎকালীন মার্কিন রাষ্ট্রপতি হ্যারি চুমান "টুম্যান নীতি"র দ্বারা বিশ্বব্যাপী সোভিয়েত আগ্রাসন প্রতিরোধের আভাস দেন। সোভিয়েতকে প্রতিরোধ করতে ১৯৪৭ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মার্শার পরিকল্পনার মাধ্যমে ইউরোপের যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশগুলিকে আর্থিক সাহায্য দানে উদ্যোগী হয়। সোভিয়েত এই পরিকল্পনার বিরোধিতা করে। এই সময় জার্মান সমস্যা ও ঠান্ডা যুদ্ধের বিস্তারে সাহায্য করেছিল। সামরিক দিক থেকে সোভিয়েত ইউনিয়নকে প্রতিরোধ করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পশ্চিম ইউরোপকে নিয়ে ১৯৪৯ সালে সামরিক জোট NATO গঠন করলে ঠাণ্ডা যুদ্ধ ত্বরান্বিত হয়।


>(খ) দ্বিতীয় পর্যায় (১৯৫০-৫৩): ১৯৪৫ থেকে ১৯৫০ সাল পর্যন্ত ঠাণ্ডা যুদ্ধ ইউরোপের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। ১৯৫০ সালের পর ঠাণ্ডা যুদ্ধ এশিয়াতে ছড়িয়ে পড়ে। ১৯৫০ সালে কোরিয়া যুদ্ধের মাধ্যমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়ন পরোক্ষভাবে যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছিল।


>(গ) তৃতীয় পর্যায় (১৯৫৩-৫৯): ১৯৫৩ সালে স্তালিনের মৃত্যুর পয় ক্রুশ্চেভসোভিয়েত ইউনিয়নের রাষ্ট্রপতি হন। তার পররাষ্ট্র নীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হল শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান। কিন্তু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রতি বিরোধপূর্ণ মনোভাব পরিত্যাগ করেনি। এই সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার কয়েকটি দেশের সঙ্গে 'SEAT' চুক্তি স্বাক্ষর করে। এই চুক্তির উদ্দেশ্য ছিল দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় সোভিয়েতের প্রভাস রোধ করা। ১৯৫৫ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পশ্চিম এশিয়ায় কয়েকটি দেশকে নিয়ে যাগদাদ চুক্তি স্বাক্ষর করে, যা পরবর্তী কালে CENTO নামে পরিচিতি লাভ করে। অনাদিকে সোভিয়েত ইউনিয়ন পূর্ব ইউরোপের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার জন্য পূর্ব ইউরোপের রাষ্ট্রগুলির সঙ্গে ওরায়ণ চুক্তি স্বাক্ষর করে। ১৯৫৬ সালে সুয়েজ সংকট ও হাঙ্গেরি বিদ্রোহ এবং ১৯৫৮ সালে বার্লিন সমস্যা ঠান্ডা যুদ্ধের তীরতাকে বৃদ্ধি করে।


> চতুর্থ পর্যায় (১৯৫৯-১৯৭৯): ১৯৬০-এর দশকের শুরুতে বার্লিন সমস্যা ও কিউবা সংকটকে কেন্দ্র করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েতের মধ্যে ঠাণ্ডা যুদ্ধ অত্যন্ত তীব্র হয়ে ওঠে। তবে ৬০-এর দশকের মাঝামাঝি সময় থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট ও সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে ঠাণ্ডাযুদ্ধের তীব্রতা হ্রাস পেতে শুরু করে। কিউবা সংকটের সুষ্ঠ সমাধানের মাধ্যমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত কনিয়নের মধ্যে দ্যাড়াঁতের সূচনা হয়। দ্যার্তাত কথাটির অর্থ হল বন্ধুত্বের পুনরুদ্ধার। এই দ্যাঠাত প্রতিষ্ঠার ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে সমঝোতার পরিবেশ তৈরি হয়, যা ৭০-এর দশকের শেষ পর্যন্ত বজায় ছিল।


> পঞ্চম পর্যায় (১৯৭৯-১৯৯১): ১৯৭৯ সালে সোভিয়েত ইউনিয়ন আফগানিস্তানে সামরিক অভিযান চালালে নতুন করে ঠাণ্ডা যুদ্ধের সূচনা হয়। এই সময় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে বিরোধ চরম আকার ধারণ পরী করে। এই অবস্থা ৮০-র দশকের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত বজায় ছিল। ৮০-র এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে সোভিয়েত ইউনিয়নে ক্ষমতায় আসেন মিখাইল গর্বাচেভ। তিনি পেরেস্ট্রোইকা ও গ্লান্ডনস্ত নীতি ঘোষণা করেন। এর ফলে সোভিয়েত ইউনিয়ন সম্পর্কে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অবিশ্বাস অনেকটাই হ্রাস পায়। ৮০-র দশকের শেষের দিকে এবং ৯০-এর দশকের গোড়ার দিকে পূর্ব ইউরোপে সমাজতন্ত্রের পতন সোভিয়েত ও মার্কিন সুসম্পর্ককে আরো মজবুত করে। ১৯৯১ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন, সমাজতন্ত্র বিহীন রাশিয়া নামক স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা এবং ওয়ারশ চুক্তি ভেঙে দেওয়ার মাধ্যমে সোভিয়েত ও মার্কিন ঠাণ্ডাযুদ্ধের পরিসমাপ্তি ঘটেছে।


মূল্যায়ন: পরিশেষে বলা যায় যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে মতাদর্শগত বিরোধকে কেন্দ্র করে যে ঠাণ্ডা যুদ্ধের সূচনা হয়েছিল তা আজ ইতিহাস। তবে কেউ কেউ মনে করেন ঠাণ্ডা যুদ্ধ নতুনরূপে আজও বিরাজমান। কেউ কেউ বলেছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইসলামী রাষ্ট্রগুলির মধ্যে নতুন রূপে ঠাণ্ডা লড়াই দেখা যাচ্ছে। আবার কেউ কেউ বলেছেন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে অর্থনৈতিক ঠাণ্ডা যুদ্ধ শুরু হয়েছে।


আপনি চাইলে এগুলো পড়তে পারেন
তোমাকে অনেক ধন্যবাদ ঠান্ডাযুদ্ধের বিবর্তন যা পর্যায়গুলি আলোচনা করো এই নোটটি পড়ার জন্য

About the author

Irisha Tania
"আমি সেই মেয়ে, যে শব্দে বাঁচে। কলম আমার অস্ত্র, আর কাগজ আমার স্বপ্নের আকাশ। প্রতিটি অনুভব, প্রতিটি চিন্তা আমি সাজিয়ে রাখি অক্ষরের গাঁথুনিতে। কখনো গল্পে, কখনো কবিতায়, আবার কখনো নিঃশব্দের ভেতরে। আমি লিখি, কারণ লেখার মাঝে আমি নিজেকে খুঁজে পাই। …

Post a Comment

🌟 Attention, Valued Community Members! 🌟