৩০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকে ৩০০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত প্রাচীন ভারতের দাসব্যবস্থার বর্ণনা দাও। slavery system in ancient India from 300 BC to 300 AD

৩০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকে ৩০০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত প্রাচীন ভারতের দাসব্যবস্থার বর্ণনা দাও।

 ৩০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকে ৩০০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত প্রাচীন ভারতের দাসব্যবস্থার বর্ণনা দাও।

৩০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকে ৩০০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত প্রাচীন ভারতের দাসব্যবস্থার বর্ণনা দাও।


প্রাচীন ভারতের ইতিহাসে দাসব্যবস্থা একটি বিশেষ ব্যবস্থা ও কর্ম বলা যায়। সমাজের কিছু অংশ কর্তৃক দাসব্যবস্থার উদ্ভব ঘটে। দাস বলতে সাধারণত সেইসব মানুষকে বোঝায় যারা সমস্ত সুযোগ-সুবিধা ও অধিকার থেকে সম্পূর্ণ বঞ্চিত এবং সমাজের উচ্চবর্ণের সেবায় সদা নিয়োজিত। এক্ষেত্রে দাস বলতে আমরা শূদ্রদের কথা বলতে পারি। 'অর্থশাস্ত্রের' মতে, শূদ্র জনসংখ্যার প্রধান অংশকে কৃষি, শ্রমিক ও দাসরূপে নিয়োগ অব্যাহত ছিল। 'ধর্মসূত্র' থেকে জানা যায় যে, দাসত্বের প্রকৃতি ছিল গৃহগত।


মেগাস্থিনিস ভারতে ক্রীতদাসদের অনুপস্থিতির কথা উল্লেখ করলেও ভারতীয় বিভিন্ন সূত্র থেকে ভারতে তৎকালীন পর্বে ক্রীতদাসদের অস্তিত্বের কথা জানা যায়। এখানে উল্লেখ্য যে, ইংরেজি "Slave" শব্দের বাংলা অনুবাদ ক্রীতদাস করা হলেও প্রাচীন ভারতীয় ঐতিহাসিক উপাদানে সাধারণভাবে 'দাস' শব্দটি পাওয়া যায়, 'ক্রীতদাস' নয়। 'অর্থশাস্ত্রে' ক্রয় করা হয়েছে এমন এক শ্রেণির দাসের উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়াও বৈদিক সাহিত্য (ঋক ও অথর্ব), বৌদ্ধসাহিত্য (জাতক), 'মহাভারত', মনুর উল্লেখ, 'অর্থশাস্ত্র' এবং 'অশোকের' লেখ-প্রায় সর্বত্রই দাস বিশেষণটির অস্তিত্ব বহুল উল্লেখিত। 



ঋকবেদে' আর্যদের শত্রু হিসাবে দাস এবং দস্যুদের উল্লেখ করা আছে। পরাজিত আদিম উপজাতি, বিজেতা আর্যদের দাসে পরিণত হয়েছিল। 'অথর্ববেদে' দাসীর উল্লেখ পাওয়া যায়। বৌদসাহিত্য থেকে জানা যায় যে, দাসদের প্রতি সাধারণভাবে সদয় ব্যবহার করা হলেও মাঝে মাঝে তার ব্যতিক্রম দেখা যেত। কোনো কোনো বৌদ্ধগ্রন্থে চতুষ্পদ জন্তু থেকে পৃথক করার জন্য দাসকে 'দ্বি-পদ' আখ্যা দেওয়া হয়েছে। জাতক অনুযায়ী যুদ্ধে পরাজয়, অপরাধের শাস্তি ও ঋণের জন্য দাসত্ব গ্রহণ অন্যতম পথ। 'বিনয়পিটক স্বেচ্ছাদাসত্বের কথা বললেও কারণ জানাতে অক্ষম।



'মহাভারতে' বলা হয়েছে যে, বিজিত বিজেতার দাস হবে, এই হল যুদ্ধের নিয়ম। হপকিন্সের মতে, মূলত সমাজে দাসের স্থান ছিল পশুর পরেই । মনু জন্ম, কর্ম ও ক্রয় সূত্রে দাসেদের কথা বলেছেন । তিনি যুদ্ধবন্দিদের স্থায়ী দাসত্বের কথা বলেছেন। দাসীর গর্ভজাত সন্তান দাস বলেই গণ্য হত। দাস ক্রয়ের ব্যাপারে জাতকে 'শতেন ক্রীতদাস' কথাটি মনুর বক্তব্যের সমার্থক। তবে সবক্ষেত্রেই দাসেরা ঠিক কী ধরনের কাজ করবে। তা তার বুদ্ধিবৃত্তি এবং মালিকের অবস্থার ওপর নির্ভরশীল ছিল। গুপ্তপূর্ব যুগে অবশ্য দাসেদের অবস্থার কিছু পরিবর্তন ঘটেছিল। তবে খ্রিস্টীয় তৃতীয় শতক নাগাদ দাসেদের অবস্থার তেমন পরিবর্তন ঘটেনি।


বৈদিকযুগে যে দাসপ্রথার সূচনা হয়েছিল, গুপ্তযুগেও তা অব্যাহত ছিল। এ যুগের জাতিভেদ ব্যবস্থা দাসপ্রথাকেও স্পর্শ করেছিল। এর স্পষ্ট পরিচয় আমরা কাত্যায়ন স্মৃতিতে পাই। তবে একথা উল্লেখ্য যে, প্রাচীন ইউরোপীয় অর্থে দাসপ্রথা তৎকালীন ভারতে ছিল না। যদিও সময়ের অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে দাসেদের সংখ্যা এবং শ্রেণি ক্রমশ বৃদ্ধি পেয়েছিল। বৈদিকযুগের দাস ছিল কেবল যুদ্ধবন্দি। 'বিনয়পিটক' ৩টি ও 'জাতক' ৪টি শ্রেণির দাসের কথা উল্লেখ আছে। 'মনুর স্মৃতিতে' দাসেদের ভিন্ন ভিন্ন ৭টি শ্রেণির উল্লেখ পাওয়া যায়। অর্থশাস্ত্র প্রায় ৮ প্রকার এবং নারদস্মৃতি ১৫ প্রকারের দাসদের কথা বলেছেন। সুতরাং, দাসব্যবস্থা ছিল একথা অনস্বীকার্য, যদিও এস. আর. রাও প্রাচীন ভারতীয় সমাজকে দাস সমাজের পরিবর্তে, 'বৈশ্য-শূদ্র সমাজ' বলেছেন।

About the author

Irisha Tania
"আমি সেই মেয়ে, যে শব্দে বাঁচে। কলম আমার অস্ত্র, আর কাগজ আমার স্বপ্নের আকাশ। প্রতিটি অনুভব, প্রতিটি চিন্তা আমি সাজিয়ে রাখি অক্ষরের গাঁথুনিতে। কখনো গল্পে, কখনো কবিতায়, আবার কখনো নিঃশব্দের ভেতরে। আমি লিখি, কারণ লেখার মাঝে আমি নিজেকে খুঁজে পাই। …

Post a Comment

🌟 Attention, Valued Community Members! 🌟