স্তূপ ও বিহারের মধ্যে পার্থক্য
ভারতবর্ষের আদিপর্বের অধিকাংশ স্থাপত্য কীর্তি মূলত ধর্মীয় উদ্দেশ্যে নির্মিত হয়েছিল। যেগুলির মধ্যে বৌদ্ধধর্মীয় স্তূপ এবং শ্রমণদের বাসস্থান হিসাবে বিহার ছিল বিশেষ উল্লেখযোগ্য। সম্রাট অশোক বুদ্ধের স্মৃতি রক্ষার্থে ভারতের প্রায় সর্বত্রই স্তূপ নির্মাণ করেছিলেন। স্তূপের সঙ্গে ভক্তির একটি সম্পর্ক ছিল। স্তূপ নির্মাণ পুণ্যকর্ম হিসাবে বিবেচিত হত এবং বুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত পবিত্র স্থানগুলিতে অনেক স্তূপ নির্মাণ করা হয়েছিল। সংঘ বা বিহারগুলি সাধারণত সন্ন্যাসীদের বাসস্থান হিসাবে নির্মাণ করা হত এবং এটি ব্রাহ্মণ্য, বৌদ্ধ এবং জৈন-সব ধর্মের ক্ষেত্রেই নির্মাণ করা হত। মূলত বাসস্থান হিসাবে নির্মিত হত এবং দেখতে সাধারণ গৃহের মত হত।
স্তূপ ও বিহারের নির্মাণ কৌশলের মধ্যে বিস্তর পার্থক্য উৎখননের ফলে প্রাপ্ত তথ্যাদির ৬৬ বিরে জানা সম্ভব হয়েছে। স্তূপের মূল অংশ অর্ধগোলাকৃতি যেটিকে শাস্ত্রে অন্ত বলা রয়েছে। খুপের ভিতর একটি কেন্দ্রীয় কক্ষে প্রায় স্ফটিক সজ্জিত একটি ক্ষুদ্র সম্পটের এসো দৃশ্যের চিহ্ন রাখা হয়। স্তূপের মাথায় বিশ্বজনীন সার্বভৌমত্বের প্রতীক রূপে কাঠের অথবা পাথরের তৈরি ছত্র থাকত। কাঠের বেষ্টনী দ্বারা সমগ্র স্তূপটি পরিবেষ্টিত থাকত। এই বেষ্টনীর ভিতরে থাকত প্রদক্ষিণ পথ যার মধ্য দিয়ে সাধারণ মানুষ শ্রদ্ধা নিবেদন করতেন।
ভিক্ষু ও সন্ন্যাসীদের আবাসস্থল হিসাবে মূলত বিহারগুলি নির্মিত হয়েছিল, ফলত এগুলি সাধারণ গৃহের মতোই দেখতে ছিল। একটি চতুষ্কোণ ক্ষেত্র ঘিরে সারি সারি কুঠুরি থাকত এবং প্রারম্ভিক পর্বে এগুলি কাঠ দিয়ে নির্মিত হত। পরে ইট ব্যবহার করা হত। আবার পাহাড় কেটে বিহার তৈরির নিদর্শন নেহাত কম নয়। উদাহরণ হিসাবে বরাবর ও নাগার্জুনির গুহার কথা বলা যায়। এই গৃহাভিত্তিক বিহারগুলিতে একদিকে সারি সারি কুঠুরির পরিবর্তে আলো-বাতাস প্রবেশের জন্য খোলা বারান্দা থাকত। গুহাগুলিতে অদ্ভুত সুন্দর অলংকরণ করা হত।
সুতরাং, স্তূপ ও বিহার-দুই স্থাপত্য কর্ম-ধর্মের সঙ্গে জড়িত হলেও এর গঠন, আকার, নির্মাণ কৌশল উপকরণ সমস্ত কিছুর মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। এমনকি স্তূপ ও বিহারের নির্মাণের উদ্দেশ্যের মধ্যেও পার্থক্য ছিল। তবে স্তূপ ও বিহারের সমন্বয়ে এক বিশেষ স্থাপত্যের উদ্ভব হয়, যা চৈত্যগৃহ নামে পরিচিত। যেখানে স্তূপের আরাধনা হত আবার সেই পূজারীরা গুহায় বসবাস করতেন।