মধ্যযুগ কাকে বলে। (Meaning of the term "Medieval")

মধ্যযুগ কাকে বলে। (Meaning of the term "Medieval")

মধ্যযুগ কাকে বলে। (Meaning of the term "Medieval")

কোন্ ঘটনাকে ইওরোপের ইতিহাসে মধ্যযুগের সূচনা বলা যায়? ইওরোপের ইতিহাসে মধ্যযুগের স্থায়িত্ব কতটা?বা,ইওরোপের ইতিহাসে মধ্যযুগের বৈশিষ্ট্য কি?বা, ভারতের ইতিহাসে মধ্যযুগের সূচনা কি করে হয়?

কোন্ ঘটনাকে ইওরোপের ইতিহাসে মধ্যযুগের সূচনা বলা যায়? ইওরোপের ইতিহাসে মধ্যযুগের স্থায়িত্ব কতটা?বা,ইওরোপের ইতিহাসে মধ্যযুগের বৈশিষ্ট্য কি?বা, ভারতের ইতিহাসে মধ্যযুগের সূচনা কি করে হয়?


মানব জাতির ক্রমোন্নতির ধারাকে বলা হয় ইতিহাস। নিরবচ্ছিন্ন ভাঙ্গাগড়ার মাধ্যমে চির প্রবাহমান ইতিহাস এগিয়ে চলে নতুন থেকে নতুনতর পথে। এই ভাঙ্গাগড়ার পথে এগিয়ে চলার মধ্য দিয়েই গড়ে উঠেছে নতুন সমাজ ও সভ্যতা-নতুন ঐতিহাসিক যুগ। ইতিহাসের এগিয়ে চলার ধারা সবসময় একই বৈশিষ্ট্য নিয়ে চলে না। কোন কোন সময় এগিয়ে চলার পথে দেখা যায় নতুন বৈশিষ্ট্য। এই বৈশিষ্ট্যের তারতম্যের ওপর ভিত্তি করেই নতুন ঐতিহাসিক যুগের সূচনা হয়।

খ্রীস্টীয় পঞ্চম শতাব্দীর শেষ ভাগে (৪৭৬ খ্রীস্টাব্দে) একদা বিশাল শক্তিশালী রোম সাম্রাজ্যের পতন ঘটে, বিভিন্ন বর্বর জাতির আক্রমণে।

প্রশ্ন হল, বর্বর কাদের বলা হয়? বর্বর বলতে তাদেরই বোঝানো হয়, যারা রোম সাম্রাজ্যের বাইরে বাস করত এবং সভ্যতার বিচারে রোমানদের তুলনায় হীন ছিল। সাধারণতঃ গথ, ভ্যান্ডাল, ফ্রাঙ্ক প্রভৃতি জার্মান উপজাতিদের বলা হত বর্বর। এদের আক্রমণে রোম সাম্রাজ্য ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হয়ে যায় এবং ইওরোপে ছোট ছোট বর্বর রাজ্য গড়ে ওঠে। রোম সাম্রাজ্যের পতনকেই আমরা ইওরোপের ইতিহাসে মধ্যযুগের সূচনা বলে ধরে নিতে পারি। এই মধ্যযুগ স্থায়ী হয়েছিল একটানা প্রায় হাজার বছর ধরে। পঞ্চম শতাব্দী থেকে পঞ্চদশ শতাব্দী পর্যন্ত কালকেই অধিকাংশ পণ্ডিত মধ্যযুগ আখ্যা দিয়ে থাকেন। এ যুগের ইতিহাসে সাধারণ মানুষের ভূমিকা বিশেষ কিছু ছিল না। সমাজে কর্তৃত্ব করত সামন্ত প্রভুরা এবং ধর্মযাজকরা। মানুষের উন্নতি, আবিষ্কার ও সংস্কৃতির ধারা বহুল পরিমাণে ব্যাহত হয়েছিল এই সময়ে। 


পঞ্চদশ শতাব্দীতে ইওরোপের ইতিহাসে দেখা দিল নতুন বৈশিষ্ট্য। ধর্মীয় প্রভুত্ব ও গোঁড়ামির অবসান ঘটিয়ে প্রাচীন গ্রীক-রোমান সংস্কৃতির পুনরভ্যুদয় ঘটল। মানুষ ফিরে পেল চিন্তার স্বাধীনতা।

নবচেতনার উন্মেষ ঘটল। মধ্যযুগের চিন্তায় সমগ্র ইওরোপ এক বিরাট অখণ্ড খ্রীস্টান সমাজরূপে গণ্য হত। পোপ ছিলেন খ্রীস্টানদের ধর্মগুরু এবং একই পুরোহিত শ্রেণীর অধীনে নানাদেশের জনসাধারণ এক সূত্রে বাঁধা পড়েছিল। নবচেতনা ও স্বাধীন চিন্তার ফলে ধর্মাধিষ্ঠানের কর্তৃত্বের অবসান হল। জাতীয় স্বাতন্ত্র্যবোধ দেখা দিল। বিভিন্ন দেশের রাজারা নিজ নিজ এলাকার মধ্যে স্বাধীন হয়ে উঠলেন। শিক্ষা সম্পর্কে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি ও অনুসন্ধিৎসার জন্য আধুনিক বিজ্ঞানের জন্ম হল, ধর্ম নিরপেক্ষ শিক্ষার সূচনা হল।

অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেও দেখা দিল এক বিরাট পরিবর্তন। নতুন নতুন জলপথ আবিষ্কৃত হওয়ার ফলে পৃথিবীজোড়া বাণিজ্যের সম্ভাবনা দেখা দিল। ফলে উৎপাদন ব্যবস্থারও পরিবর্তন ঘটল। এইভাবে পঞ্চদশ শতাব্দী থেকে নতুনতর বৈশিষ্ট্য দেখা দেওয়ার ফলে মধ্যযুগের অবসান সূচিত হল।

ভারতবর্ষে গুপ্ত সাম্রাজ্যের পতনের পর থেকে মধ্যযুগের সূচনা হয়েছিল বলা যায়। রাজনৈতিক ঐক্য, সাহিত্য-শিল্পের উৎকর্ষ, ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ইত্যাদি বিভিন্ন দিক দিয়ে গুপ্তসাম্রাজ্য ছিল ইওরোপের রোম সাম্রাজ্যের সঙ্গে তুলনীয়। কিন্তু রোম সাম্রাজ্যের মত গুপ্ত সাম্রাজ্যও আভ্যন্তরীণ দুর্বলতার জন্য দীর্ঘস্থায়ী হয় নি। পঞ্চম শতাব্দী থেকেই ভারতীয় সমাজে মধ্যযুগীয় সামন্ততান্ত্রিক বৈশিষ্ট্যগুলো লক্ষ্য করা যায়। ভূস্বামীরা দেশের কৃষিজমিগুলো দখল করে নেয়। দাসদের শ্রমে গড়ে ওঠা স্বাধীন কৃষকশ্রেণী বিলুপ্ত হয়। দাস প্রথার বিলুপ্তি ঘটে। ভূমিহীন কৃষকরা বাস করত ভূস্বামী সামন্ত প্রভুদের অধীনস্থ জমিতে। এই জমিগুলো রাজারা ভূস্বামীদের জায়গীররূপে বন্দোবস্ত দিতেন।

ভারতীয় সামন্ত সমাজে কৃষকরা গোষ্ঠীবদ্ধ জীবন যাপন করত।  গ্রামের প্রান্তে থাকত সর্বসাধারণের চারণভূমি। খাচ্ছ, বস্ত্র, যন্ত্রপাতি ইত্যাদি প্রায় সকল জিনিষই গ্রামে উৎপন্ন হত। কৃষকদের উৎপন্ন শস্তের প্রায় অর্ধাংশ খাজনা হিসেবে ভূস্বামীকে দিতে হত। কৃষকরা বাস করত অতিশয় দারিদ্র্যের মধ্যে। রাস্তাঘাট তৈরী ও সংস্কার, সেচখাল খনন, মন্দির ইত্যাদি তৈরীর জন্ম বাধ্যতামূলক বেগার শ্রমের রীতি প্রচলিত ছিল। সমাজে ব্রাহ্মণ ও পুরোহিত শ্রেণী বিশেষ অধিকার ভোগ করতেন। তাদের অধীনে অনেক নিষ্কর ভূমি থাকত।

প্রায় সমগ্র মধ্যযুগের ইতিহাসে, দু-একটি ব্যতিক্রম ছাড়া, ভারত-বর্ষে ঐক্যবদ্ধ কোন সাম্রাজ্য গড়ে ওঠেনি। বিভিন্ন অঞ্চল ছিল বিভিন্ন ছোট বড় রাজার অধীন। এই সব রাজাদের যুদ্ধবিগ্রহ লেগেই থাকত। বিদেশীরাও এই সময় কয়েকবার ভারত আক্রমণ করে। ষোড়শ শতাব্দীর প্রথমে ভারতে মোগল সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠিত হয়। মোগলদের অধীনে ভারত ঐক্যবদ্ধ হয়। সামন্ততান্ত্রিক যুদ্ধবিগ্রহের অবসান হয়।

যেমন ইওরোপের ক্ষেত্রে খ্রীস্টীয় পঞ্চম শতাব্দী থেকে পঞ্চদশ শতাব্দী পর্যন্ত কালকে মধ্যযুগ বলে ধরা হয়, তেমনি ভারতের ইতিহাসেও মোটামুটি ঐ একই সময়কে মধ্যযুগ বলা যেতে পারে। উভয়ক্ষেত্রেই এই সময় সীমার মধ্যেই মধ্যযুগের বৈশিষ্ট্যগুলো লক্ষ্য করা যায়।

কিন্তু কোন বিশেষ তারিখ বা সময় থেকে মধ্যযুগের সূচনা হয়েছিল এবং কোন নির্দিষ্ট সময়ে মধ্যযুগের পরিসমাপ্তি ঘটেছে-এরূপ ধারণা করা ভুল হবে। কোন ব্যক্তির জীধনে যেমন কোন নির্দিষ্ট বছরে যৌবন বা বান্ধকা আসেনা। তেমনি সমাজ জীবনের পরিবর্তন হঠাৎ অনুভূত হয় না। নতুন ধ্যানধারণার দ্বারা সমাজের সকল শ্রেণীই একই সঙ্গে প্রভাবিত হয় না। ঐতিহাসিকের দৃষ্টিতে দেখতে গেলে প্রাচীন যুগ ক্রমে ক্রমে মধ্যযুগে পরিণতি লাভ করেছে।

পৃথিবীর সব জায়গায় একই সঙ্গে সমানভাবে পরিবর্তন আসেনি। প্রাচীনযুগের কোন কোন বৈশিষ্ট্য যেমন মধ্যযুগের বহুকাল পর্যন্ত বিদ্যমান ছিল। তেমনি অনেক সময় ওদখা যায় মধ্যযুগের কোন কোন বৈশিষ্ট্য প্রাচীনযুগেই প্রকাশ লাভ করেছে। সুতরাং প্রাচীনযুগ ও মধ্যযুগের মধ্যে কোন নির্দিষ্ট সীমারেখা টানা সম্ভব নয়।

এই কারণেই, পৃথিবীর সব জায়গায় একই সঙ্গে মধ্যযুগের সূচনা হয়েছে এবং একই সময়সীমা পর্যন্ত এই যুগের অস্তিত্ব ছিল-একথা বলা সম্ভব নয়। এছাড়া প্রত্যেক অঞ্চলের পৃথক পৃথক বৈশিষ্ট্যের জন্য বিভিন্ন দেশের ইতিহাসের ঘটনাবলীর মধ্যেও রয়েছে বৈচিত্র্য।

তোমাকে অনেক ধন্যবাদ মধ্যযুগ কাকে বলে। (Meaning of the term "Medieval") এই নোটটি পড়ার জন্য

About the author

Irisha Tania
"আমি সেই মেয়ে, যে শব্দে বাঁচে। কলম আমার অস্ত্র, আর কাগজ আমার স্বপ্নের আকাশ। প্রতিটি অনুভব, প্রতিটি চিন্তা আমি সাজিয়ে রাখি অক্ষরের গাঁথুনিতে। কখনো গল্পে, কখনো কবিতায়, আবার কখনো নিঃশব্দের ভেতরে। আমি লিখি, কারণ লেখার মাঝে আমি নিজেকে খুঁজে পাই। …

Post a Comment

🌟 Attention, Valued Community Members! 🌟