তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকারের প্রকৃতি সম্পর্কে আলোচনা কর

তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকার
১৯৪২ সালের ১৭ই ডিসেম্বর মেদিনীপুরের তমলুকে তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকার গঠিত হয় ৷ এই তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকারের সর্ববিধানেক ছিলেন সতীশ চন্দ্র সামন্ত ৷ এই সরকার তৎকালীন সময়ে পৃথক একটি শাসনব্যবস্থা গড়ে তুলেছিলেন ৷ মহাত্মা গান্ধীর নেতৃত্বে যখন ১৯৪২ সালে ভারত ছাড়ো আন্দোলন চলছে সেই সময় মিল মালিকেরা খাদ্যশস্য পাচার করার চেষ্টা করলে গ্রামের মানুষের সঙ্গে সংঘর্ষ শুরু হয় ৷ আবার তমলুক, নন্দীগ্রাম ,ভগবানপুর অঞ্চলে বিপ্লবীরা সশস্ত যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে দেয় ৷ অজয় মুখার্জি, সতীশ চন্দ্র সামন্ত ও সুশীল ধারা এই তিন বিপ্লবী নেতৃত্বে মেদিনীপুরের চারটি থানা দখলের অভিযান শুরু হয় ৷ বিনা রক্তপাতে মুতাহাটা থানার পুলিশ আত্ম সমর্পণ করলে থানাটি বিপ্লবীদের দখলে আসে । এরপর রক্ত ঝরিয়ে তমলুক, মহিষাদল নন্দীগ্রাম এই তিনটি থানায় বিপ্লবীদের দখলে চলে আসে ৷ কিন্তু পুলিশের গুলিতে জাতীয় পতাকা বুকে নিয়ে ঘটনাস্থলে শহীদ হন মাতঙ্গিনী হাজরা ৷
কিন্তু ব্রিটিশদের দখলকৃত তমলুক এলাকা থেকে নেমে গেল ব্রিটিশের ইউনিয়ন জ্যাক এর প্রতিক্রিয়া ঘটলো 1942 সালের 16 অক্টোবর দুর্গাপুজোর সপ্তমীর দিন ৷ ওই দিনে তমলুক জুড়ে শুরু হলো তুমুল ঝড়-বৃষ্টি ,দেখা দেয় বন্যা, এই বন্যায় সাধারণ মানুষের সর্বস্ব ভেঙে যায় ৷ পূজার আনন্দে পরিণত হয় নিদারুণ বিভীষিকা ৷ কিন্তু ব্রিটিশ সরকারের তরফ থেকে ওই সমস্ত মানুষদের জন্য কোন সাহায্য পৌঁছায় না, ব্রিটিশ পুলিশ বাহিনী গ্রামের মানুষের ওপর চরম নির্যাতন চালায় ৷ চারটি থানা দখল হওয়ার প্রতিশোধ গ্রহণ করতে ব্রিটিশ সরকার এই অত্যাচার শুরু করেন ৷ এই সময় ১৯৪২ সালে ১৭ই ডিসেম্বর বিপ্লবী সতীশ চন্দ্র সামন্তের নেতৃত্বে তমলুক গড়ে তুললেন তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকার ।
তমলুক অঞ্চলে বন্যা দুর্গত অসহায় মানুষদের পুনর অবস্থান ব্রিটিশদের অত্যাচারের অবসান এবং তমলুক মহাকুমায় শান্তি প্রতিষ্ঠা প্রভৃতির উদ্দেশ্যকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকার ৷ তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকারের মুখপত্র হিসাবে প্রকাশিত হয় বিপ্লবী পত্রিকা দেশ রক্ষার জন্য তৈরি হয় ভগিনী সেনা ৷ প্রতিটি থানায় একজন করে থানা অধিনায়ক নিযুক্ত করলেন সতীশ চন্দ্র সামন্ত ৷ যেমন তমলুক থানায় গুণধর ভৌমিক, সুতোহাটা থানায় জনার্ধন হাজরা, মহিমাদল থানায় নীলমনি হাজরা এবং নন্দীগ্রাম থানায় কুঞ্জবিহারী ভক্ত দাস প্রভৃতি ৷
১৯৪৪ সালে ৩০ শে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এই তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকারের অস্তিত্ব স্থায়ী ছিল ৷ অর্থাৎ ১৯৪৪ সাল পর্যন্ত সফলভাবে কাজ করেছিলেন এই তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকার ঘূর্ণিঝড় বিদ্ধস্ত এলাকায় এই জাতীয় সরকার অনাকার্য চালায় ৷ তাম্রলিপ্ত এলাকায় অনেক জাতীয়তাবাদী ধনী ব্যক্তি সেই সময় এই সরকারের বৈপ্লবিক কাজের জন্য অর্থ প্রদান করেছিলেন ৷ সাধারণ ব্যবসায়ী থেকে গ্রামের জমিদার সকলেই তাদের সাধ্যমত অর্থ দান করেছিলেন ৷
তোমাকে অনেক ধন্যবাদ তাম্রলিপ্ত জাতীয় সরকারের প্রকৃতি সম্পর্কে আলোচনা কর এই নোটটি পড়ার জন্য