গ্রিক ট্রাজিক নাটক সম্পর্কে আলোচনা কর অথবা, গ্রিসে ট্রাজিক নাটকের বিকাশের ধারা আলোচনা কর

গ্রিক ট্রাজিক নাটক সম্পর্কে আলোচনা কর অথবা, গ্রিসে ট্রাজিক নাটকের বিকাশের ধারা আলোচনা কর
প্রাচীন গ্রিস, গণতন্ত্রের জন্ম, দর্শন, ইতিহাস, সাহিত্য, নাটক, ধর্ম, সংস্কৃতির নানা ক্ষেত্রে তাদের অভূতপূর্ব অগ্রগতি সারা পৃথিবীর সামনে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিল। তাদের সৃষ্টিশীলতা প্রকাশ পেয়েছিল শিল্পের বিভিন্ন শাখায়, দেবতার মন্দির তৈরিতে, আমোদ-প্রমোদ ও মিলনের স্থান থিয়েটার নির্মাণে, ক্ষণস্থায়ী মানব জীবনকে মূর্ত করে ভাস্কর্য সৃষ্টিতে, প্রাত্যহিক জীবনের প্রতিচ্ছবি ও পুরাণ কে নাটক দ্বারা স্থায়ী রূপদানে। তাই হেগেল যথার্থই বলেছিলেন, একজন সংস্কৃতিবান ইউরোপীয় মানুষ গ্রিস দেশের নামের মধ্যে দিয়ে নিজের আপন দেশকেই প্রত্যক্ষ করে।
আপনি চাইলে এগুলো পড়তে পারেন
গ্রিক সংস্কৃতির অন্যতম অঙ্গ, নাট্য শিল্পের দুটি ধারা ছিল ট্রাজিক এবং কমেডি । সংস্কৃতির জগতে ধ্রুপদি এথেন্সের সবচেয়ে স্থায়ী অবদান নিঃসন্দেহে ট্র্যাজিক নাটক। ঐতিহাসিক জর্জ থমসন গ্রিক ট্র্যাজেডিকে এথেনীয় গণতন্ত্রের চরম প্রকাশ বলে বণ, ছি করেছেন। এটিকার সাহিত্য বিকাশের চরম পর্যায়ে ট্র্যাজেডির আবির্ভাব ঘটেছিল। যে নাট্য শিল্প আজও সমগ্র পৃথিবীর গর্বের বিষয়। তবে এই বিয়োগান্তক (Tragedy) নাটকের আঙ্গিক ও বিষয়বস্তু - প্রতিটি ক্ষেত্রে গ্রিক সমাজের বিবর্তনের প্রতিনিধিত্ব করেছে।
প্রাচীণ গ্রিক 'তাগোদিয়া' শব্দটি থেকে ট্র্যাজেডি শব্দটির উৎপত্তি, যার মূল অর্থ ছিল ছাগ-গীতি। ট্র্যাজেডির উদ্ভব জড়িয়ে ছিল গ্রিক দেবতা ডায়োনিসাসের সম্মানে আয়োজিত উৎসব উদযাপনের সঙ্গে। ডায়োনিসাস (Dionysus) ছিলেন কৃষিকাজ, বিশেষত সুরা-উৎপাদন বিদ্যার দেবতা। উৎসবের সময় গ্রাম ও নগরের রাস্তায় বার করা হত শোভাযাত্রা। কমিজীবী মানুষ তথা ডায়োনিসাসের অনুগামীর দল গান গেয়ে ডায়োনিসীয় পুরাণ বর্ণনা করত ও পুরাণ কাহিনির চরিত্রগুলি অভিনয় করে দেখাত। অংশগ্রহণ কারীরা পরিধান করত ছাগ-চর্ম। দর্শকেরা সমবেত হত রঙ্গ-তামাশা-অভিনয় দেখতে। ছাগ-চর্ম পরিধান করে অর্ধ-ছাগ অর্ধ মানব রূপে ট্র্যাজেডির অভিনয় হত বলে এই নাটকের নামকরণ হয়েছিল ট্র্যাজেডি।
স্যার জেমস ফ্রেজার, গিলবার্ট মারে প্রমুখ বিবর্তন নৃতাত্ত্বিকগণ গোষ্ঠী সমাজের প্রথাগুলির মধ্যে ট্র্যাজেডির উৎস অনুসন্ধান করেছেন। ঐতিহাসিক জর্জ থমসন লিখেছেন, গ্রিক গোষ্ঠী সমাজে দীক্ষাবিধি ও ডায়োনিসাসের উপাসনা ক্রমে উন্মাদনার রূপ নেয় এবং এখান থেকে 'ডিথিরাম্ব' নামক গীতির প্রচলন ঘটে যা : ডায়োনিসাসের সম্মানে গাওয়া হত। এই 'ডিথিরাম্ব' পরবর্তীকালে নাট্যশিল্পের রূপ নেয়। গ্রিক দার্শনিক অ্যারিস্টটলও তাঁর 'Poetics' গ্রন্থে 'ডিথিরাম্ব' থেকে ট্র্যাজেডির উদ্ভবের তত্ত্বের কথা বলেছেন। ফ্রেডরিখ নিৎসে ও ট্র্যাজেডির বিকাশে গোষ্ঠীসমাজের ছায়া দেখেছেন।
এ কথা নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, ট্র্যাজেডির প্রাক্ইতিহাস সৃষ্টি হয়েছিল একাধারে গীতিকবিতা ও অন্যদিকে ডায়োনিসীয় উৎসবের বিবিধ আচার অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে। তবে গ্রিকদের দেবদেবীদের মধ্যে ডায়োনিসাসের অবস্থান কিছুটা অদ্ভূত। কারণ তিনি দেবরাজ জিউসের পুত্র, হলেও তাকে গ্রিকদের অভিজাত অলিম্পীয় দেবদেবীর অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। এই উৎসবের শেষ তিনদিন অনুষ্ঠিত হত অভিনয় ও নাটকের বর্ণময় প্রতিযোগিতা। এমনকি পেলোপনেসীয় যুদ্ধের মত দীর্ঘমেয়াদী যুদ্ধ এই নাট্যোৎসবকে বন্ধ করতে পারেনি। প্রতিযোগিতায় প্রত্যেক অংশগ্রহণকারীকে পেশ করতে হত . চারটি নাটকের একটি 'টেট্রালজি' যার মধ্যে থাকত তিনটি ট্র্যাজেডির একটি 'ট্রিলজি' এবং সবশেষে একটি রঙ্গরসাত্মক প্রযোজনা, 'স্যাটায়ার প্লে'। ট্র্যাজেডির গাম্ভীর্য ও বিষণ্ণতার পর 'স্যাটায়ার প্লে'-র ব্যঙ্গ-পরিহাস দর্শকদের : স্বস্তি ও আনন্দ দিত। গ্রিক লোকপুরাণে স্যাটায়ার ছিল অর্ধেক মানুষ অর্ধেক পশু এবং কুস্বভাবগ্রস্ত জীব। স্যাটায়ার নাটক ও ট্র্যাজেডির মধ্যে কিছুটা সাদৃশ্য ছিল। তাই স্যাটায়ারের পরিণত রূপ ট্র্যাজেডি, একথা বলা যাবে না।
গ্রিক ট্র্যাজেডির প্রধান উপজীব্য ছিল পুরাণ বা মিথ। পুরাকথার ভাণ্ডার উজাড় করে গ্রিক নাট্যকাররা ট্র্যাজেডি নবরূপে রচনা করতেন। সমসাময়িক যুগের সমস্যার বিশ্লেষণ ও ব্যাখ্যা করতে পুরাণ নাট্যকারদের সাহায্য করত। দেবতাদের সঙ্গে মানুষের সমস্যাপূর্ণ সম্পর্কের টানাপোড়েন ছিল ট্র্যাজেডি-নাটকের প্রধান বিষয়বস্তু। পুরাণকে ভিন্ন ভিন্ন দৃষ্টিকোণে ব্যাখ্যা করার স্বাধীনতা ট্র্যাজেডি নাট্যকাররা পেতেন। ট্র্যাজেডির তিনটি অংশ মুখোশপরা অভিনেতা, কোরাস এবং দর্শক। নাটকের প্লট বা ঘটনা পরম্পরাকে গ্রিক ভাষায় বলা হত 'মুথস' যার অন্য অর্থ হল পুরাকাহিনি। গ্রিক রঙ্গমঞ্চ হত মাটি থেকে সামান্য উঁচু। এর দুদিকে দুটি কক্ষ থাকত যাকে বলা হত 'স্কেন'। এছাড়া থাকত দুটি বারান্দা, মূলত দর্শকদের দিকে। যাকে 'প্যারাস্কেনিয়া' বলা হতো। অভিনেতারা 'স্কেন' থেকে বেরিয়ে দর্শকদের সামনে যে চক্রাকৃতি খোলা স্থানে আসত তাকে বলা হত অর্কেস্ট্রা। নাট্যমঞ্চের আচ্ছাদিত চাঁদোয়াকেও 'স্কেন' বলা হত।
প্রাচীন গ্রিক ট্র্যাজেডি বা বিয়োগান্ত নাট্যকারদের ছিল প্রায় দেড়শো। যার মধ্যে মাত্র তিনজন নাট্যকারের ৩৩টি নাটক পাওয়া গেছে। এঁরা হলেন ইস্কাইলাস, সফোক্লিস এবং ইউরিপিডিস। গ্রিক নাট্য শিল্পের প্রথম পথিকৃৎ হলেন ইস্কাইলাস। অন্যদিকে পেরিক্লীয় যুগের শ্রেষ্ঠ বিয়োগান্ত নাট্যকার হলেন সফোক্লিস। আর ধ্রুপদি যুগের শেষ বিয়োগান্ত নাট্যকার হলেন ইউরিপিডিস।
আপনি চাইলে এগুলো পড়তে পারেন
ইস্কাইলাস গ্রিক ট্র্যাজেডির ক্ষেত্রে বহিরঙ্গ রীতির সঙ্গে অন্তরঙ্গ গভীর ভাবদ্যোতক রস মিশ্রিত করেন। দুঃখ ও বিপর্যয়ের সঙ্গে নিয়ত সংগ্রাম, তার মধ্যে দিয়ে মানুষের অপরাজেয়তা এবং নৈতিকতার পুনঃপ্রতিষ্ঠার কথা ইস্কাইলাস তাঁর ট্র্যাজেডি-নাটকের মধ্যে দিয়ে বলে গেছেন। তাই ট্র্যাজেডির অভিজ্ঞতা আমাদের চিন্তা ও আবেগের মেলবন্ধন ঘটায়। দঃখজনক মহর্তেও আমরা জীবনকে এগিয়ে নিয়ে যাই। জীবন সম্পর্কে এই বোঝাপড়াই গ্রিক ট্র্যাজেডি-নাট্যকারেরা তাঁদের নাটকের মধ্যে দিয়ে ফুটিয়ে তুলেছেন। কোরাসের ভূমিকা কিছুটা অপ্রধান করে দিয়ে ঘটনার চূড়ান্ত রূপ প্রকাশ করতে ইস্কাইলাস 'দ্বি-নট' রীতির প্রবর্তন করেছিলেন। অভিনেতাদের সাজপোষাকের গুরুত্ব, মঞ্চ সজ্জার প্রতি সুতীক্ষ্ণ দৃষ্টি ইত্যাদির মধ্যে দিয়ে তিনি গ্রিক ট্র্যাজেডি-ধারণার প্রয়োগরীতির দিক থেকেও নতুনত্বের স্রষ্টা ৷ট্র্যাজেডির পাত্রপাত্রী হিসেবে পুরাণকথার অ্যাপোলো বা প্রমিথিউসের মতো দেবতারাই নির্বাচিত হয়েছেন। ইস্কাইলাসের ট্র্যাজেডি পরিকল্পনার মধ্যে তাই দৈব-নিয়ন্ত্রণের পটভূমির গুরুত্ব অত্যন্ত বেশি। ইস্কাইলাস তিনটি ট্র্যাজেডির বিষয়বস্তুকে একই কাহিনির ক্রমপরিণতি নাট্যরূপ দিয়েছেন। এর ফলে নাটকের বিষয়বস্তু সংকীর্ণতামুক্ত হয়েছিল। এ প্রসঙ্গে তাঁর 'আগামেনন', 'কোয়েফোরোয়' ও 'ইউমেনিডিস', দা পার্সিয়ান, 'অরেস্তিয়া' স্মরণযোগ্য। মহাশিল্পীর সুমহান অন্তর্দৃষ্টি দিয়ে জগৎ ও জীবনের রহস্যের স্বরূপ তিনি যে দৃষ্টিকোণে ব্যাখ্যা করেছেন, তা নতুন জীবনের পরিচয় বহন করে। নাটকে যুদ্ধের বর্বরতা, নৃশংসতাকে তুলে ধরেছেন। মিথকে নিজের প্রয়োজনমতো ব্যবহার করেছেন। দৈবীশক্তির ন্যায়বিচারের ওপর অগাধ বিশ্বাস নাটকের বৈশিষ্ট্য। তাঁর নাটকগুলির বুদ্ধিদীপ্ত উপস্থাপনা, অভিনেতাদের পোশাক-পরিচ্ছদ, কোরাসের আকর্ষণী শক্তি-সবকিছুই ইস্কাইলাসকে স্মরণীয় করে রেখেছে।
সফোক্লিস ছিলেন পেরিক্লিও যুগের শ্রেষ্ঠ বিয়োগান্ত নাট্যকার। তিনি প্রায় ১১৩ টি নাটক লিখেছিলেন যার মধ্যে মাত্র ৭টি পাওয়া গেছে। যেগুলি হল-'অ্যান্তিগোনে', 'অয়দিপাস কলোনিয়াস', 'ইলেক্ট্রা', 'আজাক্স', 'অয়দিপাস টিরান্যাস', দি টারকিয়ান উইমেন,। সফোক্লিসের নাটকগুলির মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ ছিল অ্যান্তিগোনে। এটি ৪৪২ খ্রিস্টপূর্বাব্দে প্রথম অভিনীত হয় এবং এথেনীয় নাট্যমঞ্চে বহুবার সাফল্যের সঙ্গে অভিনীত মা হয়। এখানে রাজার স্বেচ্ছাচারিতার সঙ্গে অ্যান্তিগোনের আত্মত্যাগের বিপরীত চিত্র সুন্দরভাবে চিত্রিত হয়েছে। অবশেষে পুত্রের মৃত্যুর মাধ্যমে ক্রীয়নের শাস্তিবরণে নাটকের সমাপ্তি। অন্যদিকে ইলেক্ট্রা নাটকে মায়ের প্রতি কন্যার অপরিসীম ঘৃণা ব্যক্ত হয়েছে। অন্যান্য নাটকগুলি একইভাবে করুণ রসের প্রকাশ দেখা যায়। তার নাটকগু কাঠামো ছিল অনাড়ম্বর এবং সংলাপ ও বিষয়ের স্পষ্টতা ছিল। তাছাড়া তাঁর নাটকে কোরাসের ভূমিকা ছিল সীমিত। প্রতিটি নাটকে ঘটনার মরমিয়া উপস্থাপনে প্রাধান্য পেয়েছে অভিনেতা রাই। তিনিই প্রথম ইস্কাইলাসের ট্রিলজির আঙ্গিক ত্যাগ করে আলাদাভাবে এক একটি নাটক তৈরি করেন। উইল ডুরান্ট লিখেছেন প্রতিটি নাটকই যেন এক একটি মন্দিরের মতো করে নির্মিত যেখানে প্রতিটি অংশের কাজ অতি যত্ন করে শেষ করা, যদিও প্রধান গুরুত্ব থাকে সমগ্রের উপর। তার নাটক কাঠামো অ্যারিস্টটলকে গভীরভাবে আকৃষ্ট করেছিল।
গ্রীক ট্রাজেডির বিকাশের অপর এক পুরোধা পুরুষ ছিলেন উইকিপিডিস। ইস্কাইলাস গ্রিক নাটকের যে আঙ্গিকের জন্ম দিয়েছিলেন সফোক্লিস তাকে আরও পরিণত করেছিলেন, ইউরিপিডিস তাকে সম্পূর্ণ করেছিলেন। এথেন্সের সামাজিক ও রাজনৈতিক অবক্ষয়ের সময় ইউরিপিডিস সবথেকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছিলেন। জীবন সম্পর্কে তাঁর উপলব্ধি ও দৃষ্টিভঙ্গির পার্থক্য তাঁকে ইস্কাইলাস ও সফোক্লিস থেকে আলাদা করেছিল। ইউরিপিডিসের নাটকে আফ্রোদিতি, হেরা, d ডায়োনিসাস প্রমুখের মতো দেবদেবীর উপস্থিতি থাকলেও ইউরিপিডিস এটা মানতে চাননি যে, দৈবীশক্তিই বিশ্ব সংসারের নিয়ন্ত্রক। তাঁর কাছে দেবী ইচ্ছা নয়, দুর্ঘটনাই জীবনকে 7 পরিচালনা করে। সফিস্ট চিন্তাভাবনা তাঁর ওপরে গভীর প্রভাব ফেলেছিল। তাই তাঁর নাটকে যুক্তি ও আবেগ পরস্পরের পরিপুরক। তার বিখ্যাত নাটক গুলি হল 'মেদেয়া',• 'হিপ্পোলিটাস', ইলেক্ট্রা', 'দ্যা ট্রোজান উইমেন', 'ব্যাকাই প্রভৃতি। 'মেদেয়া' নাটকে দেখা যায় জ্যাসন পরিবার নিজেদের প্রতিপত্তি, সম্পত্তি ইত্যাদি প্রতিষ্ঠা করতে তৎপর। আর মেদেয়া নিজের সমাজকে ছেড়ে জ্যাসনকে ভালোেবসে বিয়ে করে। কিন্তু যখন সে জানতে পারে জ্যাসন তাকে ত্যাগ করতে চলেছে, তখন সে জ্যাসনের নূতন স্ত্রীকে হত্যা করার সঙ্গে সঙ্গে জ্যাসনের ঔরসে নিজের গর্ভজাত সন্তানদেরও হত্যা করে। জ্যাসনের প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়। মেদেয়াকেও নিজের কৃতকর্মের শাস্তি এড়াতে রাজার সন্তানধারণের প্রতিশ্রুতি দিয়ে রাজার আশ্রয়ে থাকতে হয়। এহেন গোটা ঘটনার কোথাও ভাগ্যের নির্দেশ বা দেবদেবীর হস্তক্ষেপের বিষয় নেই। তবে ইউরিপিডিসের বৈপ্লবিক চিন্তাধারা সমকালীন এথেন্স গ্রহণ করতে পারেনি। রক্ষণশীলরা তাকে বিপদজনক বলে মনে করে। মৃত্যুর পর তিনি জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন।
উৎপত্তির পর থেকেই গ্রিক ট্র্যাজেডিতে বিবর্তন এসেছে। প্রথমদিকে সংলাপ ছিল অলংকৃত, নিতান্তই কাব্য। কিন্তু পরবর্তীকালে ট্র্যাজেডি হয়ে ওঠে গুরুগম্ভীর, আন্তরিক, সম্পূর্ণ এবং বড়ো মাপের কোনো ঘটনার অনুকরণে রচিত। গ্রিক-ট্র্যাজেডি একদিকে যেমন মানুষের : দৈনন্দিন অস্তিত্বের সীমাবন্ধ বর্তমান মুহূর্তকে তুলে ধরত, তেমনি অন্যদিকে অপার্থিব শক্তি যা সর্বব্যাপী এবং যার মধ্যে সবকিছুর প্রকাশ তার কথা দর্শককে মনে করাত। মানুষের অন্তর্নিহিত দ্বন্দু, মূল্যবোধের সংঘাত, সর্বোপরি নাগরিক জীবনকে সার্থকভাবে প্রতিফলিত করে গ্রিক ট্র্যাজেডি সর্বসাধারণের কৌশল হয়ে উঠেছিল।