ইউরোপের শিল্পোয়ন প্রক্রিয়া কিভাবে ইংল্যান্ডের থেকে আলাদা ছিল? আথবা মহাদেশের শিল্পোয়ন প্রক্রিয়ার সঙ্গে ইংল্যান্ডের শিল্পোয়ন প্রক্রিয়ার কী কী পার্থক্য ছিলো ?

ইউরোপের শিল্পোয়ন প্রক্রিয়া কিভাবে ইংল্যান্ডের থেকে আলাদা ছিল? আথবা মহাদেশের শিল্পোয়ন প্রক্রিয়ার সঙ্গে ইংল্যান্ডের শিল্পোয়ন প্রক্রিয়ার কী কী পার্থক্য

 ইউরোপের শিল্পোয়ন প্রক্রিয়া কিভাবে ইংল্যান্ডের থেকে আলাদা ছিল? আথবা মহাদেশের শিল্পোয়ন প্রক্রিয়ার সঙ্গে ইংল্যান্ডের শিল্পোয়ন প্রক্রিয়ার কী কী পার্থক্য ছিলো ?

ইউরোপের শিল্পোয়ন প্রক্রিয়া কিভাবে ইংল্যান্ডের থেকে আলাদা ছিল? আথবা মহাদেশের শিল্পোয়ন প্রক্রিয়ার সঙ্গে ইংল্যান্ডের শিল্পোয়ন প্রক্রিয়ার কী কী পার্থক্য ছিলো ?

শিল্প বিপ্লবে নেতৃত্ব দিয়েছিল ইংল্যান্ড। পরবর্তীকালে মহাদেশীয় ইউরোপে তাকে অনুসরণ করেছিল ফ্রান্স, জার্মানি,বেলজিয়াম ও রাশিয়া । এদের মধ্যে শিল্পায়নের ক্ষেত্রে বহু পার্থক্য আমাদের দৃষ্টি আকর্ষন করে । সাধারণভাবে বলো যায় মহাদেশীয় ইউরোপ শিল্পায়নের ক্ষেত্রে ইংল্যান্ডের তুলনায় এক প্রজন্ম পিছিয়ে ছিল । এ প্রসঙ্গে প্রথমেই উভয়ের শহরবাসী ও গ্রামবাসী মানুষের একটি তুলনামূলক বিচার করা যায় । 1851 খ্রীঃ নাগাদ ইংল্যান্ডে জনসংখ্যার প্রায় 50% শহরে বসবাস করত । অন্যদিকে প্রায় একই সময় ফ্রান্স ও জার্মানিতে এর হার ছিল ২৫% । উনবিংশ শতাব্দীর শেষ অবদি জার্মানির গ্রামে জনসংখ্যার চেয়ে নাগরিক জনসংখ্যা উল্লেখযোগ্য তারে বাড়ে । ফ্রান্সে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর গ্রামীণ ও শহুরে জনসংখ্যার মধ্যে একটা সমতা এসে ছিলে । বলাবাহুল্য নগরবাসী মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি বা হ্রাস শিল্পায়নের অগ্রগতি বা পশ্চাৎ-মুখীনতার পরিচায়ক । আবার পেশাগত দিক থেকে বিচার করলে দেখা যায় ইউরোপের দেশগুলো ইংল্যান্ডের তুলনায় শিল্পায়নের ক্ষেত্রে যথেষ্ট পিছিয়ে ছিল, মধ্য উনবিংশ শতকে ইংল্যান্ডের জনসংখ্যার মাত্র ২৫% কৃষিকে নিযুক্ত ছিল । বেলজিয়ামে এর সংখ্যা ছিল 50%, জার্মানির এই স্তরে পৌঁছাতে আরও ২৫ বছর সময় লেগেছিল ৷ 1895 খ্রিঃ একটি পরিসংখ্যান থেকে বোঝা যায় যে তখনও মহাদেশীয় ইউরোপে শিল্পের চেয়ে কৃষিতে বেশি সংখ্যক মানুষ নিযুক্ত ছিল ৷

আপনি চাইলে এগুলো পড়তে পারেন

মহাদেশীয় শিল্পায়ন ইংল্যান্ডের তুলনায় ছিল যথেষ্ট ধীর গতিসম্পন্ন ৷ শিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি আবিষ্কারের ক্ষেত্রেও এরা পিছিয়ে ছিল । 'কোনো কোনো ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও ইউরোপীয় শিল্পপতিরা গোপনে ইংল্যান্ড থেকে যন্ত্রপাতী আমদানি করত । কিন্তু এগুলো আয়ত্তে আনতে তাদের অনেক বেশি সময় লেগে ছিল । শিল্পায়ন প্রক্রিয়াও উভয়ের ক্ষেত্রে আলাদা ছিল ইংল্যান্ডে শিল্পবিষ্কার শুরু হয়েছিল সুতিবস্তু শিল্পকে কেন্দ্র করে । 1800 খ্রীঃ নাগাদ সেখানে সুতিবস্তু শিল্পের ব্যাপক সম্প্রসারণ ঘটেছিল । পরবর্তীকালে এর প্রভাব অনুভূত ইয়েছিল অন্যান্য শিল্পে ৷ সুতিবকল্প শিল্পের অগ্রগতি লক্ষ্য করে ইংল্যন্ডের পুঁজিপতি শ্রেণী লৌহ, কয়লা, রাসায়নিক ও অন্যান্য শিল্পে পুঁজি বিনিয়োগ করতে উৎসাহিত বোধ করেছিলেন । অন্যদিকে মহাদেশীয় ইউরোপে ভারি শিল্প কয়লা ও লোহা ছিল শিল্পবিপ্লবের ক্ষেত্রে অগ্রনি ক্ষেত্র । সুতিবস্তু, রাসায়নিক ইত্যাদি শিল্পের সূত্র পাত হয়েছিল আরও পরবর্তীকালে ।

ইংল্যান্ডের কয়েকটি ক্ষেত্রে বিশেষ সুবিধা ছিল, সেগুলি ইউরোপীয় দেশগুলোর ছিলনা, প্রকৃতি ইংল্যান্ডের ক্ষেত্রে যতখানি অনুকূল ছিল ইউরোপের ক্ষেত্রে ততটা ছিলনা । ইংল্যান্ডের প্রতি বর্গকিলোমিটারে যত মানুষ বসবাস করত মহাদেশীয় ইউরোপে তা করতনা । জনসংখ্যার তুলনায় মহাদেশীয় দেশগুলোর আয়তন ছিল অনেক বড়ো । প্রধানত আয়তন ও ভূপ্রকৃতির জন্য যাতায়াত ব্যবস্থার জন্য ইউরোপে পরিবহন ব্যয় বেশি হয় । ইউরোপের বাজার ছিল বিচ্ছিন্ন, বিক্ষিপ্ত । অন্যদিকে ইংল্যান্ডের জল ও স্থলপথ ছিল উন্নত এবং ভৌগলিক কারণে সেখানে একটি জাতি ও বাজার গড়ে উঠেছিল, শুধু তাই নয় ইল্যান্ডের শিল্পসম্পদ, দক্ষ শ্রমিক ও পর্যাপ্ত মূলধন ছিলে । কিন্তু ইউরোপের দেশগুলোর এই সব সুযোগ সুবিধা ছিলনা ।

শুধু প্রাকৃতিক কারণেই যে ইউরোপে ঐক্যবদ্ধ বাজার গড়ে ওঠেনি এটা মনে করার কোনো কারণ নেই । এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক কারণ । অষ্টাদশ শতকে ফ্রান্সে 4 টি পৃথক শুল্ক অঞ্চলের অস্তিত্ব লক্ষ্য করা যায় । জার্মানি ও ইতালিতে এই শুল্ক অঞ্চলের সংখ্যা আরও বেশি ছিল, কারণ 1870 খ্রীস্টাব্দের আগে পর্যন্ত তারা রাজনৈতিকভাবে ঐক্যবদ্ধ হতে পারেননি । তাছাড়া ইউরোপে শিল্পবিপ্লবের জন্য প্রয়োজনীয় কয়ালাখনি গুলি বহু দূর-দূরান্তে বিক্ষিপ্তভাবে অবঙ্ক্ষিত ছিল । এছাড়া কাঠের প্রাচুর্যের জন্য বহু ক্ষেত্রেই সেখানে কয়লা ব্যবস্থার না করে কাঠকে জ্বালানি হিসাবে ব্যবহার করা হত । ফলে ইউরোপ পুরাতন প্রযুক্তির ওপর নির্ভরশীল ছিল । যেহেতু ইউরোপীয় দেশগুলোতে কৃষি বিপ্লবের শিল্পখাত পণ্য দ্রব্যের জন্য উপযুক্ত বাজারও গড়ে ওঠেনি । সাধারণভাবে বলা যায় যে ইউরোপীয় গ্রামীন মানুষের ক্রয়ক্ষমতা শিল্পায়নের সঙ্গে সংগতি রেখে আনুপাতিক হারে তেমন বৃদ্ধি পায়নি । ইংল্যান্ডে ঠিক এর বিপরীত প্রতিক্রিড়াই লক্ষ্য পক্রিয়াই লভ্য করা যায় । সেজন্যই সেখানে শিল্পবিপ্লবে আরও ব্যাপক ও সার্থক হয়েছিল । অন্যান্য অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেও ইউরোপীয় মহাদেশ ইংল্যান্ডের তুলনায় একটু পিছিয়ে ছিল । বিশ্বের প্রতিযোগীতামূলক বাজারেও ইউরোপীয় পণ্য ইংল্যান্ডের পন্যের তুলনায় পিছিয়ে পড়ত ।

ইউরোপীয় মহাদেশীয় সামাজিক অবস্থা শিল্পবিপ্লবকে খব বেশি দূর অগ্রসর হতে দেয়নি । সেখানে সামাজিক স্তরভেদ ছিল অত্যন্ত প্রখর। যেটা ইংল্যান্ডে ঘটেনি । ইউরোপের দরিদ্র মানুষের ক্রয় ক্ষমতা ছিল অনেকটা কম । তারা তাদের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যদ্রব্য নিজ আবাস্থলের কাছাকাছি অঞ্চলে থেকেই ক্রয় করত । মহাদেশের নিত্যপ্রয়োজনীয় সাধারণ পণ্যের চাহিদা সীমিত ছিলম । এমনকি রোমান ক্যাথলিক চার্চ এবং উচ্চ বুর্জোয়া স্প্রেণীর মানুষের মধ্যে সীমিত ছিল পন্য সম্ভারের চাহিদা । প্রধানত এই কারণেই ইউরোপেীয় সমাজের সর্বস্তরে শিল্প বিপ্লবের প্রভাব তেমন ভাবে অনুভূত হয়নি ।

পরিশেষে কালা যেতে পারে শিল্প বিপ্লবের একটি জোড়ালো শর্ত হলে সংরক্ষণ নীতি । নিজের শিল্পকে রক্ষা করার জন্য উনিশ শতকে ইউরোপের প্রতি রাষ্ট্রই এই নীতি গ্রহন করেছিল । বিশেষত বিসমার্ক 1879 সালে খাদ্যশস্য, বস্তু, কাঠ ও মাংসের ওপর শুল্ক চাপিয়ে দিয়েছিলেন । 1892 সালে ফ্রান্স ইল্যান্ডের তৈরি জিনিসের ওপর 34% শুল্ক আরোপ করে । ইংল্যান্ডকে সংরক্ষন নীতি গ্রহন করতে হয়নি । কিন্তু তার হাত থেকে বাঁচার জন্য ফ্রান্স, জার্মানি ও রশিয়া সংরক্ষন নীতি গ্রহন করে ছিল । সুতরাং, শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ইংল্যান্ড মোটামুটি শিল্পায়নের একই ধারা বজায় রেখেছিল । বড়ো ধরনের উত্থান-পতন ইংল্যান্ডের এই শিল্প বিপ্লবের ক্ষেত্রে দেখা যায়নি । ইউরোপীয় মহাদেশের অন্যান্য দেশগুলি সম্পর্কে একথা বলা যায় যে ফ্রান্সের শিল্পায়নের গতি ছিল সবচেয়ে বেশি অসমান । ইংল্যান্ডের সঙ্গে একই সময় শুধু করলেও ফরাসী বিপ্লব ও নেপোলিয়নের সময় তার গতি দ্রুত হয় । জার্মানিতে শুরু করেছিল অনেক দেরিতে আবার রাশিয়াও শুরু করেছিল অনেক দেরিতে । কিন্তু কোনো কোনো সময় সে জার্মানির থেকেও অনেক বেশি এগিয়ে গিয়েছিল । তা সত্ত্বেও জার্মানি, ফ্রান্স বা রাশিয়া কেউই ইংল্যান্ডের সমকক্ষ হতে পারেনি । এই পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে ফ্রান্স, জার্মানি, রাশিয়া, বেলজিয়াম মহাদেশের প্রতিটি দেশেই শিল্পবিপ্লব ছিল সীমিত । ঝুঁকি ব্যবসার অভাব, রাজনৈতিক বিচ্ছিন্নতা, পরিবহনের অভাব, পুঁজির অভাব, গুনবিস্ফারণের অভাবজনিত কারণেই মহাদেশ সবসময় ইংল্যান্ডের থেকেও পিছিয়ে ছিল ৷

About the author

Irisha Tania
"আমি সেই মেয়ে, যে শব্দে বাঁচে। কলম আমার অস্ত্র, আর কাগজ আমার স্বপ্নের আকাশ। প্রতিটি অনুভব, প্রতিটি চিন্তা আমি সাজিয়ে রাখি অক্ষরের গাঁথুনিতে। কখনো গল্পে, কখনো কবিতায়, আবার কখনো নিঃশব্দের ভেতরে। আমি লিখি, কারণ লেখার মাঝে আমি নিজেকে খুঁজে পাই। …

Post a Comment

🌟 Attention, Valued Community Members! 🌟