নতুন বিশ্বে অভিযান বা পর্তুগাল ও স্পেনের ভৌগোলিক অভিযান বর্ণনা কর অথবা,পর্তুগীজ ও স্পেনীয়দের সমুদ্র অভিযানকে তুমি কিভাবে ব্যাখ্যা করবে। এই অভিযানগুলির ফলাফল কী ছিল?
পঞ্চদশ ও ষোড়শ শতকে ইউরোপীয় রাষ্ট্রগুলির মধ্যে পর্তুগাল স্পেন প্রথম উপনিবেশিক সাম্রাজ্য বিস্তারের সূচনা করেছিল ৷ আয়বেরীয় উপদ্বীপে অবস্থিত এই দুটি রাষ্ট্রের আটলান্টিক উপকূলের সান্নিধ্য এবং দুই সাহসী অভিযানের ঐতিহ্য ছিল ৷ এর সাথে উন্মুক্ত হয়েছিল বাণিজ্য বিস্তার সোনা-রুপা সংগ্রহ নানা প্রকার লাভজনক অর্থকরী ফসলের চাষের সম্প্রসারণ এবং ধর্ম প্রচারে বাসনা ৷ এই উদ্দেশ্যগুলি পর্তুগাল ও স্পেনকে আফ্রিকা,এশিয়া ও আমেরিকার তথা নতুন বিশ্বে উপনিবেশ স্থাপনে প্রভাবিত করেছিল ৷
আপনি চাইলে এগুলো পড়তে পারেন
১৪১৫ খ্রিস্টাব্দে পর্তুগিজরা আফ্রিকার পশ্চিম উপকূলে অবস্থিত সিউটা অধিকারের সঙ্গে সূচনা হয়েছিল এক নব ভৌগোলিক আবিষ্কার ও দূর সাহসিক সামুদ্রিক অভিযান ৷ এর ফলশ্রুতি হিসেবে ভাস্কোদাগামা প্রথম দক্ষিণ আফ্রিকার উপকূল প্রদক্ষিণ করে ভারতে পশ্চিম উপকূলে অবস্থিত কালিকটে আবর্তন করেন ৷ কলম্বাস আটলান্টিকের পশ্চিমে নতুন বিশ্ব আবিষ্কার করেন এটি পরবর্তীকালে আমেরিকা নামেও পরিচিত হয় ৷ পর্তুগিজ অভিযান সমূহের অন্যতম প্রেরণা প্রেরণার উৎস ছিল পর্তুগাল রাজকুমার ও বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী প্রিন্স হেনরি । ১৪৩৪ খ্রিস্টাব্দে পর্তুগিজরা সর্বপ্রথম পশ্চিম আফ্রিকার উপকূলে এক নব দিগন্তের উন্মোচিত করে ৷ আফ্রিকার পশ্চিম উপকূলের ওপর পর্তুগিজ আধিপত্য স্থাপিত হয় ৷ এই অঞ্চল গুলি থেকে পর্তুগিজরা জাহাজ বোঝাই করে সোনা ও দাস নিয়ে আসে ৷ উল্লেখ্য দাস ব্যবস্থার রমরমা দেখে হেনরি আফ্রিকার পশ্চিম উপকূলে অবস্থিত একটি দুর্গ ও গুদাম নির্মাণের আদেশ দিয়েছিলেন ৷ এটাই ছিলেন বহির্বিশ্বের প্রথম ইউরোপীয় কুঠি ।
সোনা ও দাসব্যবস্থার পাশাপাশি আটলান্টিক স্রোত বায়ু প্রবাহ এবং অন্যান্য ভৌগোলিক তথ্যের জ্ঞান পর্তুগীতের আফ্রিকাতে প্রাধান্য বিস্তারে সহায়তা করেছিল ৷ উল্লেখ্য ১৪৭৯ খ্রিস্টাব্দে স্পেনের সঙ্গে স্বাক্ষরিত চুক্তির দ্বারা সমগ্র পশ্চিম আফ্রিকার উপকূলে পর্তুগাল তার আধিপত্য স্থাপন করে ৷ সম্ভবত এটিই ছিল আধুনিক বিশ্বের উপনিবেশিক ভাগ্য কাটোয়া সংক্রান্ত প্রথম চুক্তি ৷
বার্থালোমিউদিয়াজ ১৮৮৭ খ্রিস্টাব্দে আফ্রিকার দক্ষিণ প্রান্তে সর্বপ্রথম অতিক্রম করেন ৷ ভাস্কো দা গামা আফ্রিকার পূর্ব উপকূল অতিক্রম করে ভারতে পৌঁছালে পর্তুগিজ প্রাচ্য সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ ছিল ৷ কারণ এরপর প্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে পর্তুগিজ দের সাথে বাণিজ্যিক সম্পর্ক স্থাপিত হয় ৷ তবে ভারত ও পাচ্য সাম্রাজ্য সংগঠনের ক্ষেত্রে পর্তুগালের ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা তথা ধর্মান্তরিত করার প্রয়াস ঘটে ৷
পর্তুগালের ভারতে আসার জলপথ আবিষ্কারের পর কলম্বাসের অভিযানের প্রতি পর্তুগাল উদাসীন হয়ে ওঠে ৷ এই অবস্থায় স্পেন কলম্বাসের অভিযানে পৃষ্ঠপ্রসাদ রূপে আবির্ভূত হয় ৷ কলম্বাস তার প্রথম অভিযানে একাধিক অঞ্চল আবিষ্কার করেন এবং এইসব অঞ্চলের স্পেনীয় উপনিবেশ স্থাপিত হয় ৷ কলম্বাসের অভিযান পরবর্তী কালে আমেরিকা ভেস্পুচিকে গভীরভাবে অনুপ্রাণিত করেছিল ৷ তিনি প্রথম নতুন মহাদেশের মূল ভূখণ্ড তথা দক্ষিণ আমেরিকার পদার্পণ করেন এবং তারই নাম অনুসারে এই মহাদেশের নামকরণ হয়েছিল ৷
বস্তুত ষোড়শ শতক ছিল স্পেনের আমেরিকা বিজয় ও উপনিবেশ প্রতিষ্ঠার গৌরবময় যুগ ৷ এই যুগের স্পেন উত্তর মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকার একটি বিস্তীর্ণ অঞ্চলে উপনিবেশ গড়ে তুলতে সক্ষম হয় এবং একে একে প্রাচীন সভ্যতা পেনের প্রধানত হয় ।
নির্বিধায় পরিশেষে বলা যায় স্পেন নির্মমভাবে এবং নতুন উপনিবেশের সম্পদ লুণ্ঠন ও আরোহণ করেছিল ৷ পেরুর রুপোর খনির উপর সে তার একচেটিয়া অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছিল ৷ দক্ষিণ আমেরিকা থেকে সোনা আরোহন করেছিল ৷ যেখানে সোনা ও খনিজ সম্পদের পাওয়া যেত না । সেখানের উর্বর জমিতে কফি,ইক্ষু, তামাক,কোকো প্রভৃতি চাষের সম্প্রসারণ ঘটিয়েছিল ৷