নরমপন্থীদের সীমাবদ্ধতা উল্লেখ করো। অথবা, নরমপন্থীদের যে-কোনো দুটি সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করে।

নরমপন্থীদের যে-কোনো সীমাবদ্ধতা
ভারতের জাতীয় কংগ্রেসের মধ্যে মতাদর্শগত সৃষ্ট দুটি গোষ্ঠীর নাম হল—নরমপন্থী ও চরমপন্থী। জাতীয় কংগ্রেস প্রতিষ্ঠার প্রথম পর্বে (১৮৮৫-১৯০৫ খ্রি.) যেসব কংগ্রেসী নেতা ব্রিটিশদের কাছ থেকে আবেদন-নিবেদন নীতির মাধ্যমে ভারতবাসীর দাবিদাওয়া আদায় করতে চেয়েছিলেন তাঁরা নরমপন্থী নামে পরিচিত । কয়েকজন নরমপন্থী নেতা হলেন উমেশচন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়, দাদাভাই নৌরজি, গোপালকৃষ্ণ গোখলে, সুরেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ । আসলে নরমপন্থী নেতারা আবেদন-নিবেদন অধিকার আদায়ে সচেষ্ট হলেও তাদের কার্যকলাপ সাধারণ ভারতবাসীর মনে তেমন প্রভাব ফেলতে পারেনি।
চরমপন্থী জাতীয়তাবাদীরা নরমপন্থীদের 'ভীরু ও উদাসীন' বলে মনে করতেন । তাদের মধ্যে রাজনৈতিক ভিক্ষুকের মানসিকতা ছিল স্পষ্ট । তারা ভিক্ষাবৃত্তি অবলম্বন করে ব্রিটিশ সরকারের কাছ থেকে কৃপা প্রার্থনা করতেন । স্বাভাবিকভাবেই নরমপন্থীদের রাজনৈতিক ভিক্ষাবৃত্তি ও আবেদন-নিবেদনের রাজনীতি সাধারণ মানুষের মধ্যে কোনো প্রভাব ফেলতে পারেনি বা একটি ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন গড়ে তুলতে ব্যর্থ হয়েছিল। রাজনৈতিক আন্দোলনের ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষকে উদ্দীপ্ত করার মতো সামর্থ্য তাঁদের ছিল না।
নরমপন্থী নেতারা অত্যন্ত বিলাসবহুল জীবনযাত্রা করতেন। তাঁদের উচ্চবর্গীয় (Elitist) আদব কায়দা তাঁদের সাধারণ মানুষের থেকে বিচ্ছিন্ন করেছিল। তাছাড়া বিভিন্ন স্থানে জমিদার ও ইজারাদাররা কংগ্রেসের নরমপন্থী নেতাদের ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠেছিলেন। এই শ্রেণীর মানুষেরা স্বাভাবিকভাবেই র্যাডিকাল কর্মসূচির অথবা প্রতিষ্ঠান বিরোধী গণবিক্ষোভের বিরোধী ছিলেন।
নরমপন্থী অর্থনৈতিক তাত্ত্বিকেরা ভারতের সস্তা কাঁচামাল ব্রিটেনে নিয়ে যাওয়া এবং তা দিয়ে তৈরি ব্রিটিশ পণ্যে ভারতীয় বাজার ভরিয়ে দেবার বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছিলেন। অথচ ভারতে ঔপনিবেশিক শাসন সৃষ্ট মৌলিক রাজনৈতিক কাঠামো পরিবর্তনের তাঁরা বিরোধী ছিলেন। এই মৌলিক রাজনৈতিক কাঠামো যে ভারতে ব্রিটেনের সাম্রাজ্যবাদী লুণ্ঠন চালানোর পথ উন্মুক্ত করেছিল এই সহজ সত্য তাঁরা উপলব্ধি করেননি। ধনতন্ত্রের স্বাধীন বিকাশের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক স্বাধীনতা অর্জন যে একটি আবশ্যিক পূর্বশর্ত, এ বিষয়ে "অর্থনৈতিক জাতীয়তাবাদী"রা সম্পূর্ণ উদাসীন ছিলেন।
একথা অস্বীকার করা যায় নরমপন্থী নেতাদের লক্ষ্য, কর্মসূচি ও আন্দোলন পদ্ধতিতে নানা ত্রুটি ছিল, বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তাঁরা ব্যর্থ হন। নরমপন্থীরা তরুণ প্রজন্মের কাছে গ্রহণযোগ্য হননি। তাদের রাজনীতি দেশের নানা প্রান্তে এক হতাশার সৃষ্টি করেছিল। আর সেই হতাশাই ভারতবর্ষে চরমপন্থী রাজনীতির উত্থানের পথকে প্রশস্ত করেছিল।
তোমাকে অনেক ধন্যবাদ নরমপন্থীদের সীমাবদ্ধতা উল্লেখ করো। অথবা, নরমপন্থীদের যে-কোনো দুটি সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করে। এই নোটটি পড়ার জন্য