গুপ্তযুগের মুদ্রা। Gupta period coins

গুপ্তযুগের মুদ্রা।

 গুপ্তযুগের মুদ্রা।

চতুর্থ শতকের গোড়ার দিকে প্রতিষ্ঠিত গুপ্তসাস্রাজ্য যা প্রথমদিকে পরিচালিত হয় শ্রীগুপ্ত নামক এক রাজার হস্ত নিয়ন্ত্রণে। প্রাচীন ভারতের ইতিহাসে গুপ্তসাম্রাজ্যের আলোচনা বর্ণনাময়। গুপ্তসাম্রাজ্যের অস্তিত্ব প্রতিষ্ঠিতকরণের সময়ের পরবর্তী দুই শতক পর্যন্ত টিকে ছিল, যার সামগ্রিক বিকাশ বা বিস্তার বিশেষভাবে লক্ষ করা যায়। একাধিক সুশাসকের ছত্রছায়ায় গুপ্তসাআজ্য সমৃদ্ধি অর্জন করতে শুরু করে। ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে গুপ্তশাসকগণ আর্থিক সমৃদ্ধতার পরিচায়ক। আর এই ব্যবসা-বাণিজ্যের অতুলনীয় বিকাশের অন্যতম পরিচায়ক বা বৈশিষ্ট্য হল মুদ্রা। গুপ্তআমলে মুদ্রা ব্যবস্থার যে বিকাশ দেখা যায় তা অন্য কোনো সাম্রাজ্যের মুদ্রা প্রক্রিয়া থেকে প্রশংসনীয়।


গুপ্তআমলে মুদ্রার বিভিন্ন ধরনও পরিলক্ষিত। দূরপাল্লা ও বৈদেশিক বাণিজ্যে স্বর্ণমুদ্রা কাঙ্ক্ষিত। স্বর্ণমুদ্রা আবার বিভিন্ন প্রকার ছিল। স্বর্ণমুদ্রার মান ছিল উৎকৃষ্ট। পরম্পরাগত গুপ্তশাসকগণ স্বর্ণমুল্য জারির সংখ্যা বাড়াতে থাকে। সমুদ্রগুপ্তর ৬টি স্বর্ণমুদ্রা জারি থেকে পরবর্তীকালে ১৪টি পর্যন্ত স্বর্ণমুদ্রা জারি হয় প্রথম কুমারগুপ্তর আমলে। বলা হয় যে, কুষাণ মুদ্রার একটু অনুকরণ রেখে গুপ্ত স্বর্ণমুদ্রা জারি করা হত। গুপ্ত স্বর্ণমুদ্রায় দন্ডায়মান রাজার মূর্তি উৎকীর্ণ ছিল। গুপ্তদের রাজচিহ্ন হল 'গড়ুরধ্বজ'। স্বর্ণমুদ্রা 'দীনার' নামাঙ্কিত। প্রথমদিকে স্বর্ণমুদ্রা তৌলরীতির মান ১২১.১ গ্রেন থেকে স্কন্দগুপ্তর সময় ১৪৪ গ্রেন পর্যন্ত তৈরি হয়।


গুপ্ত স্বর্ণমুদ্রায় 'রাজার পদবি', 'উপাধি' উৎকীর্ণও থাকতে দেখা যায়। 'রাজার বাম হাতে ধনুক', 'ডান হাতে বীর'ধারী চিত্রগুপ্ত স্বর্ণমুদ্রায় নজির মেলে। স্বর্ণমুদ্রার 'শ্রেণি-উপশ্রেণি' বিভক্ত যে ছিল তার চিত্রও পরিস্ফুট হয়। সমুদ্রগুপ্ত চক্রবেষ্টিত চিত্রর সঙ্গেঙ্গ সঙ্গে নতুন নতুন বিষয়বস্তুর সমাহারও মুদ্রায় উৎকীর্ণ থাকতে দেখা যায়। শিকার ও অশ্বারোহণের বিষয়বস্তু ও মুদ্রায় স্থান পেয়েছে। অশ্বমেধ যজ্ঞানুষ্ঠানে দান করা হত মুদ্রা ব্রাহ্মণদের উদ্দেশ্যে। রৌপ্যমুদ্রার মান তেমন উন্নত ছিল না। দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্তর আমলে রৌপ্যমুদ্রা উৎকীর্ণ করা শুরু হয়। মূলত লেনদেনের মাধ্যম হিসাবে। গুজরাট ও পশ্চিম ভারতই হল রৌপ্যমুদ্রার কেন্দ্রস্থল। তাঅমুদ্রার স্বল্প প্রচলনই নজির মেলে গুপ্তআমলে। প্রাত্যহিক জীবন নির্বাহিতকরণের মাধ্যম ছিল কড়ি, ফা-হিয়েন এ বিষয়ে মত ব্যস্ত করেন।


গুপ্তযুগের শেষের দিকে মুদ্রাজারির ক্ষেত্রে নিম্নমানের ধাতু ব্যবহার করা হয় এবং খাদ মেশানো শুরু হয় মুদ্রা উৎকীর্ণকরণে এবং তৌলরীতির মান একেবারেই কমিয়ে দেওয়া হয়। তৎসত্ত্বেও বলা চলে যে, গুপ্তসাম্রাজ্যের অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে অর্থাৎ, ব্যবসা-বাণিজ্যের মূল বৈশিষ্ট্যস্বরূপ মুদ্রার আলোচনা বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। কোনো সাম্রাজ্যের সমৃন্ধতা অর্জনেই অথনৈতিক সাফল্যের অন্যতম প্রধান শর্ত। যা গুপ্তযুগের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। তাই গুপ্তযুগের মুদ্রা সম্পর্কিত আলোচনা বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ।

তোমাকে অনেক ধন্যবাদ গুপ্তযুগের মুদ্রা। Gupta period coins এই নোটটি পড়ার জন্য

About the author

Irisha Tania
"আমি সেই মেয়ে, যে শব্দে বাঁচে। কলম আমার অস্ত্র, আর কাগজ আমার স্বপ্নের আকাশ। প্রতিটি অনুভব, প্রতিটি চিন্তা আমি সাজিয়ে রাখি অক্ষরের গাঁথুনিতে। কখনো গল্পে, কখনো কবিতায়, আবার কখনো নিঃশব্দের ভেতরে। আমি লিখি, কারণ লেখার মাঝে আমি নিজেকে খুঁজে পাই। …

Post a Comment

🌟 Attention, Valued Community Members! 🌟