স্ত্রী শিক্ষা বিস্তারের ক্ষেত্রে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের অবদান কি ছিল Ishwar Chandra Vidyasagar in the field of women's education

স্ত্রী শিক্ষা বিস্তারের ক্ষেত্রে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের অবদান কি ছিল

 স্ত্রী শিক্ষা বিস্তারের ক্ষেত্রে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের অবদান কি ছিল


বিদ্যাসাগর প্রাচ্য-পশ্চাত্যের শিক্ষা সমন্বয়ে শিক্ষা ব্যবস্থাকে আধুনিক রূপ দিতে চেয়েছিলেন ৷ এই আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থায় তিনি নারী সমাজকেও শামিল করতে চেয়েছিলেন ৷ বিদ্যাসাগর বুঝেছিলেন যে শিক্ষার অভাবে সমাজের নারীরা পিছিয়ে পড়ছে। তাই এই শিক্ষা ছাড়া নারী সমাজের মুক্তি নেই ৷ বিদ্যাসাগর এটা স্পষ্ট রূপে বিশ্বাস করতেন যে স্ত্রী জাতিকে শিক্ষিত করতে না পারলে সমাজ সভ্যতাও জাতির জীবনধারায় স্থায়ী ও প্রকৃত উন্নতি সম্ভব নয় ৷ কর্ম জীবন থেকে অবসর নেওয়া চিঠিতে তিনি লিখেছিলেন,"আমি আর যতদিন বাঁচবো সেই সময়টা দেশের ছেলেমেয়ে দেওয়া যাতে লেখাপড়া শিখে মানুষ হয় তার জন্য চেষ্টা করব আর আমার এই ব্রত আমার মৃত্যুর পরেও শ্মশানে দুইয় মিশে সার্থক হবে ৷"


বিদ্যাসাগর শহর অপেক্ষা গ্রাম অঞ্চলে বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা উপর জোর দেন তিনি বেতন সাহেবের সাহায্য নিয়ে ১৮৫৯ খ্রিস্টাব্দে ৭ই মে প্রতিষ্ঠা করেন হিন্দু বালিকা বিদ্যালয় বর্তমানে যার নাম বেথুন স্কুল বিশেষ বিদ্যালয় পুরোদর্শক হিসেবে তিনি বাংলায় বিভিন্ন জেলার বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেন এক্ষেত্রে প্রথমে তিনি বর্ধমান তারপর হুগলি গোপালনগর সহ বিভিন্ন জেলায় মোট ৩৮টি বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন যার মধ্যে হুগলিতে ২৩ টি বর্তমানে ১১ টি মেদিনীপুরে তিনটি নদিয়ায় একটি বালিকা বিদ্যালয় গড়ে ওঠে এ বিদ্যালয় গুলিতে প্রায় ১৩২৬ পড়াশোনা করার সুযোগ সুবিধা পেয়েছিলেন তিনি মায়ের স্মৃতির রক্ষার উদ্দেশ্যে নিজের জন্মস্থানে বীরসিংহ ভগবতী বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন ১৮৯০ খ্রিস্টাব্দে



হিন্দু বালিকা বিদ্যালয় এর সম্পাদক হওয়ার পর বিদ্যাসাগর নিজের চেনা আত্মীয়-স্বজন বন্ধু-বান্ধব কন্যা সন্তাদের এই বিদ্যালয়ের ভর্তির অনুরোধ জানান ৷ মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের জ্যেষ্ঠ কন্যা সুদামিনী সহ বহু অভিজাত ব্যক্তিদের অনেকেই বিদ্যাসাগরের এই আহবানে সাড়া দেন ৷ এই বিদ্যালয়ের ছাত্রীদের স্কুলের গাড়ি করে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করেছিলেন তিনি ৷ গাড়ির দুদিকে লেখা থাকতো স্ত্রী শিক্ষা স্বপক্ষে প্রচার,"কন্যা বেবং পালনীয়া শিক্ষানীরাতি যত্নতঃ" অর্থাৎ কন্যাকেও পুত্রের মতো লালন পালন ও শিক্ষাদান করতে হবে ৷ নারী শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে দেশবাসীকে সচেতন করার জন্য তিনি সংবাদ প্রভাকর পত্রিকায় এক বিকৃত দেন যাতে বলা হয়,"স্ত্রী সুশিক্ষিত ও জ্ঞান সম্পন্ন হইলেই কিছু সন্তান দিগককে শিক্ষা দিতে পারবে ৷"




বিদ্যাসাগর আশা করেছিলেন যে তিনি যে সব বিদ্যালয় গুলি গড়ে তুলেছেন সেগুলি পরিচালনার জন্য ভারত সরকার আর্থিক সাহায্য দেবে । কিন্তু প্রথমবার এই বিদ্যালয়গুলির খাতে কিছু টাকা মঞ্জুর হলেও পরবর্তীকালে সরকারি তরফ থেকে সেরকম ভাবে কোনো আর্থিক সাহায্য পায়নি ৷ এই বিদ্যালয়গুলি পরিচালনার জন্য বিদ্যাসাগর একটি নারী শিক্ষা ভান্ডার তহবিল গঠন করেন ৷ এছাড়াও তিনি স্কুলের শিক্ষকদের বেতন সহ বহু খরচ দায়ভার নিজে বহন করেন ‌৷ নারীদের উচ্চশিক্ষায় আলোয় নিয়ে আসার জন্য তিনি প্রতিষ্ঠা করেন বেথুন কলেজ , মেট্রোপলিটন কলেজ এছাড়াও তিনি শ্রী শিক্ষার সঠিক প্রসারে উদ্দেশ্যে মেদিনীপুর, হুগলি,বর্ধমান সহ বিভিন্ন জেলায় মুক্তি শিক্ষা সম্মিলনী নামক সংগঠন গড়ে তোলেন ৷ 


সুতরাং বিদ্যাসাগর চেয়েছিলেন সংস্কৃত ও ইংরেজি সমৃদ্ধ জ্ঞান ভান্ডার এর মিলন ঘটিয়ে একটা নতুন আধুনিক শিক্ষার আলোকে নারী সমাজকে শিক্ষিত করে তুলতে ৷ তিনি নারীকে শিক্ষিত করে তাদের সম্মানের আসনে বসাতে চেয়েছিলেন ৷ এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন যেখানে নারীরা সম্মানিত হয় সেখানে ভগবান বাস করে৷"




About the author

Irisha Tania
"আমি সেই মেয়ে, যে শব্দে বাঁচে। কলম আমার অস্ত্র, আর কাগজ আমার স্বপ্নের আকাশ। প্রতিটি অনুভব, প্রতিটি চিন্তা আমি সাজিয়ে রাখি অক্ষরের গাঁথুনিতে। কখনো গল্পে, কখনো কবিতায়, আবার কখনো নিঃশব্দের ভেতরে। আমি লিখি, কারণ লেখার মাঝে আমি নিজেকে খুঁজে পাই। …

Post a Comment

🌟 Attention, Valued Community Members! 🌟