মার্কো পোলোর ভ্রমণবৃত্তান্ত সম্পর্কে যা জান লেখ বা,মার্কো পোলো কোথাকার অধিবাসী ছিলেন? তিনি কোন্ পথে পিকিং গিয়েছিলেন এবং কোন্ পথে চীন থেকে স্বদেশে ফিরেছিলেন?
মার্কো পোলো ও তাঁর ভ্রমণবৃত্তান্ত
মার্কো পোলো ছিলেন একজন ভেনিসীয় বণিক। তিনি দীর্ঘকাল চীনদেশে ছিলেন। পরে তিনি যখন স্বদেশে ফিরে এসেছিলেন, তখন ইতালির ভেনিস ও জেনোয়ার মধ্যে যুদ্ধ হয়েছিল। যুদ্ধে মার্কো পোলো বন্দী হয়েছিলেন। কারাগারে থাকার সময়ে তিনি রাস্টিসিয়ানো নামে এক সহবন্দীকে চীন ও প্রাচ্য সম্পর্কে তাঁর বিস্ময়কর সব অভিজ্ঞতার কথা বলেছিলেন। রাস্টিসিয়ানো তা লিখে রেখেছিলেন এবং সেগুলি পরে পুস্তকাকারে প্রকাশ করেছিলেন। ঐ বইয়ে বর্ণিত বিষয় তখন অনেকের কাছে অবিশ্বাস্য মনে হ'লেও তা ইউরোপে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছিল এবং চীনদেশ ও প্রাচ্য সম্পর্কে ইউরোপবাসী কৌতূহলী হয়ে উঠেছিল।
![]() |
প্যাক্স মঙ্গোলিকা যুগে মার্কো পোলোর পূর্ব দিকে ভ্রমণের চিত্রিত কাতালান অ্যাটলাসের একটি ক্লোজআপ। |
এই বিবরণ থেকে জানা যায়, ভেনিসের নিকলো। পোলো ও মাফিও পোলো নামে দু ভাই ছিলেন বড় ব্যবসায়ী। তাঁরা ব্যবসার জন্য কনস্টান্টিনোপলে থাকতেন। তাঁরা ১২৬০ খ্রীষ্টাব্দের কাছাকাছি সময়ে ক্রিমিয়া ও কাজান হয়ে গিয়েছিলেন বোখারা। ঐসময়ে কুবলাই খানের দূতরা পারস্যে তাঁর ভাই হুলাগুর দরবারে এসেছিলেন। তাঁদের সঙ্গে পোলো-ভাইদের দেখা হ'লে তাঁদের সঙ্গে পোলো-ভাইরা কুবলাই খানের দরবারে যান। কুবলাই খান তাঁদের কথাবার্তা শুনে মুগ্ধ হন এবং ইউরোপ থেকে একশ জন পণ্ডিত ব্যক্তিকে আনবার জন্য তাঁদের দেশে পাঠিয়ে দেন। পোলো-ভাইরা দেশে ফিরে রোমের পোপকে এ সম্পর্কে জানান। কিন্তু পণ্ডিতরা কেউ ঐ সুদূর দেশে যেতে সম্মত হন না। শেষে মাত্র দুজন গ্রীষ্টান সন্ন্যাসীকে সঙ্গে নিয়ে প্রায় দুবছর পরে তাঁরা আবার চীনদেশে রওনা হন। তাঁরা সঙ্গে নেন নিকলোর তরুণ পুত্র মার্কোকে।
![]() |
মার্কো পোলোর ভ্রমণের মানচিত্র |
![]() |
ইল মিলিওনের একটি ক্ষুদ্রাকৃতি |
এবারে কিন্তু তাঁরা অন্য পথে গেলেন। তাঁরা প্রথমে গেলেন জেরুজালেম। সেখান থেকে পারস্যোপসাগরের তীরে ওরমুজ বন্দরে। কিন্তু জলপথে না গিয়ে তাঁরা পারস্যের মরুভূমির মধ্য দিয়ে বন্ধু, কাশগর ও খোটান হয়ে হোয়াং হো নদীর তীর ধরে গেলেন চীনের রাজধানী পিকিংয়ে (বেইজিংয়ে।। দেশ থেকে সন্ন্যাসীকে সঙ্গে নিয়ে প্রায় দুবছর পরে তাঁরা আবার চীনদেশে রওনা হন। তাঁরা সঙ্গে নেন নিকলোর তরুণ পুত্র মার্কোকে।
![]() |
মার্কো পোলোর মোজাইক প্যালাজো ডোরিয়া-তুর্সি, জেনোয়া, ইতালিতে প্রদর্শিত |
এবারে কিন্তু তাঁরা অন্য পথে গেলেন। তাঁরা প্রথমে গেলেন জেরুজালেম। সেখান থেকে পারস্যোপসাগরের তীরে ওরমুজ বন্দরে। কিন্তু জলপথে না গিয়ে তাঁরা পারস্যের মরুভূমির মধ্য দিয়ে বন্ধু, কাশগর ও খোটান হয়ে হোয়াং হো নদীর তীর ধরে গেলেন চীনের রাজধানী পিকিংয়ে (বেইজিংয়ে)। দেশ থেকে পিকিং পৌঁছতে তাঁদের প্রায় আড়াই বছর লেগেছিল। মার্কো পথে তুর্কী ভাষা শিখে নিয়েছিলেন। পোলোরা কুবলাই খানের
স্বরবারে এসে পৌঁছলে কুবলাই খান মার্কোকে দেখে মুগ্ধ হন। মার্কোকে তিনি রাজকার্যে নিয়োগ করেন এবং গুরুত্বপূর্ণ নানা কাজে নানাস্থানে পাঠান। মার্কো কিছুদিনের জন্য ইয়াংচাও প্রদেশের শাসনকর্তাও নিযুক্ত হন।
পোলোরা চীনদেশে ষোল বছরেরও বেশি ছিলেন। চীনদেশে তাঁরা খুব সুখে থাকলেও দেশে ফেরার জন্য ব্যাকুল হয়ে উঠে ছিলেন। কিন্তু কুবলাই খাঁ তাঁদের আসতে দিচ্ছিলেন না। এই সময় দেশে ফেরার একটি সুযোগ মিলল। পারস্যের খান হুলাগুর পৌত্র রাজা আরগনের স্ত্রীবিয়োগ হয়েছিল। তাঁর রানী ছিলেন মঙ্গোল রাজকন্যা; মৃত্যুকালে রানী স্বামীকে এই অঙ্গীকার করান যে আরগন যেন মঙ্গোল রাজকন্যা ছাড়া আর কাউকে বিবাহ না করেন। আরগান কুবলাই খানকে একজন মঙ্গোল রাজকন্যা। পাঠাবার জন্য অনুরোধ করেন। কুবলাই খান আরগনের জন্য একজন মঙ্গোল রাজকন্যাকে পাঠান। ঐ রাজকন্যা স্থলপথের ক্লেশ সইতে পারবেন না ভেবে তাঁকে জলপথে পাঠাবার ব্যবস্থা করা হয়। নাবিকরা অজানা পথে আসতে ভয় পেলে পথপ্রদর্শক-রূপে পোলোরা তাদের সঙ্গে আসার অনুমতি পান।
পোলোরা রাজকন্যাকে নিয়ে দক্ষিণ চীনের কোন বন্দর থেকে রওনা হন। তাঁরা সুমাত্রা ও দক্ষিণ ভারতে বেশ কিছুদিন কাটিয়ে দুবছর পরে পারস্যে পৌঁছেন। ইতিমধ্যে আরগনের মৃত্যু হয়েছিল। তাঁরা মঙ্গোল রাজকন্যাকে আরগনের উত্তরাধিকারীর হস্তে অর্পণ ক'রে ভেনিসে ফেরেন (১২৯৫)।
![]() |
১৯৮২ সালে জারি করা ইতালীয় ব্যাংকনোট, মার্কো পোলোর চিত্রিত। |
তাঁরা সুদীর্ঘকাল চীনদেশে মঙ্গোল দরবারে থাকায় তাঁদের বেশভূষা ছিল মঙ্গোলীয়। তাই আত্মীয়-স্বজনরা তাঁদের চিনতে পারেন না। প্রাচ্যের বিপুল ধনসম্পদ ও তাঁদের অবিশ্বাস্থ অভিজ্ঞতার কথাও কেউ বিশ্বাস করতে চান না। তখন তাঁর একটি ভোজের আয়োজন ক'রে সেখানে নিজেদের পোশাকের ভাঁজের ভেতর থেকে অসংখ্য মণিমুক্তা, হীরা-জহরত বার ক'রে সকলকে চমকে দেন। মার্কো পোলো তাঁর কথাবার্তায় প্রায়ই চীনদেশের কোটি কোটি মানুষ ও কোটি কোটি মুদ্রার কথা বলতেন। তাই লোকে তাঁকে মার্কো মিলিয়নস্ বা মার্কো কোটি-কোটি বলে ঠাট্টা করত।
![]() |
১৯৮২ সালে জারি করা ইতালীয় ব্যাংকনোট, মার্কো পোলোর চিত্রিত। |
মার্কো পোলোর ভ্রমণবৃত্তান্তকে গোড়ার দিকে অনেকে আজগুবি ও অবিশ্বাস্য মনে করলেও পরে তা ইউরোপীয়দের চীন ও প্রাচ্য সম্পর্কে কৌতূহলী ক'রে তুলেছিল। মার্কো পোলো উত্তর সম্পর্কে কৌতূহলী ক'রে তুলেছিল। মার্কো পোলো উত্তর চীনকে ক্যাথে, দক্ষিণ চীনকে মান,জি এবং রাজধানী পিকিংকে কাম্বালাক নামে বর্ণনা করেছিলেন। চীন ইউরোপীয়দের কাছে হয়ে উঠেছিল স্বপ্নের দেশ। চীনে ও প্রাচ্যে যাওয়ার জন্য ইউরোপীয়রা জলপথ আবিষ্কারের চেষ্টায় মত্ত হয়েছিল। এর ফলে তারা একদা আফ্রিকার দক্ষিণ প্রান্ত ঘুরে ভারত ও দূর প্রাচ্যে যাওয়ার জন্য জলপথ এবং আমেরিকার দুই মহাদেশ আবিষ্কার করেছিল।
ছবির সূত্রঃ- উইকিপিডিয়া
ইতিহাসের কন্ঠস্বর /itihasherkonthoshor