আদি মধ্যযুগ বলতে কী বোঝো?
আদি মধ্যযুগ বলতে কী বোঝো?
ভূমিকা :-
সমসাময়িক ঐতিহাসিক গবেষণা পদ্ধতির আলোকে ভারতের ঐতিহাসিক পেক্ষিতে "আদি মধ্যযুগ" যুগ বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ । ভারতের ইতিহাসে আদি মধ্যযুগের অস্তিত্ব সম্পর্কে ঐতিহাসিকরা ভিন্নমত পোষণ করেন । কোন কাল বিভাজন সম্ভব কিনা সে বিষয়ে ঐতিহাসিকদের মধ্যে বিস্তর মতপার্থক্য আছে । পন্ডিতেরা প্রাচীনতা থেকে মধ্যযুগে কিংবা আদিতি ঐতিহাসিক থেকে আদি মধ্যযুগের রূপান্তরের ঘটনাটিকে প্রধানত প্রাচীন সাংস্কৃতিক মৌল এর অবক্ষয়ের নিরীক্ষা বিশ্লেষণ করেছেন । বিভিন্ন ঐতিহাসিক, যেমন অধ্যাপক নিরঞ্জন রায় হুনদের আক্রমণ এবং অধ্যাপক এ আর এস শর্মার 17 শতকের অগ্রাহার ব্যবস্থা, এই অবনতির কারণ সম্পর্কে ভিন্ন ভিন্ন মতামত দিয়েছেন । এছাড়াও ডঃ নন্দী তার "আরবান ডিকে ইন ইন্ডিয়া" গ্রন্থে নগরের অবক্ষয় জনিত সমস্যা গুলিকে তুলে ধরেছেন ৷
ঐতিহাসিক পর্ব হিসেবে আদি মধ্যযুগের এই ধারণাকে ভারতীয় এশিয়ার কংগ্রেস নাগপুর অধিবেশনে ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দের এক বিশেষ গুরুত্ব কর । এই সময় ভারতের প্রাচীন যুগে দুটি ভাগে বিভক্ত করা হয় যথা প্রথমটি, হল প্রথম পর্বে রয়েছে ৭১১ খ্রিস্টাব্দে পর্যন্ত এবং ৭১২ থেকে ১২০০৬ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত দ্বিতীয় পর্বের মধ্যে ভাগ করে । যাইহোক, ভারতে সাম্প্রতিক উন্নয়ন হল 1206 থেকে 1707 সাল পর্যন্ত দীর্ঘ 501 বছরের মুসলিম শাসনকে বিভক্ত করার একটি প্রচেষ্টা । প্রারম্ভিক মধ্যযুগকে 1991 সালের জয়পুর ইতিহাস কংগ্রেস দ্বারা ১২০৬ খ্রিস্টাব্দে অর্থাৎ দিল্লির সুলতানি শাসনের সূচনা থেকে ১৫২৬ খ্রিস্টাব্দে অর্থাৎ দিল্লিতে মুঘল শাসনের প্রতিষ্ঠা কালকে আদি মধ্যযুগ' নামকৃত করা হয়েছে ।
ভারতের বিশিষ্ট ঐতিহাসিক বিদরা যেমন রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায় রমেশচন্দ্র মজুমদার নীলকন্ঠ শাস্ত্রী প্রমুখরা তাদের প্রাচীন ভারতের বিষয়ক গ্রন্থ গুলিতে 1206 খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত ইতিহাসকে সন্দিষ্ট করেছে ৷ ডক্টর রামচরন শর্মা প্রাচীন ভারতকে হিন্দু ভারত এবং মধ্যযুগের ভারতকে মুসলিম ভারতীয় অভিহিত করার প্রয়াস বলে মনে করেছেন ৷
অধ্যাপক চট্টোপাধ্যায় এর মতে, আদি মধ্যযুগ সম্পর্কে বিস্তরকের নিরসনকল্পে কয়েকটি বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া আবশ্যিক বলে বর্ণনা করেছেন ৷ তার মতে,
(1) প্রাচীন যুগ বলতে সঠিক কি বোঝায় সে বিষয়ে ব্যাখ্যা এবং পরবর্তীকালীন পরিবর্তন সমূহের তুলনামূলক আলোচনা আমাদের সাহায্য করতে পারে ৷
(2) ইতিহাসের একটি বিশেষ পর্যায়ে হিসেবে আদি মধ্যযুগীয় কাল পর্বে কি ধরনের পরিবর্তন সঞ্চিত হয়েছে সে বিষয়ে সুস্পষ্ট ধারণা থাকা আবশ্যক
অধ্যাপক চট্টোপাধ্যায় যুগের কয়েকটি বৈশিষ্ট্য নিয়ে আলোচনা করেছেন।
(ক) রাজন্য শাসিত আঞ্চলিক শাসন ব্যবস্থার অবস্থান
(খ) সরল মুদ্রা অর্থনৈতিক প্রচলন
(গ) কঠোর বর্ণ ভিত্তিক সমাজ, ইত্যাদি।
আর এই সকল প্রাগ ও মধ্যযুগীয় বা আদি ঐতিহাসিক বৈশিষ্ট্য রূপান্তরের ভিত্তিকে আদি মধ্যযুগের বিষয়টি অনুধাবন করা হয় ৷
আলোচনা শেষে বলা যায়, অধ্যাপক নিহারঞ্জন রায় মধ্যযুগের তত্ত্বের বহুমাত্রিক ব্যাখ্যা উপস্থাপন করেছেন ৷ যেমন আঞ্চলিক রাজতন্ত্রের উত্থান, স্বাভাবিক অর্থনীতির বিকাশ ধর্মের ক্ষেত্রে অসম্প্রদায়তা ও উপসম্প্রদায়তার উদ্ভব ইত্যাদি ৷ এছাড়া ডঃ শর্মা আদি মধ্যযুগের বৈশিষ্ট্য হিসেবে নগরের অবক্ষয় ও ব্যবসা-বাণিজ্যের পতন দিকে বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেন ৷