মোঘল সাম্রাজ্যের পতনের কারণগুলি আলোচনা করো অথবা,মুঘল সাম্রাজ্যের পতনের কারণ আলোচনা কর বা মুঘল সাম্রাজ্যের পতনে অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক কারণগুলি আলোচনা কর বা মুঘল সাম্রাজ্যের পতন বিষয়ক ঐতিহাসিক বিতর্ক আলোচনা কর।

মোঘল সাম্রাজ্যের পতনের কারণগুলি আলোচনা করো অথবা,মুঘল সাম্রাজ্যের পতনের কারণ আলোচনা কর বা মুঘল সাম্রাজ্যের পতনে অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক কারণগুলি আলোচনা কর

 মোঘল সাম্রাজ্যের পতনের কারণগুলি আলোচনা করো অথবা,মুঘল সাম্রাজ্যের পতনের কারণ আলোচনা কর বা মুঘল সাম্রাজ্যের পতনে অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক কারণগুলি আলোচনা কর বা মুঘল সাম্রাজ্যের পতন বিষয়ক ঐতিহাসিক বিতর্ক আলোচনা কর।



মোঘল সাম্রাজ্যের পতনের কারণগুলি আলোচনা করো


মোঘল সাম্রাজ্যের পতনের কারণগুলি হল :-

মুঘল সাম্রাজ্য শুধুমাত্র ভারতবর্ষের ইতিহাসে নয় সমগ্র বিশ্ব ইতিহাসের সাম্রাজ্যের আয়তন, সহনশীলতা, জনকল্যাণকর প্রভৃতি গৌরব ও গরিমার দিক থেকে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করেছিল ৷ তাই মুঘল সাম্রাজ্যের পতন হঠাৎ করে ঘটেনি দীর্ঘদিন ধরে এই সাম্রাজ্যের পতনের বীজ রোপন হয়েছিল ৷ কিন্তু ওরঙ্গজেবের মৃত্যুর পর সাম্রাজ্যের গৌরব অস্তিত্ব বিপন্নতা দৃষ্টিগোচর হয় ৷ কিন্তু আধুনিক অর্থনৈতিক ইতিহাসের দৃষ্টিভঙ্গিতে বিচার করে বলা যায় এটা কি মুঘল সাম্রাজ্যের পতন না বলে অবক্ষয় বলা যুক্তিযুক্ত ৷


মুঘল যুগে যে ধরনের রাষ্ট্র ব্যবস্থা প্রচলিত ছিল তার সাফল্য নির্ভর করত সম্রাটের ব্যক্তিগত প্রতিভা ও শাসন দক্ষতার ৷ উপর কিন্তু কম প্রতিভা সম্পন্ন বা অদক্ষ শাসকের আবির্ভাব ঘটলেই তাতে সাম্রাজ্যের ভয়ংকর অস্তিত্বের সংকর দেখা দেওয়া সম্ভাবনা থাকে ৷ আকবর, জাহাঙ্গীর, শাহজাহান ও ঔরঙ্গজেবের মত প্রতিভা সম্পন্ন শাসকের শাসনকালে সাম্রাজ্যের অভ্যন্তরীণ সংকট থাকা সত্ত্বেও সাম্রাজ্যে শান্তি-শৃঙ্খলা অব্যাহত ছিল ৷ কিন্তু ওরঙ্গজেবের পরবর্তী উত্তরাধিকার প্রায় সকলেই ছিলেন অযোগ্য অদক্ষ ও আরামপ্রিয় ৷ অভিজাতদের হাতে ক্ষমতা দিয়ে নিশ্চিন্তের জীবন অতিবাহিত করত ফলে, অভ্যন্তরীণ সংকট মোকাবেলা করতে তারা ব্যর্থ হয়েছিল ৷


বাবর ও তার বংশধররা এবং তাদের অধিকাংশ কর্মচারী ছিলেন  তুর্কি ৷ তুর্কিরা ছিলেন নিত্যান্ত সামরিক জাতি, যুদ্ধই ছিল তাদের একমাত্র পেশা ৷ যতদিন যুদ্ধের প্রয়োজন ছিল ততদিন তারা ছিল শক্তিশালী কিন্তু, যে মুহূর্তে এটার প্রয়োজন ফুরিয়ে গেল সেই মুহূর্ত থেকে এদের পতন আরম্ভ হলো ৷ জাহাঙ্গীরের সময় থেকে সিংহাসন নিয়ে তারা পুত্রদের মধ্যে অন্তদন্ত সাম্রাজ্যের মর্যাদা বিশেষভাবে ক্ষুন্ন করেছিল ৷ এরূপ দ্বন্দ্বের ফলে ধর্মানেশী আমীরদের প্রতিভা প্রতি বৃদ্ধি পেতে থাকে এবং সাম্রাজ্যের ভিত্তি স্থিতির হয়ে পড়েছিল ৷ এটা ছাড়া উত্তরাধিকার সংক্রান্ত যুদ্ধের ফলে প্রচুর সম্পত্তি ও প্রণনাশ হয়েছিল ৷


মুঘল সাম্রাজ্যের বিশাল আয়তন এই সাম্রাজ্যের পতনের গুরুত্বপূর্ণ কারণ বলে বিবেচিত । কারণ ওরঙ্গজেবের শাসনকালে মুঘল সাম্রাজ্য বিস্তারের চরম সীমায় আরোহন করে ৷ যাতায়াত ও যোগাযোগ ব্যবস্থার অভাব বর্তমান যুগের মত যান্ত্রিক কোন পদ্ধতি সাহায্যের সংবাদ আদান প্রদান করার কোন ব্যবস্থা ছিল না , কোন ব্যবস্থা না থাকাই সকল সংবাদ সঠিক সময়ে রাজধানীতে পৌঁছাতো না, যার ফলে যথার্থ সময়ে যথার্থ ব্যবস্থা গ্রহণ করার সম্ভব ছিল না ৷  ওরঙ্গজেবের যখন দাক্ষিণাত দক্ষিণ ভারতে ছিলেন তখন উত্তর ভারতের বিশৃঙ্খলা দেখা দেয় এই বিশৃঙ্খলা মুঘল সাম্রাজ্যের পতনের কম দায়ী ছিল না।


ঐতিহাসিক আরবিন এর মতে মুঘলদের সামরিক বাহিনীর ত্রুটি ও সাম্রাজ্যের পতনের আরো একটি কারণ ছিল

প্রথমত, বিভিন্ন স্থান থেকে এবং বিভিন্ন জাতি থেকে সেনা সংগ্রহিত হওয়াই মুঘল বাহিনী রূপে গড়ে উঠতে পারেনি ৷

দ্বিতীয়ত, বিভিন্ন জাতির সমন্বয়ে সেনাবাহিনী গঠিত হবার ফলে সর্বত্র একপ্রকার রণকৌশল অনুসরণ করার পক্ষে অসুবিধা সৃষ্টি হয় ।

তৃতীয়ত, মনসবদার ও সেনার নায়কদের আদেশাধীন থাকায় সেনাদের সম্রাটের প্রতি আনুগত্যবোধ ছিল না বললেই চলে ৷


চতুর্থত, সেনা শিবিরে বিলাসবহুল ও জাঁকজমক জীবনযাত্রা সেনাবাহিনীর কার্যক্ষমতা বিনষ্ট করেছিল ৷


ঐতিহাসিক ভিনসেন্ট স্মিথ বলেছেন যে,"সুষ্ঠু শক্তির অভাব সাম্রাজ্যের পতনের অন্যতম কারণ ৷ বিদেশী বণিকদের ঔধত্য আচরণ এবং পর্তুগীর জলদস্যুদের অত্যাচার লক্ষ্য করে ও মুঘল সম্রাটরা শক্তিশালী নৌ বাহিনী গঠনের প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করেনি ৷মুঘল সম্রাটদের মধ্যে একমাত্র আকবরই গড়ে তুলতে যত্নবান হয়েছিলেন ৷ ঔরঙ্গজেব নৌ শক্তির ব্যাপারে উদাসীন থাকেন ৷ ফলে মুঘলরা নো বলে বলিয়ান ইউরোপীয়দের পথ ছেড়ে দিতে বাধ্য হন ৷


ঔরঙ্গজেবের পরবর্তী সম্রাটদের নৈতিক অবনতির সঙ্গে সঙ্গে অভিজাতদেরও নৈতিক অবনতি ঘটে ৷ মুঘল শাসনের প্রথম দিকে অভিযাতরা  সাম্রাজ্যের স্তম্ভ স্বরূপ ছিলেন আব্দুর রহমান, মহব্বত খাঁ, সাহাদ উল্লাহ প্রমুখ ও অভিজাতরা সাম্রাজ্যের প্রধান ছিলেন ৷ কিন্তু অরঙ্গজেবের পরবর্তী এই অভিজাত শ্রেণীর অধঃপতন ঘটে ৷ ঐতিহাসিক পার্সিভ্যাল স্পিয়ার মনে করেন," কোন একটা যুগ সম্পূর্ণভাবে বীরশুন্ন হতে পারে না তেমনি অষ্টদশ শতকেও প্রতিভাবন ব্যক্তির একান্ত অভাব হয়নি বরং এই যুগে ক্ষমতালিপসা সকল ব্যক্তিদেরই কাহিনী।"


সামগ্রিকভাবে আলোচনা থেকে একথা স্পষ্ট মুঘল সাম্রাজ্যের পতনের মূল কারণ নিহিত হয়েছে তা দুর্বল ছুটি পূর্ণ ও পরিবর্তন বিমুখী অর্থনীতির মধ্যে ৷ জায়গিরদারি সংকট মুঘল অভিজাত শ্রেণীর দায়িত্বহীন দলাদলি ,স্বাধীন রাজ্য গঠনের প্রচেষ্টা এবং দিকে দিকে আঞ্চলিক শক্তির মাথাচড়া দিয়ে ওঠা এই রাজনৈতিক অনৈক্য ও অনিশ্চিত ভবিষ্যতের পেক্ষাপটে বণিকদের মানদন্ড রাজদণ্ডে পরিণত হয় ৷ অভ্যন্তরীণ কারণে মুঘল সাম্রাজ্যে যখন বিধ্বস্ত সেই সময় নাদির শাহ ও আহমদ শাহ অবাদলীর ভারত আক্রমণ মুঘল সাম্রাজ্যের পতন কে ত্বরান্বিত করেছিল ৷ মুঘল শাসনের স্থলাভিষিক্ত হয় ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ। 

About the author

Irisha Tania
"আমি সেই মেয়ে, যে শব্দে বাঁচে। কলম আমার অস্ত্র, আর কাগজ আমার স্বপ্নের আকাশ। প্রতিটি অনুভব, প্রতিটি চিন্তা আমি সাজিয়ে রাখি অক্ষরের গাঁথুনিতে। কখনো গল্পে, কখনো কবিতায়, আবার কখনো নিঃশব্দের ভেতরে। আমি লিখি, কারণ লেখার মাঝে আমি নিজেকে খুঁজে পাই। …

Post a Comment

🌟 Attention, Valued Community Members! 🌟