কনৌজের উত্থান বিষয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করো। বা,মগধের উত্থানের পিছনে ভৌগোলিক ও অর্থনৈতিক কারণগুলি সংক্ষিপ্ত আলোচনা করে।
প্রাচীন ভারতের অভ্যন্তরীণ, আঞ্চলিক ও রাজনৈতিক ইতিহাসের ক্ষেত্রে বর্তমান উত্তরপ্রদেশের ফারুদাবাদ জেলায় অবস্থিত 'মহোদয়' বা 'কনৌজ' একদা সাম্রাজ্যবাদের আসন ও প্রতীক-এ পরিণত হয়েছিল। গুপ্ত সাম্রাজ্যের পতনের পর ভারতবর্ষের রাজনৈতিক পালাবদল ঘটে এবং বিভিন্ন আঞ্চলিক শক্তির উত্থান ঘটে। এই আঞ্চলিক শক্তিগুলির মধ্যে সর্বদা ভূখণ্ড দখলের লড়াই বিদ্যমান ছিল, যার মধ্যে ব্যতিক্রম ছিল না কনৌজকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা পাল, প্রতিহার, রাষ্ট্রকূটদের মধ্যে ত্রিশক্তি সংগ্রাম। সর্জী যাকে কেন্দ্র করে অষ্টম ও নবম শতকে কনৌজের রাজনৈতিক গুরুত্ব বৃদ্ধি পায়। রুমে জবা কনৌজের উত্থানের সূত্রপাত ঘটে। এখানে প্রশ্বালোচিত কনৌজের উত্থান আমাদের এই আলোচ্য বিষয়।
কনৌজের রাজনৈতিক গুরুত্ব বৃদ্ধি পেতে শুরু করে হর্ষবর্ধন কর্তৃক সেখানে রাজধানী স্বাপনের পর থেকে। এ প্রসঙ্গে বলা যায়, হর্ষবর্ধনের ভগিনী রাজ্যশ্রীর সঙ্গে মৌখরীরাজ জলস্থ গ্রহবর্মার বিবাহ হয়। ফলত, পূষ্যভূতি ও মৌখরী বংশের আত্মীয়তা বৃদ্ধি পায়। এর পরবর্তী টিনা পর্যায়ে দেখা যায় যে, মালবরাজ দেবগুপ্ত মৌখরীরাজ গ্রহবর্মাকে হত্যা করেন এবং সান রাজ্যশ্রীকে কারারুদ্ধ করেন। ইতিমধ্যে অপুত্রক অবস্থায় গ্রহবর্মার মৃত্যুর ফলে কনৌজের রিদও সিংহাসন শূন্য হয়ে গিয়েছিল। হিউয়েন-সাঙ-এর বিবরণী অনুসারে জানা যায় যে, ভাষনে কনৌজের অভ্যন্তরীণ বিশৃঙ্খলা এড়াতে রাজঅমাত্য ভান্ডির (পো-নি) নেতৃত্বে কনৌজের ১৫০টি অভিজাতবর্গ হর্ষবর্ধনকে কনৌজের শাসন দারিত্ব গ্রহণের আবেদন জানান। তাই হর্ষবর্ধন এর যা কিছুকাল নিজ ভগিনী রাজ্যশ্রীর পক্ষে শাসন পরিচালনা করেন এবং অল্পকালের মধ্যেই আখানেশ্বর ও কনৌজ রাজ্যকে সমন্বিত করে হর্ষবর্ধন শাসনভার নেন। এই ঘটনাকে স্মরণীয় প্রাকমা করতে হর্ষবর্ধন ৬০৬ খ্রিস্টাব্দে একটি সম্বৎ চালু করেন, যা হর্ষসম্বৎ নামে খ্যাত।
কনৌজের সিংহাসনে হর্ষবর্ধনের আরোহণ কতটা সহজ হয়েছিল তা সঠিকভাবে বলা ভালা যায় না। নালন্দা সিল, নেপালের কিছু লেখ এবং আর্যমঞ্জুশ্রী-মূলকল্প গ্রন্থের বক্তব্য বিষয়ে সশ্যের সৃষ্টি হয়েছে। তবে সংশয় যতই থাকুক না কেন আধুনিক ঐতিহাসিক বলে উঠেে ফ্যাং-চি নামক চিনা প্রশ্নের ভিত্তিতে মানে করেন হর্ষবর্ধন কনৌজের সিংহাসনে অন দাবিদারদের ঠেকিয়ে রাখার জন্য রাজ্যশ্রীর অভিভাবক হিসাবে কনৌজের শাসনকার প্রথা গঠনে তত্ত্বাবধান করেছিলেন এবং নিজেকে কনৌজের সম্রাট বলে ঘোষণা করেন। ভিড়ে ওঠা শিলাদিত্য উপাধি গ্রহণ করেন, এই সময় তিনি থানেশ্বর থেকে কনৌজে রাজধানী সরিয়ে বানেশ্বরের ভিত্তিতে অনেন। যা কনৌজের মর্যাদাকে পরোক্ষভাবে বৃদ্ধি করে।
পরবর্তীকালে মৌখরী বংশীয় জনৈক যশোবর্মনের আমলে গুরুত্ব ও মর্যাদা বিশেষভাবে বৃদ্ধি পায়, তিনি সম্ভবত আরবদের আক্রমণের হাত থেকে কনৌজকে রক্ষা করেন।
কনৌজের উত্থানের ক্ষেত্রে আর্থ, সামরিক ও রাজনৈতিক পর্যালোচনার প্রয়োজন। মৌর্য বা গুপ্তদের পতনের পর সময় খায়খে রাষ্ট্রীয় ঐক্য স্থাপনের পরিবর্তে শুধুমাত্র উত্তর ভারতে বা দক্ষিণ ভারতে একচ্ছত্র আধিপত্য স্থাপনকেই তৎকালীন নরপতিরা লক্ষ হিসাবে। গ্রহণ করেন। হর্ববাদের পরবর্তীকালে উত্তর ভারতের কর্তৃত্বের প্রশ্নে কনৌজের ওপর সাহিত্যিক অধিকার স্থান করা ছিল মর্যাদার প্রতীক। "পশ্চিম এশিয়ার যোদ্ধা জাতিদের কাছে যেমন-ব্যাবিলন, চিড়ানিক জাতিদের কাছে যেমন রোম ছিল লক্ষ্যবস্তু, তেমনি অষ্টম ও. নবম শতকের ভারতীয় রাজবংশগুলির কাছে কনৌজ বা কান্ধকুজ অধিকার ছিল চূড়ান্ত মর্যদার লক্ষযস্তু ৷
গাঙ্গেয় উর্বর মুক্তিকাযুক্ত কনৌজ আর্থিক দিক থেকে ছিল সমৃদ্ধ। তাই এই সমৃদ অঞ্চলের ওপর আধিপত্য বিস্তারে ভারতের আঞ্চলিক শক্তিগুলিকে কনৌজ দখলে মাত্রারিঃ প্ররোচিত করেছিল। অর্থনৈতিক দিক ছাড়াও সামরিক দিক থেকে ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণে কনৌজের বিশেষ গুরুত্ব ছিল। সমতল না হওয়ায় উঁচু জায়গায় অবস্থিত হবার কারণে কনৌজের সামরিক পত্বি মাখষ্ট বেশি ছিল। গঙ্গা, যমুনা, দোয়ার অঞ্চলের ঠিক বন্ধু বিশ মধ্যভাগে অবস্থিত হওয়ার জন্য অলপন ও স্থলপথের যোগাযোগের ক্ষেত্রে কনৌজের শূরহ ছিল অত্যন্ত বেশি।
এইসব কারণে অষ্টম শতকে কনৌজ দখলের প্রশ্নে এক দীর্ঘস্থায়ী ত্রিশক্তি সংঘর্ষ শুরু হয়েছিল হয়েছিল । এই ত্রিশক্তি ছিল উত্তর ভারতের পালবংশ ও গৃহরি প্রতিহার বংশ এবং দক্ষিণ আারতের রাষ্ট্রকূট বংশ । এই ত্রিশক্তি সংগ্রাম প্রায় ২০০ বছর স্থায়ী হয়েছিল ।
পরিশেরে বলা যায় যে, উপরিউত্ব আলোচনার ভিত্তিতে, প্রারম্ভিকপর্বে কনৌজ নি মৌখরী রাজয়ের আপ কিন্তু নানা উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে ও নানা রাজনৈতিক খ্যাত। অভিঘাতের যারা হাম এই অবলটি হয়ে ওঠে অষ্টম ও নবম শতকে আঞ্চলিক রাজনীতির প্রাণকেন্দ্র। ফলত, অনৌজের শুধুমাত্র সমকালীন সময়ের মধ্যেই নয় পরবর্তীকালেও একটি সরন্ত্রে মন্টানায় প্রতিষ্ঠিত হয় এবং ভারতীয় ইতিহাসের ধারাকে সমৃদ্ধ করে।
তোমাকে অনেক ধন্যবাদ কনৌজের উত্থান বিষয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা করো। এই নোটটি পড়ার জন্য