ঔপনিবেশিক ভারতে অব শিল্পায়ন সম্পর্কিত বির্তক টি ব্যাখা করো। অথবা অবশিল্পায়ন কি অলীক কল্পনা ছিল
অবশিল্পায়ন বলতে কি বুঝায় তা নিয়ে ঐতিহাসিক মহলে বহু বিতর্ক আছে ৷ অবশিল্পায়নের সংজ্ঞা প্রসঙ্গে অধ্যাপক সব্যসাচী ভট্টাচার্য বলেন যে, "অবশিল্পায়ন বলতে বোঝায় শিল্পায়নের বিপরীত শিল্পের অবগতি অর্থাৎ একটি অঞ্চলে শিল্পের অবক্ষয় বা ধ্বংস, উৎপাদন হ্রাস, ব্যাপক কর্মী সংকোচন শিল্প,উৎপাদনের মুক্ত শ্রমিকদের ক্রমশ আর্থিক দুর্গতি, আমদানি-রপ্তানির ক্ষেত্রে বিপর্যয় সর্বোপরি শিল্পের উপযোগী কৃষি অর্থাৎ কাঁচামাল সরবরাহকারী কৃষি ব্যবস্থার অবনমন এই সব কিছুই হলো অবশিল্পায়নের চিত্র ৷
আপনি চাইলে এগুলো পড়তে পারেন
ব্রিটিশ ভারতে অবশিল্পায়নের পশ্চাতে উপনিবেশিক অর্থনীতিকে দায়ী করেছেন যে সকল জাতীয়তাবাদী ঐতিহাসিক তাদের মধ্যে অন্যতম হলে রমেশচন্দ্র দত্ত, মহাদেব গোবিন্দ রানাডে, মদনমোহন মালব্য প্রমূখরা ৷ এনারা দেখিয়েছেন,"ভারতের ঐতিহ্যবাহী কুটির শিল্প মুঘল যুগের অন্তিম পর্যন্ত পর্ব পর্যন্ত সমৃদ্ধ ছিল, কিন্তু এই সমৃদ্ধশালী কুঠির শিল্পী অবক্ষয়ের পথে হাঁটতে শুরু করে ভারতে ব্রিটিশ রাজ প্রতিষ্ঠার হাত ধরে ।" কারণ উনিশ শতকের সূচনা লক্ষৌ থেকে ভারতে ইংল্যান্ড থেকে শিল্প দ্রব্য আমদানির বৃদ্ধি পায় ৷ ফলে ভারতের কুটির শিল্পজাত দ্রব্য এক বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে ৷ সেই সঙ্গে ব্রিটিশদের বৈষম্য মূলক শিল্প ব্যবস্থা,ইংল্যান্ডের শিল্প বিপ্লব ইত্যাদির কারণে ভারতীয় শিল্প কিছু হতে থাকে ৷ এর ফলে সম্পদের উৎস সংকুচিত হয় অর্থাৎ ভারতবর্ষের জীবিকার ক্ষেত্রে গুরুতর সংকট সৃষ্টি হয় ৷
ঐতিহাসিক রানাডে মনে করেন এই সময় ভারতবাসী নিজেরাই নিজের বস্ত্র তৈরি করত কিন্তু উপনিবেশ শাসকরা ভারতবর্ষে বসতে যোগান দেওয়ার আমাদের পরনির্ভর করেছে ৷ মদনমোহন মালব্য বলেছেন ভারত থেকে পূর্বে যে সুতি বস্ত্র ইউরোপে রপ্তানি হত উপনিবেশিক শাসনে তা বন্ধ হয়ে যায় ৷ ফলে বস্ত্র শিল্প ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যায় এবং বহু মানুষ বেকার হয়ে পড়েন স্বাভাবিকভাবেই বিকাশ হিসেবে মানুষ কিসের দিকে ঝুঁকে ৷ আর অতিরিক্ত কৃষিক কেন্দ্রীকতা বাড়তে থাকে ৷
উনিশ শতকের ভারতীয় মধ্যবিত্ত শ্রেণি ক্রমশ বিদেশি বস্ত্র এবং বিলাস সামগ্রীর উপর আসক্ত হয়ে পড়ে ৷ তার ফলে এদেশীয় শিল্প উৎপাদন বিশেষভাবে মার খায় ৷ নরেন্দ্র কৃষ্ণ সিনহা তার "Economics history of bengal" গ্রন্থে দেখিয়েছেন যে,"ব্রিটিশরা মুখে মুক্ত বাণিজ্য কথা বললেও তারা পোঁদেছে প্রায় গায়ের জোরে একচেটিয়া বাণিজ্য প্রচেষ্টা করে বাংলার তাঁত শিল্পকে ধ্বংস করে দেয় ৷"
বিভিন্ন ঐতিহাসিক গবেষকদের পরিসংখ্যানে অবশিল্পায়নের চিত্রটি ফুটে ওঠে ৷ গবেষক কে কৃষ্ণমূর্তির ভাষায় খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ শিল্প,রেশম, পশম ইত্যাদি শিল্পী ও শ্রমিক সংখ্যা হ্রাস পায় ৷ গবেষকরা দেখিয়েছেন কিভাবে ভারতের শ্রমিকের সংখ্যা দ্রুত হাঁস পাচ্ছিল ৷ গবেষক অর্থনীতিবিদ অমীয় বাগচী দেখেছেন,"পূর্বে যেখানে মোট জনসংখ্যা ২১% বস্ত্রশিল্পে যুক্ত ছিল পরবর্তীকালে তা কমিয়ে দাঁড়ায় প্রায় অর্ধেক ৷" এই লক্ষন বাংলা ও পাঞ্জাবেরও বস্ত্র শিল্পের নিযুক্ত শ্রমিকদের ক্ষেত্রে বিশেষভাবে প্রযোগ্য ৷"
অবশিল্পায়নের অন্যতম কারণ হিসেবে অধিকাংশ ঐতিহাসিক ইংল্যান্ড থেকে বিপুল পরিমাণ দ্রব্য সামগ্রী ভারতের আগমনকে দায়ী করেছেন ৷ ঐতিহাসিক শেখর বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন,"ব্রিটিশ ব্যবসায়ীরা ভারতবর্ষের ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের এক গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ হিসেবে বিবেচনা করত তার "পলাশী থেকে পার্টিশন" গ্রন্থে অপর দুটি বিষয় তুলে ধরেছেন ৷ একটি হলো ব্যাংক এজেন্সি হাউস আর অন্যটি হল ম্যানেজিং এজেন্সি হাউস ৷ ব্যাংক হাউসের মাধ্যমে ইউরোপীয়রা ঋণ পেত ভারতীয়দের এই সুযোগ ছিল না ৷ ম্যানেজিং এজেন্সি গুলি ব্রিটিশ সরকারকে প্ররোচিত করত ব্রিটিশ শাসকদের আইন প্রণয়ন করতে ৷
এ তৎসত্ত্বেও সকল ঐতিহাসিক একমত হতে পারেনি, জাতীয়তাবাদী ও মার্কসবাদী ঐতিহাসিক সকলেই অবশিল্পায়নকে ঐতিহাসিক সভ্য বলে মেনে নিয়েছিলেন ৷ স্বদেশী ঐতিহাসিক অর্থনীতিবিদ ভিন্ন মত প্রকাশ করেছেন ৷ মরিস ডি মরিস এর মতে, ভারতবর্ষে আদেও অবশিল্পায়ন ঘটেনি তিনি একে "অলিক কল্পনা" বলেছে, তবে এ তথ্যকে কোনভাবে অস্বীকার করা যায়নি ৷