আদি মধ্যযুগে ভূমি ব্যবস্থা সম্পর্কে লেখ

আদি মধ্যযুগে ভূমি ব্যবস্থা সম্পর্কে লেখ

 আদি মধ্যযুগে ভূমি ব্যবস্থা সম্পর্কে লেখ

আদি মধ্যযুগে ভূমি ব্যবস্থা সম্পর্কে লেখ

আদি-মধ্যযুগে ভারতের ভূমিব্যবস্থা সম্পর্কে মন্তব্য করো।


আদি-মধ্যযুগে ভারতে ভূমিব্যবস্থার অন্যতম দিক ছিল অগ্রহারব্যবস্থা। প্রায় সমগ্র গুপ্তের আমল জুড়ে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে এই অগ্রহার ব্যবস্থাটি সমকালীন আর্থ- সামাজিক রূপকে প্রভাবিত করেছিল এবং ভারতের সমাজ ও অর্থনীতির ওপর সুদুরপ্রসারী প্রভাব ফেলেছিল।


ভূমি হস্তান্তর বৃত্তান্ত জানার প্রথম উপাদান হল অসংখ্য তাম্রশাসন। গুপ্তরাজাদের তাম্রশাসনগুলি জমি ক্রয়-বিক্রয়ের দলিল, সমকালীন মুদ্রা ও অন্যান্য পুরাতাত্ত্বিক অবশেষ থেকেও কিছু সূত্র পাওয়া যায়। বাণভট্টের 'হর্ষচরিত', দন্ডীর 'দশকুমার চরিত', 'নারদ স্মৃতি' ও 'বৃহস্পতি স্মৃতি' প্রভৃতি থেকেও তথ্য পাওয়া যায়।


খ্রিস্টীয় চতুর্থ শতকের সূচনা থেকে ব্রাহ্মণ বা ধর্মস্থানের উদ্দেশ্যে ভূমিদানপ্রথার প্রচলন ঘটে। ব্রাহ্মণ পুরোহিত বা ধর্মস্থানের উদ্দেশ্যে করমুক্ত গ্রাম বা ভূখন্ডদানের এই রীতি অগ্রহার' নামে পরিচিত হয় । প্রাচীন বাংলার অধিকাংশ জমি যা হস্তান্তরিত হয়েছিল তার বেশিরভাগ ছিল পতিত জমি বা অনাবাদী। মধ্য ভারত, পশ্চিম ভারত এবং দাক্ষিণাত্যে যেসব জমি অগ্রহার হিসেবে দেওয়া হয়েছিল তাতে অবশ্য চাষবাস হত ৷


সাতবাহন রাজাদের আমলে ভূমিদানের প্রথম ঘটনা দেখা যায়। তবে ৩০০ খ্রিস্টাব্দের পরই অগ্রহার দানব্যবস্থা ব্যাপকতা পায়। ধনীরা জমি কিনে ব্রাহ্মণ ও মন্দিরকে দান করতো ব্যক্তিগত পুণ্য সঞ্চয়ের বাসনায়। খ্রিস্টীয় চতুর্থ শতকের সূচনা থেকে এই ভূমিদান ব্যবস্থার একটি মৌলিক পরিবর্তন সূচিত হয়। এখন থেকে রাজারা ভূখন্ড বা গ্রাম দান করতেন। প্রমোদরপুর তাম্রপট থেকে জানা যায় যে, এই সকল দান ছিল 'নিষ্কর' (অগ্রহার), স্থায়ী (অক্ষরনীবি) এবং পতিত জমি (ভূমিছিদ্র ন্যায়)। দানকার্যের সময় চতুঃসীমা নির্ধারণ করা হত। ভূমিদানের সময় রাজার উচ্চপদস্থ কর্মচারী, গ্রামের সম্ভ্রান্ত ব্যক্তি ও কৃষক উপস্থিত থাকত।


প্রাচীন রীতি অনুযায়ী সকল পতিত জমির মালিক ছিল রাষ্ট্র বা রাজা। তাই রাজার কাছ থেকে জমি ক্রয় করে দানকার্য সম্পন্ন করতে হত। বাংলার মধ্যে দু'বার জমির হস্তান্তরের দৃষ্টান্ত সীমাবন্ধ ছিল। ভূখণ্ড ছাড়াও ব্রাহ্মণদের গ্রাম দেওয়ার রীতি ছিল। ব্রাহ্মণ ও পুরোহিত সম্প্রদায়ের মানুষ অগ্রহার ব্যবস্থার ফলে প্রচুর ভূ-সম্পত্তির অধিকারী হন। অধ্যাপক রামশরণ শর্মা জানিয়েছেন যে, দানগ্রহীতা শুধু রাজস্বের অধিকারী হতেন না, তিনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষা এবং বিচারকার্য পরিচালনার দায়িত্ব পেতেন। কেবল ব্রাহ্মণ নয় বৌদ্ধবিহারগুলিও অগ্রহার লাভে সক্ষম হয়েছিল। হিউয়েন সাঙ ও ফা-হিয়েনের বিবরণ থেকে জানা যায় যে, বৌদ্ধবিহারগুলির অধীনে নিষ্কর ভূমি ছিল। অগ্রহার মালিক প্রশাসনিক ও বিচারসংক্রান্ত অধিকার পেতেন।


অগ্রহার ব্যবস্থার ফলে ভূমিব্যবস্থায় অবশ্যই পরিবর্তন ঘটেছিল। এর ফলে ত্রিস্তর ভূমি ব্যবস্থার আবির্ভাব ঘটে। রাজা ও কৃষকের মধ্যবর্তী স্থলে মধ্যস্বত্বভোগীর উদ্ভব ঘটে। ভূ-সম্পদ থেকে অর্থনৈতিক সুবিধা পাওয়ার উদ্দেশ্যে স্তরীকরণের গতি ত্বরান্বিত হয়। অগ্রহার ব্যবস্থায় দানগ্রহীতা ব্রাহ্মণ, মন্দির, বৌদ্ধবিহার সব ভূমধ্যকারী হয়ে বসেছিল। রামশরণ শর্মা মনে করেন যে, অগ্রহার ব্যবস্থার সম্প্রসারণের ফলে রাজকোষের আয় কমেছিল, রাষ্ট্রীয় অর্থনীতি ও বাজেটের ওপর চাপ পড়েছিল। অন্যদিকে আধুনিক গবেষকরা দেখিয়েছেন যে, অগ্রহার ব্যবস্থার সম্প্রসারণের ফলে কৃষির সম্প্রসারণ ঘটেছিল কারণ অধিকাংশ অগ্রহার জমি ছিল পতিত ও অনাবাদী। অনেকক্ষেত্রে অনাবাদী জমি বিক্রি করে রাজা তাঁর আয় বাড়িয়ে নিতেন। অনাবাদী জমিতে চাষবাদ বাড়ানো হয়।


অগ্রহার ব্যবস্থার পরিবর্তনের ফলে এক শক্তিশালী সামন্তশ্রেণির উদ্ভব ঘটে। ড. রামশরণ শর্মার মতে, অগ্রহার ব্যবস্থার ফলে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ক্ষমতা ও সুবিধা অর্জন করার সুযোগ পেয়েছিল ব্রাহ্মণ শ্রোণির মানুষ। অগ্রহার মালিক প্রশাসনিক ও বিচারসংক্রান্ত অধিকার লাভ করত। স্থানীয়ভাবে ব্রাহ্মণরা শক্তিশালী হয়ে উঠেছিল এবং সম্ভবত তারা রাজাকে চ্যালেঞ্জ করত। পতিত জমি ছিল রাজার দায়স্বরূপ। তাই একদিকে

তোমাকে অনেক ধন্যবাদ আদি মধ্যযুগে ভূমি ব্যবস্থা সম্পর্কে লেখ এই নোটটি পড়ার জন্য

About the author

Irisha Tania
"আমি সেই মেয়ে, যে শব্দে বাঁচে। কলম আমার অস্ত্র, আর কাগজ আমার স্বপ্নের আকাশ। প্রতিটি অনুভব, প্রতিটি চিন্তা আমি সাজিয়ে রাখি অক্ষরের গাঁথুনিতে। কখনো গল্পে, কখনো কবিতায়, আবার কখনো নিঃশব্দের ভেতরে। আমি লিখি, কারণ লেখার মাঝে আমি নিজেকে খুঁজে পাই। …

Post a Comment

🌟 Attention, Valued Community Members! 🌟