আদি মধ্যযুগের অভ্যন্তরীণ সময়ে ভারতীয় সামন্ততন্ত্রের বৈশিষ্ট্য আলোচনা কর

আদি মধ্যযুগের অভ্যন্তরীণ সময়ে ভারতীয় সামন্ততন্ত্রের বৈশিষ্ট্য আলোচনা কর

  আদি মধ্যযুগের অভ্যন্তরীণ সময়ে ভারতীয় সামন্ততন্ত্রের বৈশিষ্ট্য আলোচনা কর 

অথবা ,৬০০ থেকে ১২০০ খ্রিষ্টাব্দ অন্তর্বর্তী সময়ে ভারতীয় সামন্ততন্ত্রের উদ্ভব ও বৈশিষ্ট্য আলোচনা কর

আদি মধ্যযুগের আদি মধ্যযুগের অভ্যন্তরীণ সময়ে ভারতীয় সামন্ততন্ত্রের বৈশিষ্ট্য আলোচনা কর  অথবা  ৬০০ থেকে ১২০০ খ্রিষ্টাব্দ অন্তর্বর্তী সময়ে ভারতীয় সামন্ততন্ত্রের উদ্ভব ও বৈশিষ্ট্য আলোচনা কর

সভ্যতার বিবর্তনের একটি বিশেষ পর্যায়ে পৃথিবীর বিভিন্ন রাষ্ট্রে সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থা বিকশিত হয় ৷ জমির উপর অধিকার কে কেন্দ্র করে এই ব্যবস্থা গড়ে ওঠে ৷ জমির অধিকার প্রাপ্ত ব্যক্তিবর্গ ইতিহাসের সামন্ত প্রভু এবং ওই জমিতে বসবাসকারী অন্যান্য মানুষজন ইতিহাসের সামন্ত প্রজা নামে পরিচিত ৷ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ চেয়ে সামন্ততন্ত্রের উদ্ভব বিকাশ সমৃদ্ধি এবং অবক্ষয় একই সময় কালে ঘটেনি ৷ ভারতের সামন্ত ব্যবস্থা উদ্ভব হয় গুপ্ত শাসনকালে অগ্রাহার ব্যবস্থা বা জমিদার ব্যবস্থাকে কেন্দ্র করে ৷




ডক্টর রামশরণ শর্মা, ভারতে সামন্ততন্ত্রের উদ্ভব ও বিকাশকে তিনটি পর্যায়ে ভাগ করেছেন যথা (১). ৩০০ থেকে ৬০০ খ্রিস্টাব্দ মধ্যবর্তী কালের সামন্ততন্ত্রের উদ্ভব (২). ৬০০ থেকে ৯০০ খ্রিস্টাব্দে মধ্যে সামন্ততন্ত্র ব্যাপকতা লাভ করেন এবং(৩). ৯০০ থেকে ১২০০ খ্রিস্টাব্দে সামন্ততন্ত্র অবক্ষয়ের দিকে এড়িয়ে যায় ৷ ডক্টর কৌশম্বি তার 'এন ইন্ট্রোডাকশন অফ টু বি স্টাডি অফ ইন্ডিয়ান হিস্ট্রি' গ্রন্থে বলেছেন পঞ্চম ষষ্ঠ শতাব্দীতে গুপ্ত সাম্রাজ্যের পতনকালে বিভিন্ন সামন্ত অঞ্চল গঠিত হয় । কৌশম্বি এই প্রক্রিয়াকে বলেছেন উপর থেকে আরোপিত সামন্ততন্ত্র সামন্ত প্রভুরা ক্রমশ প্রজাদের ওপর তার অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে থাকে ৷ কৌশম্বির ভাষায় এ হলো নিচ থেকে সামন্ততন্ত্র । কৌশম্বির দৃষ্টিতে ভারতের উর্ধ্ব ও নিম্ন স্তরে সামন্ততন্ত্র একই সঙ্গে গড়ে উঠেছে ।


প্রায় সমগ্রগুপ্ত আমল জুড়ে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে যে বৈশিষ্ট্যটি সময়কালের অর্থনৈতিক জীবনে রূপান্তর ঘটনার সঙ্গে ভারতের সমাজ ও অর্থনীতির ওপর সুদূর প্রসারী প্রভাব ফেলেছিলেন তা হল অগ্রাহার বা জমিদার ব্যবস্থা । চতুর্থ শতকের সূচনা থেকে ব্রাহ্মণ এবং ধর্মস্থানের উদ্দেশ্য জমিদার প্রথার প্রচলন ঘটে ৷ পুরোহিত শ্রেণি চাষীদের নিকট হতে খাজনা পেলে ও রাষ্ট্রকে রাজত্ব দেওয়ার ক্ষেত্রে বাধা বাধ্যকতা থাকত না ফল তো তারা একটি মধ্যসত্ত্ব ভোগী শ্রেণী হিসাবে দেখা দেয় ৷ এখন থেকেই স্বাধীন কৃষকরা ভূমিদাসে পরিণত হয় । তাদের কৃষকদের ইচ্ছামত উৎখাত করে বেগারশ্রম অতিরিক্ত করা দায়ের জন্য নতুন কৃষকদের সঙ্গে বন্দোবস্ত করতেন ৷


এই সময়ে উত্তর ভারতের সমৃদ্ধ নগরগুলির অবক্ষয় সুস্পষ্ট হয়ে ওঠে ৷ অধ্যাপক শর্মা বলেছেন প্রাকৃতিক বিপর্যয় বহির আক্রমণ রাজনৈতিক অস্থিরতা ইত্যাদির মধ্য দিয়ে নগর গুলির অবক্ষয় ঘটে ৷ নগরের অবক্ষয়ের পাশাপাশি বাণিজ্যের অদ্ধগতি সামন্ত ব্যবস্থার উদ্ভবের অন্যতম কারণ ছিল বলে ডঃ শর্মা মনে করেন ৷ বাণিজ্যিক অবক্ষয়ের হাত ধরে মুদ্রা ব্যবস্থা অবক্ষয় শুরু হয় ৷ নগদ মুদ্রার পরিবর্তে কর্মচারীরা জমির অধিকার লাভ করেন যা সামন্ত ব্যবস্থাকে আরো শক্তিশালী করে ৷


অগ্রাহার বা ব্রাহ্মণকে দান করা গ্রামে স্বয়ংসম্পূর্ণ অর্থনীতি গড়ে উঠেছিল ৷ স্থানীয় কৃষক কারিগর শিল্পীদের ওপর নির্ভর করে মুদ্রা সংকটের দরুন লেনদেন ব্যবস্থা সংকট দেখা দেয় ফলে উৎপাদন ও বন্টন আঞ্চলিক তরে সীমাবদ্ধ হয়ে পড়ে ৷ এইভাবে আঞ্চলিক স্বয়ংসম্পূর্ণ অর্থনীতির উদ্ভব বিনিময় এর মাধ্যমে অপ্রুলতা বাণিজ্যের অবনতি এবং ব্রাহ্মণ ও প্রাদেশিক রাজপুরুষদের ভূমি দানের ফলে শাসন ব্যবস্থায় যে বিকেন্দ্রীকরণ ঘটেছিল তা থেকে সামন্ততন্ত্রের সূচনা হয় ভারতে ।




ইউরোপে সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থার যে বিকাশ ঘটেছিল ১০০০ থেকে ১২০০ খ্রিস্টাব্দে ইউরোপে সামন্ততন্ত্রের সুবর্ণ যুগ ৷ সামন্ত ব্যবস্থার যে রূপ এবং প্রকৃতি গড়ে উঠেছিল ভারতের সামন্ততন্ত্রের সেই বৈশিষ্ট্য পরিপূর্ণভাবে গড়ে ওঠেনি বলে একদল ঐতিহাসিক মনে করেন ৷ অধ্যাপক দীনেশচন্দ্র সরকার বলেছেন গুপ্ত যুগে তাম্র শাসন থেকে জানা যায় যে পুরোহিত বা মন্দিরকে যে জমি দান করা হতো তা ছিল চাষের অযোগ্য জমি ৷ চৈনিক পরিব্রাজক ফা হিয়েন বলেছেন, রাজা ও অভিজাত সম্প্রদায় যখন মন্দির নির্মাণ করতেন তখন জমি চাষের জন্য প্রয়োজনীয় বলদ দান করতেন এ থেকে অনুমান করা যায় যে গুপ্ত যুগে দান করা হতো তা চাষযোগ্য ছিল ৷ সামন্ত ব্যবস্থার ফলে ভূমির অধিকার প্রাপ্ত ব্যক্তি রাজস্ব আদায়ের অধিকার পেতেন ঠিকই কিন্তু দানের পরেও রাজার কয়েকটি অধিকার ভূমির উপর থেকে যেত একেই প্রকৃত অর্থে সামন্ততন্ত্র বলা যায় না ।




উপরিয়ক্ত আলোচনার ভিত্তিতে ইউরোপের সামন্ততন্ত্রের সঙ্গে তুলনামূলক আলোচনায় ৬০০ থেকে ১২০০ খ্রিস্টাব্দে গড়ে ওঠা ব্যবস্থাকে অনেকেই সামন্ততন্ত্র বলে মেনে নেওয়ার পক্ষপাতি নয় । তবে গুপ্ত যুগে অগ্রাহর ব্যবস্থা ও ভূমি ব্যবস্থাকে কেন্দ্র করে একটি শক্তিশালী গোষ্ঠী গড়ে ওঠে মুদ্রা অর্থনীতির বিপর্যয় নগরের অবক্ষয় গ্রামীণ স্বয়ংসম্পূর্ণ অর্থনীতির বিকাশের মধ্য দিয়ে বাণিজ্যের অধঃপতি ৷ এই সমস্ত কিছুর মধ্যে দিয়ে আলোচ্য সময়কালে ভারতে সামন্ত ব্যবস্থার বহু বৈশিষ্ট্য গড়ে ওঠে ৷ তবে ইউরোপে সামন্ততন্ত্র গড়ে উঠেছিল তার সক্রিয় বৈশিষ্ট্যের সমাহারে ভারতের সামন্ততন্ত্র উদ্ভিত হয়েছিল আপন বৈশিষ্ট্যকে সঙ্গে নিয়ে ৷

About the author

Irisha Tania
"আমি সেই মেয়ে, যে শব্দে বাঁচে। কলম আমার অস্ত্র, আর কাগজ আমার স্বপ্নের আকাশ। প্রতিটি অনুভব, প্রতিটি চিন্তা আমি সাজিয়ে রাখি অক্ষরের গাঁথুনিতে। কখনো গল্পে, কখনো কবিতায়, আবার কখনো নিঃশব্দের ভেতরে। আমি লিখি, কারণ লেখার মাঝে আমি নিজেকে খুঁজে পাই। …

Post a Comment

🌟 Attention, Valued Community Members! 🌟