কৈবর্ত বিদ্রোহ সম্পর্কে একটি টীকা লেখ ৷
আদি মধ্যযুগের যে কয়েকটি বিদ্রোহ সংঘটিত হয়েছিল তাদের মধ্যে অন্যতম ছিল কৈবর্ত বিদ্রোহ ৷ পাল রাজা দ্বিতীয় মহিপালের রাজত্বকালের দিব্য বা দিব্যকে নেতৃত্বে বরেন্দ্র অঞ্চলে এক বিদ্রোহ সংঘটিত হয়েছিল যা কৈবর্ত বিদ্রোহ নামে পরিচিত ৷ সন্ধ্যাকর রচিত 'রামচরিত' গ্রন্থে এই বিদ্রোহের বিস্তার বিবরণ আছে ৷ এছাড়া বৈদ্য দেবের 'কামউলি পট' মদন পালের 'মানহানি দানপত্র' এবং ভোজ বর্মনের 'বেল বাদন পত্রে' এই ঘটনার উল্লেখ পাওয়া যায় ।
এই বিদ্রোহের কারণ সম্পর্কে একাধিক মত প্রচলিত আছে ৷ হরপ্রসাদ শাস্ত্রী লিখেছেন যে," দ্বিতীয় মহিপাল অত্যাচারী শাসক ছিলেন সেই কারণে কৈবর্ত্যরা বিদ্রোহ করে৷" কিন্তু তার এই মত ঐতিহাসিক মহলে সমাধা লাভ করেন নি ৷ কারণ রামচরীতে কোথাও বলা হয়নি যে মহিপাল অত্যাচারী ছিলেন ৷ আবার অক্ষয় কুমার মৈত্রী বলেছিলেন দ্বিতীয় মহিপালের সিংহাসন আরোহণের আইননুঞ্জ না হওয়ায় কারণে কৈবর্ত বিদ্রোহ হয়েছিল ৷ ডক্টর রমেশ চন্দ্র মজুমদার এর মতে কেন্দ্রীয় শক্তি দুর্বলতার কারণে পালদের শাসনাধীন এলাকায় এক সংকট সৃষ্টি হয়েছিল দ্বিতীয় মহিপালের এমন কিছু ব্যক্তিগত গুণাবলী ছিল না যার মাধ্যমে এই সংকট এড়ানো যেত ৷ ঐতিহাসিক রামশরণ শর্মার মতে কৈবর্ত বিদ্রোহ সংঘটিত হয়েছিল অর্থনৈতিক শোষণের বিরুদ্ধে এবং এটি ছিল মূলত কৃষক বিদ্রোহ ৷
সুতরাং বলা যেতে পারে যে উত্তরবঙ্গে বরেন্দ্রীয় তে এই কৈবর্ত বিদ্রোহ কৈবর্তরা (জেলেরা) করেন নি ৷ তবে এরূপ বিদ্রোহের এরূপ নাম কেন হল তা আমাদের জানা নেই ৷ বস্তুপক্ষে এই বিদ্রোহের সঙ্গে দিব্য ঘনিষ্ঠভাবে সম্পর্কিত ছিল হয়তো তিনি পাল সাম্রাজ্যের অন্যতম কেন্দ্র বরেনদ্রীতে কোন উচ্চ পদে ছিলেন ৷ কেন্দ্রীয় শক্তি দুর্বলতা এবং রাজ পরিবারের মধ্যে ঘাটতি বিরোধ সুযোগ নিয়ে দিব্য পরিবর্তিত সংঘটিত করেন এই বিদ্রোহে তিনি সফল হন পালদের পিতৃভূমি বরেন্দ্র তার দখলে আসে এবং সেখানে তার নেতৃত্ব কৈবর্তদের শাসন শুরু হয় ৷