সতনামি বিদ্রোহ সম্পর্কে আলোচনা কর অথবা,সৎনামী বিদ্রোহ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা কর বা,মুঘল যুগে সৎনামি বিদ্রোহ সংক্ষেপে আলোচনা কর।
ঔরঙ্গজেবের আমলে একটি উল্লেখযোগ্য বিদ্রোহ হলো সৎনামী বিদ্রোহ ৷ এই বিদ্রোহের সূচনা হয়েছিল সম্ভবত ১৬৭২ সালে ৷ সৎনামীরা ছিল বৈরাগীদের একটি গোষ্ঠী ৷ এই ধর্মীয় সম্প্রদায়ের প্রতিষ্ঠা হয় বীরভান নামক একজন ধর্ম প্রচারকের মাধ্যমে ৷ এই সৎনামী ছিল মূলত একেশ্বরবাদী ৷ তারা আচার অনুষ্ঠান ও কুসংস্কারের তীব্র বিরোধিতা করতেন , জাতিভেদ প্রথাও তারা মানতেন না ৷ তারা গরিবদের প্রতি সহানুভূতি ছিল এবং বড়লোকও অসৎ মানুষদের তারা ঘৃণা করতেন ৷ অন্যায় আচরণকারীর রাজা কেউ তারা এড়িয়ে চলত । অন্যায় ও অন্যায় গ্রস্ত মানুষের কাছ থেকেও তারা দান-ধ্যান গ্রহণ করত না ৷
আপনি চাইলে এগুলো পড়তে পারেন
পাঞ্জাবের অন্তর্গত নারনুল ও মেওয়াট অঞ্চলে সাতনামি সম্প্রদায়ের মানুষ মুঘল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে ১৬৬২ খ্রিস্টাব্দে বিদ্রোহী হয়ে ওঠেন ৷ সৎপথে জীবন চলার আদর্শ বিশ্বাসী ছিলেন বলে এরা সৎনামী নামে পরিচিত ৷ তারা ছিল একটি ভক্তিবাদী হিন্দু ধর্মের সম্প্রদায় ৷ বৈষ্ণবদের মতো মাথা মন্ডল করে তারা বৈরাগীর বেঁচে থাকত ৷
এই ধরনের মানুষের সাথে মুঘল সম্রাটের সংঘর্ষের কোনো কারণ ছিল না ৷ তাদের বিদ্রোহের সঙ্গে ধর্মীয় বিদ্বেষ ছিল না বললেই চলে ৷ বস্তুত এই বিদ্রোহ শুরু হয়েছিল শুধুমাত্র এক আপাত তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ৷ একদিন একজন সৎনামী যখন মাঠে কাজ করছিল তখন অন্য এক পেয়ারাদারের সঙ্গে তার কথা কাটাকাটি হয় ৷ হঠাৎ সেই পেয়াদা একটি লাঠি দিয়ে সেই সৎনামী মাথায় মারে, তখন একদল সৎনামী খবর পেয়ে রাগান্বত্ত হয়ে সেই পেয়ারাকে এমন মারে যে সে মারার মতো মাটিতে পড়ে থাকে ৷ সিকদার তখন একদল পেয়ারাদের পাঠায় এবং ঘটনায় কে কেন্দ্র করে আবহাওয়া উত্তপ্ত হয়ে ওঠে এবং বিদ্রোহ শুরু হয় ৷
সৎনামীরা ছিল মূলত একটি কৃষক নিরীহ মানুষ ৷ স্থানীয় মুঘল সুবাদার জায়গীরদার এবং জমিদারদের আর্থিক নিপীড়নের তাদের জীবন দুর্বিষহ হয়ে ওঠে ৷ এই অত্যাচারের প্রতিবাদে স্থানীয় ফৌজদারের সঙ্গে শতনামিদের যুদ্ধ বাদে এবং নার্নল ফৌজদার নিহত হয়ে পড়েন গরিব দাস সহ দু হাজার নেতৃত্বে এই সৎনামী শ্রেণি বিদ্রোহী হয়ে ওঠেন এবং খাজনা বন্ধ করে দেন সৎনামীরা নিজ হাতে গিয়ে থানা স্থাপন করে কর সংগ্রহ করতে থাকে ৷ মুঘল সম্রাট ঔরঙ্গজেবের সেনাদল পাঠালে সৎনামীরা তাদের নিশ্চিহ্ন করে দেয় অতঃপর সম্রাট ওরঙ্গজেব নিজ হাতে কঠোরভাবে এই বিদ্রোহ দমন করেন ৷ গরিব দাস হাত্তাসহ কয়েক হাজার সৎনামীদের মৃত্যুবরণের মধ্যে দিয়ে এই বিদ্রোহ দমিত হয় ।
সৎনামী বিদ্রোহের মধ্যে দিয়ে এটি ধর্মীয় সম্প্রদায়ের সংহতি ও চেতনা কৃষকের মনে একটি লড়াকু মনোভাব তৈরি করেছিলেন ৷ অধ্যাপক গৌতম ভদ্রের মতে সৎনামী বিদ্রোহ প্রমাণ করে যে মুঘল সিংহাসনের মহিমা সাধারণ প্রজাদের কাছে কমে গেছে । সমাজের নিচুতলার মানুষরা রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সঙ্ঘবদ্ধভাবে রুখে দাঁড়ায় এবং নিজস্ব রাজ্য গড়ে তোলার চেষ্টা করেন ৷